ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কেসিসি নির্বাচনে বিএনপির প্রতিক্রিয়া

প্রত্যাখ্যান ও পদত্যাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৪২ অপরাহ্ণ, মে ১৬, ২০১৮

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনের ১০৫টি কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করে সেখানে পুনর্নির্বাচন এবং ৪৫টি কেন্দ্রে হওয়া গুরুতর অনিয়মের তদন্ত দাবি করেছেন বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। একইসঙ্গে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে নৌকাকে জয়ী করা হয়েছে অভিযোগ তুলে মঞ্জু বলেন এটি ‘ভোট ডাকাতির নির্বাচন’। আমরা এর ফলাফল প্রত্যাখ্যান করছি।

গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় খুলনা মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিকে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার পদত্যাগ দাবি করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। নির্বাচনের ফলাফলের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে গতকাল বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ দাবি করেন। তিনি বলেন, খুলনায় যে পরিমাণ ভোট দেখানো হয়েছে, প্রকৃত ভোট পড়েছে তার অর্ধেকের কম।
রিজভী বলেন, গতকালের ভোট নিরস্ত্র ভোটারদের ওপর অবৈধ সরকারের অবৈধ ক্ষমতা প্রদর্শন। আমি দলের পক্ষ থেকে গতকালের খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করছি এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করছি।
সন্ত্রাসীদের বাধা ও সন্ত্রাসী হামলার মুখে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের অধিকাংশকেই কেন্দ্র থেকে ভোট দিতে না পেরে ফিরে যেতে হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে নির্বাচন  কমিশনের সদিচ্ছা নেই, সামর্থ্য নেই আর যোগ্যতাও নেই।
খুলনায় প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপি প্রার্থী মঞ্জু দাবি করেন, ভোট ডাকাতির নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র আরও সংকটে পড়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত। কেসিসি নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ হয়ে গেছে, শেখ হাসিনার সরকার ও তার অনুগত নির্বাচন কমিশনের অধীনে দেশে কোনো অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না। কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, অবরুদ্ধ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে বিএনপির আন্দোলন সংগ্রাম আরও বেগবান হবে বলে মন্তব্য করেন মঞ্জু।      
খুলনা সিটি নির্বাচনকে একটি প্রহসন উল্লেখ করে মঞ্জু বলেন, এ ধরনের নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে নৈতিক পরাজয় হয়েছে সরকারের। নৈতিক পরাজয় হয়েছে নির্বাচন কমিশনের। আর বিজয় হয়েছে গণতন্ত্রের চলমান আন্দোলনের।
মঞ্জুকে নিয়েই পথ চলতে চান খালেক- বিভিন্ন গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের বরাত দিয়ে প্রকাশিত খবর সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সেটি প্রত্যাখ্যান করে মঞ্জু বলেন, তালুকদার আব্দুল খালেক ভোট ডাকাতির নির্বাচনের প্রধান ডাকাত। তাদের পাশে থেকে সহায়তা করার কোনো মানসিকতা নেই। এই শহরের মানুষ ভোটের দিন ভোট দিতে পারেনি। কেন্দ্রে গেলে বলা হয়েছে, ব্যালট শেষ হয়ে গেছে। কারও কারও আযুলে কালি লাগিয়ে বলা হয়েছে, বাড়ি চলে যান, আপনার ভোট হয়ে গেছে। কারও হাত থেকে ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মেরে বাক্সে ফেলা হয়েছে। যে শহরের মানুষ ভোট দিয়ে তাকে নির্বাচিত করেনি, তিনি কীভাবে ওই ভোটারদের সামনে যাবেন। তিনি কীভাবে তাদের সামনে মুখ দেখাবেন।
নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, বনদস্যু, জলদস্যু, মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ, খুনি, সন্ত্রাসীরা কেন্দ্র দখল করে ডাকাতির উৎসবের মাধ্যমে তাকে নির্বাচিত করেছে। এদের পাশে নিয়ে তিনি কীভাবে মাদকমুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত নগরী গড়বেন- জানতে চান তিনি।  
তিনি বলেন, সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় শক্তিকে নিয়োজিত করে ভোটের ফলাফল পক্ষে নেওয়া হয়েছে। বিজিবি ও র‌্যাব ছিল নিষ্ক্রিয়। তারা গাড়িতে বসে ঘুমিয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ছিলেন নির্বিকার। আর পুলিশ ছিল অত্যন্ত সক্রিয়। বিশেষ একটি ব্যাচের সকল পুলিশকে খুলনায় এনে একটি অভিজাত হোটেলে রাখা হয়। খুলনায় ডিউটি না থাকা সত্ত্বেও তারা ভোটের দিন সরকারি পোশাক পরে কেন্দ্রে কেন্দ্রে নৌকার পক্ষে ভূমিকা পালন করেছে। বিএনপির পোলিং এজেন্ট, কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের কেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দিতে তারা কাজ করেছে।
সিইসি, নির্বাচন কমিশনার, রিটার্নিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যকে দায়িত্বজ্ঞানহীন ও আজ্ঞাবহ বলে অভিহিত করেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। সারা দিনে নির্বাচনের নানা অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ করতে তিনি রিটার্নিং অফিসারকে অসংখ্যবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। কেন্দ্রে না গিয়েই তারা বলে দিলেন, দুই একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়াই নির্বাচন হয়েছে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ। মঞ্জুর অভিযোগ, যে সব ওয়ার্ডে ধানের শীষ প্রতীক বিজয়ী সেই ওয়ার্ডগুলোই ছিল আওয়ামী লীগের টার্গেট। যে কারণে সকালেই ১৬, ১৭, ১৯, ২২, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০ ও ৩১ নং ওয়ার্ডের কেন্দ্রগুলো দখল করে নেয় তারা। এজেন্টদের পিটিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। ভোটারদের হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদান ছিল অব্যাহত। তিনি বলেন, কাটাকাটির ভোটে মেয়রের ব্যালট শেষ হয়ে যায়। কিন্ত কাউন্সিলরদের ব্যালট শেষ করতে পারেনি। মুড়ি বইতে ভোটারের স্বাক্ষর নেই, নেই পোলিং অফিসারের স্বাক্ষর। ব্যালটের পেছনে নেই গোল সিল। তিনি আগামী সকল নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।   
পরাজয় মেনে নিতে না পেরে আবোল তাবোল বকছেন : সংবাদ সম্মেলনে খালেক
সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে ব্যাপক ভোট ডাকাতির অভিযোগ এনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর একশ কেন্দ্রে পুনরায় ভোটগ্রহণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিজয়ী প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা তালুকদার আব্দুল খালেক বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই তিনি এমন দাবি করেছেন। নির্বাচনে যদি তারা জয়লাভ করত তাহলে নির্বাচন ঠিক হতো আর এখন পরাজয় মেনে নিতে না পেরে তারা আবোল তাবোল বকতে শুরু করেছেন।
গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা প্রেস ক্লাবের লিয়াকত আলী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমি শুনেছি তিনটি কেন্দ্রে কিছু সমস্যা হয়েছে। তাই বলে একশ কেন্দ্রে আবার ভোটগ্রহণ করতে হবে এমন দাবি কেউ মেনে নেবে না। ২০১৩ সালের নির্বাচনে আমি তো পরাজিত হয়েছিলাম। কোনো কথা তো বলিনি।
নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ যেখানে রেখে গিয়েছিলেন ঠিক সেখান থেকেই আবার কাজ শুরু করবেন জানিয়েছেন খুলনা সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। একই সঙ্গে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে খুলনা মহানগরীকে দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত সিটি করপোরেশন উপহার দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
মাদকমুক্ত খুলনা মহানগরী উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করে খালেক বলেন, আমি খুলনা মহানগরীকে মাদকমুক্ত করব। মাদকের সঙ্গে আমার দলেরও কেউ যদি জড়িত থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সঙ্গে চরমপন্থীদের সখ্য ছিল। তারাই নির্বাচনে তাদের ব্যবহার করেছে। কিন্তু তারা যখন চরমপন্থীদের সামলাতে পারেনি তখন আইন করে তাদের ধরে ক্রসফায়ার দিয়েছে। আমরা সন্ত্রাসী ও চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করব।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট শেখ হারুনার রশিদ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এসএম কামাল হোসেন, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান এমপি, বিসিবির পরিচালক শেখ সোহেল প্রমুখ।
৬২ শতাংশের বেশি ভোট কেসিসি নির্বাচনে
খুলনা থেকে জামাল হোসেন জানান, খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে ৬২ দশমিক ১৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনের ভোট গণনা শুরু হয় বিকাল ৪টা থেকে। রাত ১০টার মধ্যেই বেসরকারিভাবে পূর্ণাঙ্গ ফলাফল ঘোষণা করেন খুলনা রিটার্নিং অফিসার। ২৮৯ কেন্দ্রের মধ্য থেকে ২৮৬ কেন্দ্রের ফলাফলে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক ১ লাখ ৭৪ হাজার ৮৫১ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জুর প্রাপ্ত ভোট ১ লাখ ৯ হাজার ২৫১। এ ছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়রপ্রার্থী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক পেয়েছেন ১৪ হাজার ৩৬৩ ভোট, জাতীয় পার্টির এস এম শফিকুর রহমান মুশফিক পেয়েছেন ১ হাজার ৭২ ভোট এবং সিপিবির মিজানুর রহমান বাবুর প্রাপ্ত ভোট ৫৩৪। এ তিন মেয়রপ্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। নির্বাচনে মোট ৩ লাখ ৬ হাজার ৬৩৬ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এর মধ্যে ৬ হাজার ৫৬৫টি ভোট বাতিল ঘোষণা করা হয়। কেসিসিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন। জালভোটের অভিযোগে ভোট বাতিল করা হয় তিনটি কেন্দ্রে।
এদিকে পরাজিত মেয়রপ্রার্থীরা কেসিসি নির্বাচনকে কারচুপির নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করেছেন। বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু এ ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে ১০৫টি কেন্দ্রে পুনঃনির্বাচন এবং ৪৫টি কেন্দ্রে অনিয়মের তদন্ত করে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। পরাজিত প্রার্থীরা নানা অভিযোগ ও অসন্তোষ প্রকাশ করলেও নির্বাচনের পর থেকে খুলনার ৩১ ওয়ার্ডেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। ফলাফল ঘোষণার পরপরই আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বিজয়ী মেয়রপ্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেককে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
