ডলারের চাপে অস্থির তেল-চিনির পাইকারি বাজার
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৫:০১ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১২, ২০২২
কাঁচাবাজারে প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে গেছে। নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজারগুলোতে। চাপে থাকা স্বল্প আয়ের কর্মজীবী মানুষের ওপর এই মূল্যবৃদ্ধি বাড়তি দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে। সপ্তাহের শুরুতেই ভোজ্যতেল, চিনি ও গমের দাম বেড়েছে হু হু করে। দুই দিনের ব্যবধানে প্রতি মণ ভোজ্যতেলে ৩০০ টাকা, চিনিতে দুইশ’ টাকা এবং গমে আরও দেড়শ’ টাকা বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের দামে ঊর্ধ্বমুখিতার কারণে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পণ্যের দাম কমার সম্ভাবনা নেই। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেট ওঠানামার কারণে গত কয়েক মাস ধরে ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা ছিল। বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েল রফতানি বন্ধ করে দিলে বিশ্ববাজারে অস্থিরতা শুরু হয়। বাংলাদেশে পাম অয়েলের বাজার সে সময় প্রতি মণ ৬ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়।
পরবর্তী সময়ে ইন্দোনেশিয়া রফতানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে স্বাভাবিক হতে থাকে ভোজ্যতেলের বাজার। বিশেষত গত সপ্তাহে পাম অয়েলের দাম ৪৭০০ টাকায় নেমে আসে। কিন্তু গত দুদিনে আবার বেড়েছে পাম অয়েলের দাম। খাতুনগঞ্জে দুদিন আগে সিটি গ্রুপের পাম অয়েল ৪৭০০ টাকায় বিক্রি হলেও গত বুধবার রাতে ৫১০০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। অন্যদিকে এসআলম গ্রুপের পাম অয়েল দু’দিন আগে ৪৬৫০ টাকা থেকে বেড়ে গত বুধবার ৪৯৫০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
এদিকে ভোজ্যতেলের পাশাপাশি চিনির দামও বেড়েছে। গত কয়েকমাস ধরে খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ চিনি ২৬শ’ থেকে ২৮শ’ টাকায় বেচাকেনা হয়ে আসছিল। কিন্তু হঠাৎ করে গত দুদিনে চিনির দাম ছাড়িয়েছে মণপ্রতি তিন হাজার টাকা।
খাতুনগঞ্জের ডিও ব্যবসায়ী আবু তাহের জানান, একদিন আগেও প্রতি মণ পাম অয়েল ছিল ৪৭শ টাকা। আজকে ৫ হাজার ১০০ টাকা। চিনির দামও বেড়েছে। ২৮৫০ টাকার চিনি আজকে ৩ হাজার ৫০ টাকা। হঠাৎ করে হু হু করে দাম বাড়ছে। বাজার গরম, তাই আজকে রাত ১০টা পর্যন্ত ডিও কেনাবেচা হয়েছে। গত বুধবার সন্ধ্যায় এস আলম গ্রুপের চিনি প্রতি মণ ৩ হাজার টাকা, সিটি গ্রুপের চিনি ৩০৫০ টাকা এবং মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ব্র্যান্ডের চিনি বিক্রি হয়েছে ৩০৩০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের চিনির ব্যবসায়ী ইমাম শরীফ ব্রাদার্সের পরিচালক ছৈয়দুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বলেন, ৯০ টাকার ডলার এখন ১২০ টাকা। চিনির (কাঁচামাল) আসে বিদেশ থেকে আমদানি হয়ে। যে কারণে ডলারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শুধু চিনি নয়, সব পণ্যের দাম বাড়ছে। তাছাড়া মিলগুলোতে বর্তমানে চিনির মজুতও কম। তাই গত দুদিন ধরে চিনির দাম বাড়ছে।
এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গম নিয়ে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও অস্থিরতা শুরু হয়। গত এপ্রিল থেকে গম নিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মাতামাতি শুরু হয়। তবে যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও রাশিয়া-ইউক্রেন চুক্তির মাধ্যমে ইউক্রেন খাদ্যশস্য ও ভোজ্যতেল রফতানি শুরু করলে আন্তর্জাতিক বাজারে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়। কমতে থাকে গমের বুকিং রেটও। কিন্তু খাতুনগঞ্জের বাজারে তার উল্টোচিত্র দেখা যাচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেট কমলেও ডলারের দাম বেশি হওয়ার কারণে গমের দাম কমছে না। গত দুদিনে গমের দাম বেড়েছে প্রতি মণে দেড়শ টাকা।