বিশ্বের সতর্ক পর্যবেক্ষণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:০৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৩, ২০১৮
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সতর্ক পর্যবেক্ষণে রাখছে বিশ্ব। নানা অনিশ্চয়তার মধ্যে আকস্মিকভাবে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় নির্বাচনের পরিস্থিতি তৈরি হওয়াকে যেমন ইতিবাচক দেখা হচ্ছে তেমনি নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কী কী পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, সেদিকে সতর্ক চোখ রাখছেন বিদেশি পর্যবেক্ষকরা।
যেহেতু দলীয় সরকারের অধীনে এ নির্বাচন হচ্ছে সেহেতু প্রত্যেক দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ, বিরোধী দলগুলোর ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আচরণ, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুকরণে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও ক্ষমতাসীন দলের ভূমিকার দিকে বিশেষ চোখ রাখছেন পর্যবেক্ষকরা।
ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের পর্যবেক্ষণ টিম পাঠাতে পারবে না বলে জানালেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পর্কে জানাতে দুজন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যখন এ সিদ্ধান্ত নেয় তখন নির্বাচনকে ঘিরে রাজনীতিতে এক ধরনের ধোঁয়াশা পরিস্থিতি ছিল। বিএনপিপ্রধান দুই জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট তখনো নির্বাচনে আসার সিদ্ধান্ত জানায়নি। উপরন্তু তারা সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল ক্ষমতাসীনদের।
এবার দ্বিতীয়বারের মতো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপির বর্জনের মধ্য দিয়ে ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর বিশ্বে সে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। যদিও আওয়ামী লীগ সরকার খুব কম সময়ে নিজেদের পক্ষে বিশ্বসমর্থন বাগাতে সমর্থ হয়। এবারও দশম জাতীয় নির্বাচনের মতোই পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে আশঙ্কা ছিল সবার মাঝে। ধারণা করা হচ্ছিল, সংসদ বহাল রেখে দলীয় সরকারের অধীনে দ্বিতীয়বারের মতো এ নির্বাচন ফের বয়কট করতে পারে বিএনপি বা বিএনপিপ্রধান দুই জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট। ক্ষমতাসীনরা সংবিধানসম্মতভাবে নির্বাচনের পক্ষে যেমন অনড় তেমনি বিরোধী পক্ষ অর্থাৎ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের দাবিতে অনড় থাকার প্রেক্ষাপটে দুই দফা সংলাপ ব্যর্থ হয়। এর মধ্যেই ২৩ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ নির্ধারণ করে ঘোষণা করা হয় নির্বাচনের তফসিল। আশঙ্কা করা হচ্ছিল, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বা বিএনপি থেকে আবার নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা আসতে পারে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে আকস্মিকভাবেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট নির্বাচনে আসার ঘোষণা দেয়। নির্বাচনে আসার ঘোষণা দেয় গতবার নির্বাচন বর্জন করা সিপিবি নেতৃত্বাধীন বামপন্থী দলগুলোও। এর মধ্য দিয়ে সবার অংশগ্রহণে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়। অধিকাংশ দলের দাবির পেরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন পুনঃতফসিল ঘোষণা করে ২৩ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ পুনঃনির্ধারণ করে।
এ পরিস্থিতিতে নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আগ্রহের কেন্দ্রে চলে আসছে বাংলাদেশ। বিদেশি কূটনীতিকরাও বাড়িয়ে দিয়েছে তাদের তৎপরতা। নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, অবাধ হয় সে ব্যাপারে নিজেদের মনোভাব ব্যক্ত করছেন বিভিন্ন ফোরামে।
ইতোমধ্যে প্রতিবেশী ভারত বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় বলে নিজেদের অভিমত জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই আকাক্সক্ষা ব্যক্তি করে জানিয়েছে- তারা এমন একটি অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়, যেখানে জনগণের ইচ্ছের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটবে। অন্যদিকে বাংলাদেশের জনগণের পছন্দকে স্বাগত জানাবে বলে জানিয়েছে চীন।
এদিকে নির্বাচনে পর্যবেক্ষক দল পাঠাতে না পারলেও সুষ্ঠু নির্বাচনে ইসিকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউ নেতৃবৃন্দ সম্প্রতি ইসির সঙ্গে এক বৈঠকে জানিয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর সূক্ষ্মভাবে নজর রাখা হচ্ছে।
প্রথম তফসিলে নির্বাচনের দিন ধার্য হয়েছিল ২৩ ডিসেম্বর। তখন বিভিন্ন মহল থেকে আপত্তি উঠেছিল, সারাবিশ্ব ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন উদযাপনে ব্যস্ত থাকবে। তখন বিদেশি পর্যবেক্ষরা বাংলাদেশে আসবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল। কিন্তু পুনঃতফসিলে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন ধার্য করায় অনেকে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছে, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসার ক্ষেত্রে এখন আর কোনো সমস্যা নেই। ইসিও জানিয়েছে যে কোনো দেশ থেকে পর্যবেক্ষকরা আসতে চাইলে সব ধরনের সহযোগিতামূলক প্রস্তুতিই তাদের রয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও।