ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আস্থা বাড়ালো ইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৫০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে সে প্রত্যাশা সবার। সবাই চায় স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে এবং সেই ভোটের মাধ্যমে একটি নতুন সরকার নির্বাচিত হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৮ নভেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে। যাচাই-বাছাই ০২ ডিসেম্বর, প্রত্যাহার ০৯ ডিসেম্বর। আর ভোট হবে ৩০ ডিসেম্বর।

নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার অংশ হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানটিকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ করতে হবে।
সংবিধান এই প্রতিষ্ঠানটিকে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য ব্যাপক ক্ষমতা দিয়েছে। সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, ‘নিবাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হইবে।’ এ অনুচ্ছেদ অনুসারে নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার পর রাষ্ট্রের সব নির্বাহী বিভাগ ইসির অধীনে চলে যাবে। তখন ইসি যা বলবে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাহী বিভাগগুলো তা শুনতে বাধ্য। যদি কোনো নির্বাহী প্রতিষ্ঠান এর ব্যত্যয় ঘটায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা সংবিধানই ইসিকে দিয়েছে।  
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ছাড়াও তাদের জোটের দলগুলো ইতোমধ্যে তাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২৩ দল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা সে সম্পর্কে ছিল ঘোর অনিশ্চয়তা। গত রোববার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিলে সে অনিশ্চয়তা কেটে যায়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২৩ দল নির্বাচনে অংশ নিলে ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন হবে না। কেউ বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিতও হতে পারবে না। নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২৩ দলের অভিযোগ, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা উদাহরণ হিসেবে খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনের কথা বলে আসছেন। যদিও সিলেটে বিএনপির প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তারপরও তারা আন্দোলনের অংশ হিসেবে এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য গত রোববার ঘোষণা দেন। এর আগে গত শনিবার ১০ নভেম্বর বিএনপি তাদের স্থায়ী কমিটির, জোটের দলগুলো এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন। পরে গত ১১ নভেম্বর নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেন।  এ সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত খুবই কঠিন। কিন্তু এরকম ভীষণ প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলনের অংশ হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ঐক্যফ্রন্ট সাত দফা দাবি থেকে পিছিয়ে আসছে না বলেও ফখরুল জানান। এসময় ফখরুল আরও বলেন, আমরা বর্তমান তফসিল বাতিল করে নির্বাচন এক মাস পিছিয়ে দিয়ে নতুন তফসিল ঘোষণার দাবি করছি। সেই ক্ষেত্রেও বর্তমান সংসদের মেয়াদকালেই নির্বাচন করা সম্ভব হবে। সংবিধান অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। এসময় ফখরুল হুঁশিয়ারি উচ্চরণ করে বলেন, যদি নির্বাচন কমিশন সব দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি না করে তা হলে তারা তাদের সিদ্ধান্তের পুনঃবিবেচনা করবে। এর পরে বিএনপি ও তাদের জোটগুলো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে। ইতোমধ্যে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপিসহ ২৩ দালীয় জোট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে। তাই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখে বর্তমানে ইসির মধ্যে একটি বিশ্বাস বেড়েছে যে তারা একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারবে।
এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে। যা কিছুটা হলেও দৃশ্যমান হয়েছে।  ইসি গতকাল ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনের তারিখ ৭ দিন পিছিয়েছে। নতুন তারিখ অনুয়ায়ী নির্বাচনের ভোট হবে ৩০ ডিসেম্বর। এছাড়া পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ইতোমধ্যে খুদে বার্তা দিয়ে সব পুলিশ স্টেশনের কর্মকর্তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, নতুনভাবে রাজনৈতিক মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার না করতে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী একটি মামলায় জেলে থাকলেও গতকাল তিনি মুক্তি পেয়েছেন।
যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, নির্বাচন কমিশন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য আরও অনেক উদ্যোগ নিতে পারে।
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রফিকুল ইসলাম বলেছেন, ভোটের মাঠ সমতল থাকবে। নির্বাচন কমিশন এ নিয়ে যত কিছুই করুক না কেন একটি পক্ষ বলবেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। তিনি বলেন, আইনের দ্বারা প্রত্যেকটি যোগ্য ভোটারকে ভোটার লিস্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যারা প্রার্থী হওয়ার যোগ্য তাদের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছি। তিনি বলেন, অনেকে অভিযোগ করেছে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়া হবে, এটা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না বলেও তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

 
Electronic Paper