কেসিসির কাউন্সিলর নির্বাচিত হলেন যারা
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নগরীর ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের ১৩ জন, বিএনপির ৮ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ১০ জন নির্বাচতি হয়েছেন। ১০টি সংরক্ষিত আসনে ৭ জন আওয়ামী লীগের এবং ৩ জন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র। এর মধ্যে অনেকেই পুনর্নির্বাচিতও হয়েছেন। তবে, বেশ কয়েকটি নতুন মুখ এসেছে এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। গত মঙ্গলবার ভোট গণনা শেষে সেবরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। সাধারণ ওয়ার্ডের নির্বাচিতরা হলেন ১নং ওয়ার্ডে শেখ আব্দুর রাজ্জাক (আ.লীগ), ২নং ওয়ার্ডে সাইফুল ইসলাম (বিএনপি), ৩নং ওয়ার্ডে আব্দুস সালাম (আ.লীগ),  ৪নং ওয়ার্ডে কবির হোসেন কবু মোল্লা (স্বতন্ত্র), ৫নং ওয়ার্ডে মোহাম্মদ আলী (স্বতন্ত্র), ৬নং ওয়ার্ডে সামসুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স (বিএনপি),  ৭নং ওয়ার্ডে সুলতান মাহমুদ পিন্টু (বিএনপি), ৮নং ওয়ার্ডে সাইদুর রহমান ডালিম (বিএনপি), ৯নং ওয়ার্ডে মাহফুজুর রহমান লিটন (স্বতন্ত্র), ১০নং ওয়ার্ডে তালাত হোসেন কাউট (স্বতন্ত্র), ১১নং ওয়ার্ডে মুন্সি আব্দুল ওয়াদুদ (আ.লীগ), ১২নং ওয়ার্ডে শেখ মনিরুজ্জামান (স্বতন্ত্র), ১৩নং ওয়ার্ডে খুরশিদ আহমেদ টোনা (আ.লীগ), ১৪নং ওয়ার্ডে মোশারফ হোসেন (আ.লীগ), ১৫নং ওয়ার্ডে আমিনুল ইসলাম মুন্না (আ.লীগ), ১৬নং ওয়ার্ডে আনিসুর রহমান বিশ্বাস (স্বতন্ত্র), ১৭নং ওয়ার্ডে হাফিজুর রহমান (স্বতন্ত্র), ১৮নং ওয়ার্ডে হাফিজুর রহমান মনি (বিএনপি), ১৯নং ওয়ার্ডে আশফাকুর রহমান কাকন (বিএনপি), ২০নং ওয়ার্ডে গাউসুল আজম (বিএনপি),  ২১নং ওয়ার্ডে সামসুদ্দিন মিয়া স্বপন (আ.লীগ), ২২নং ওয়ার্ডে আবুল কালাম আজাদ বিকু (আ.লীগ), ২৩নং ওয়ার্ডে ইমাম হাসান ময়না (স্বতন্ত্র), ২৪নং ওয়ার্ডে শমসের আলী মিন্টু (বিএনপি), ২৫নং ওয়ার্ডে আলী আকবর টিপু (আ.লীগ), ২৬নং ওয়ার্ডে গোলাম মওলা শানু (স্বতন্ত্র), ২৭নং ওয়ার্ডে জেড এ মাহমুদ ডন (আ.লীগ), ২৮নং ওয়ার্ডে আজমল আহমেদ তপন (আ.লীগ),  ২৯নং ওয়ার্ডে ফকির সাইফুল ইসলাম (আ.লীগ), ৩০নং ওয়ার্ডে এসএম মোজাফ্ফর রশীদি রেজা (আ.লীগ) এবং ৩১নং ওয়ার্ডে আরিফ হোসেন মিঠু (স্বতন্ত্র)।
সংরক্ষিত আসনের নির্বাচিত যারা
সংরক্ষিত ১০টি আসনে কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের ৭ জন ও স্বতন্ত্র ৩ জন। নির্বাচিতরা হলেন ১ নম্বর ওয়ার্ডে (১, ২ ও ৩) বর্তমান কাউন্সিলর এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরা আক্তার (বই), ২ নম্বর ওয়ার্ডে (৪, ৫ ও ৬) বর্তমান কাউন্সিলর এবং আওয়ামী লীগের সাহিদা বেগম (আনারস), ৩ নম্বর ওয়ার্ডে (৭, ৮ ও ৯) বর্তমান কাউন্সিলর এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী রহিমা আক্তার হেনা (জিপগাড়ি), ৪ নম্বর ওয়ার্ডে (১১, ১২ ও ১৩) বর্তমান কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের পারভীন আক্তার (চশমা), ৫ নম্বর ওয়ার্ডে (৯, ১৪ ও ১৫) আওয়ামী লীগের মেমরী সুফিয়া রহমান শুনু (আনারস), ৬ নম্বর ওয়ার্ডে (১৬, ১৭ ও ১৮) আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ আমেনা হালিম (বেবী), ৭ নম্বর ওয়ার্ডে (১৯, ২০, ২৫ ও ২৬) বর্তমান কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদা বেগম (মোবাইল), ৮ নম্বর ওয়ার্ডে (২১, ২২ ও ২৩) আওয়ামী লীগের কনিকা সাহা (চশমা)। এ ছাড়া ৯ নম্বর ওয়ার্ডে (২৪, ২৭ ও ২৮) স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর রুমা খাতুন (চশমা), ১০ নম্বর ওয়ার্ডে (২৯, ৩০ ও ৩১) আওয়ামী লীগের প্রার্থী লুৎফুন্নেসা লুৎফা (চশমা) এগিয়ে রয়েছেন।
