ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৪৯ অপরাহ্ণ, মে ১৬, ২০১৮

আজ ১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩৭তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। টানা ৬ বছর নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালের এ দিনে মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন তিনি। তিনি ফিরে এসেছিলেন এমন দুর্বহ শোক আর স্মৃতি নিয়ে যা পৃথিবীর যে কোনো সন্তানের জন্য, দেশপ্রেমিক মানুষের জন্যই ছিল গভীর বেদনা ও আনন্দের মিশ্র অনুভবে পূর্ণ।

তিনি ফিরেছিলেন দুর্বৃত্তের গুলিতে ঝাঁজরা পিতার স্বপ্নের দায় এবং আপন ভূমির মানুষের প্রতি আকাশসম ভালোবাসা নিয়ে। তিনি ফিরেছিলেন অনিকেত সময়, দেশের গণতন্ত্র ও মুক্তির বিপন্ন চেতনাকে মুক্তপ্রাণ শক্তি দেবেন বলে। তাই সে প্রত্যাবর্তন ছিল ঐতিহাসিক।
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের আকাক্সক্ষার উল্টোপথে ধাবমান বাংলাদেশকে ফেরানোর কোনো পথ ছিল না বাঙালির হাতে। পাকিস্তানি সাম্প্রদায়িক বর্বর শক্তির পুনরোত্থানের বিপরীতে গণতন্ত্র, শোষণহীন, অসাম্প্রদায়িক সমাজের স্বপ্নের পুনর্জাগরণের জন্য একজন প্রকৃত কাণ্ডারীর জন্য অপেক্ষা করছিল মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাই সে কাণ্ডারী হয়ে ফিরেছিলেন তার জন্মভূমি বাংলাদেশে।
সে দিন বিকালে অন্তত ১৫ লাখ গণতন্ত্রকামী, মুক্তিপাগল জনতা ভালোবাসার ডালা হাতে শেখ হাসিনাকে বরণ করে নেওয়ার জন্য নেমে এসেছিল ঢাকার রাজপথে। বিকাল সাড়ে ৪টায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং বিমানে ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে তৎকালীন ঢাকা কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান তিনি। বিমানবন্দরে লাখো মানুষের ভালোবাসার জবাবে তিনি ‘আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগকর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।’
বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেওয়ার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। তখন দেশ ছিল কার্যত অবরুদ্ধ, গণতন্ত্র বিপন্ন। রাষ্ট্রক্ষমতায় পিতার ঘাতকের উত্তরসূরিরা।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সময় শেখ হাসিনা ও বোন শেখ রেহানা তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় ঘাতকের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তারা ফিরতে পারেননি দেশে। পরবর্তী সময়ে ৬ বছর লন্ডন ও দিল্লিতে চরম প্রতিকূল পরিবেশে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয় তাদের।
পরবর্তী সময়ে ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ওই বছরের ১৭ মে তিনি প্রত্যাবর্তন করেন স্বদেশে। তার হাত দিয়েই এ দেশে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ নতুন প্রাণ লাভ করে।
স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন গণতন্ত্র। মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে অব্যাহত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তিনি পরিণত হন মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতায়।
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সরকারের অব্যাহত সাফল্যসহ তার নিজের ও পরিবারের সব সদস্যের সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু, সুখ-সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেছেন। বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং জনকল্যাণমুখী কার্যক্রমে দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। ক্রমাগত প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ মাথাপিছু আয় বাড়ছে, কমছে দারিদ্র্যের হার। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ এগিয়ে চলেছে।
মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ একটি যুগান্তকারী ঘটনা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করতে শেখ হাসিনা ‘ভিশন ২০২১’ ও ‘ভিশন ২০৪১’ কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে শেখ হাসিনার এসব যুগান্তকারী কর্মসূচি বাংলার ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।
এ দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। আজকের এ আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্ব করার কথা রয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করবে।

 
Electronic Paper