মেয়রপ্রার্থী মুজ্জাম্মিল হকের সংবাদ সম্মেলন
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক ভোটের ফলাফল ঘোষণার দিন (মঙ্গলবার) রাতেই দলীয় কার্যালয়ে তাৎক্ষণিক প্রেস ব্রিফিং করে ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন ও দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন কেসিসি নির্বাচনে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র দখল, ভোট ডাকাতি, ভোটারদের হয়রানি, ভোট দিতে না দেওয়া, এজেন্টদের বুথ থেকে বের করে দেওয়া, এজেন্টদের মারধর, পুলিশ কর্তৃক জাল প্রদানে সহযোগিতার প্রমাণ রয়েছে। নিরাপত্তার ভয়ে অনেক ভোটার ভোট কেন্দ্রেই আসেনি দাবি করে তিনি অনিয়মের নানা চিত্র তুলে ধরেন। বলেন, জাল ভোটের কারণে ৩০নং ওয়ার্ডের রূপসা প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ইউসেফ স্কুল কেন্দ্রে ভোট প্রদান বন্ধ রাখা হয়। ১২নং ওয়ার্ডে স্যাটেলাইট স্কুল কেন্দ্র জোর করে দখল করে নেওয়া হয়। ১২ ও ৩০নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন কেন্দ্রে নির্বাচনী এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ১৩নং ওয়ার্ডে সকাল থেকেই নৌকার ভোটার ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ৩১নং ওয়ার্ড কার্যালয়, লবণচরা প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিপইয়ার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সংঘর্ষ হয়েছে। মতিয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইব্রাহিমীয়া মাদ্রাসা সেন্টার কেন্দ্র থেকে লোকজন বের করে দেওয়া হয়। জাল ভোটের কারণে ইকবাল নগর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়। এ ছাড়া নিরালা টিন সেড সেন্টার, ২২নং সব সেন্টার, ২নং ওয়ার্ডের নগরঘাট কৃষ্ণমোহন স্কুল, রেলিগেট ও আরআরএফ কেন্দ্রে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। ২৮নং ওয়ার্ডের ৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪টি দখল করে ব্যাপক জাল ভোট প্রদান, ১৪নং ওয়ার্ডের খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে আতঙ্ক ছড়ানো এবং ২৯নং ওয়ার্ডের গগণ বাবু রোডের সবুরুন্নেসা মহিলা মহাবিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মারতে বাধ্য করা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের ভূমিকা ছিল নীরব।
মিজানুর রহমান বাবুর প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী মিজানুর রহমান বাবু এক বিবৃতিতে বলেছেন, এজেন্টদের বের করে দিয়ে কেন্দ্র দখল করে ক্ষমতাসীন দল নৌকা প্রতীকে সিল মেরেছে। নিরপেক্ষ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তিনি কেসিসি নির্বাচনকে প্রহসন বলে উল্লেখ করেন। বাগমারা, রূপসা, বানিয়াখামার, খালিশপুর ও বয়রা এলাকায় সিপিবির এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে দাবি করেন তিনি। বিবৃতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিও জানান জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া এ প্রার্থী।

 
Electronic Paper