ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কৃষ্ণচূড়া যখন হন্তারক!

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৩৮ অপরাহ্ণ, মে ১৫, ২০১৮

‘এই সেই কৃষ্ণচূড়া, যার তলে দাঁড়িয়ে, চোখে চোখ হাতে হাত কথা যেত হারিয়ে...।’ কৃষ্ণচূড়া নিয়ে আমাদের মধ্যে এমন কত গান, কত বিরহ, কত অভিব্যক্তি! আকাশে লালগালিচা বিছিয়ে এ বৃক্ষ আমাদের মন রাঙিয়ে চলে নিরন্তর। কিন্তু এই কৃষ্ণচূড়ারও থাকতে পারে একটা কৃষ্ণ অধ্যায়। অপেক্ষাকৃত নাজুক বৃক্ষটিও হতে পারে ঘাতক।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) পরিচালক ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। কৃষ্ণচূড়া ভালোবাসতেন। আরও কয়েকজন কৃষ্ণচূড়াপ্রেমীকে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন একটি সংগঠন। উদ্যোগ নিয়েছিলেন কৃষ্ণচূড়া উৎসবের। সেই কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচেই চাপা পরে মৃত্যু হলো তার।
গত শুক্রবারের কথা। ছুটির দিন সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে ছেলেকে কোচিং সেন্টারে রেখে আসেন মোস্তাফিজুর রহমান (৫৪)। বাসায় স্ত্রীকে বলেছিলেন, কাঁচা আম কেটে লবণ-মরিচ দিয়ে মাখিয়ে রাখতে। কৃষ্ণচূড়া উৎসব থেকে ফিরে তিনি খাবেন সেই মাখানো কাঁচা আম। কিন্তু তা আর খেতে পারেননি তিনি। উৎসব চলার সময় একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ তার ওপর উপড়ে পড়ে। সেখানেই তার মৃত্যু ঘটে।
ধানমণ্ডির ৩/এ নম্বর সড়কের ১৪ নম্বর বাসায় পরিবার নিয়ে থাকতেন মোস্তাফিজুর রহমান। হাঁটাহাঁটির অভ্যাস ছিল। সপ্তাহান্তের ছুটির দিন সকালে একত্র হতেন কৃষ্ণচূড়াভক্তদের সঙ্গে। স্বপ্ন দেখতেন, একদিন কৃষ্ণচূড়াকে ছড়িয়ে দেবেন দেশব্যাপী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে কৃষ্ণচূড়া উৎসব উপলক্ষে ধানমণ্ডির বিভিন্ন কৃষ্ণচূড়া গাছে ব্যানার ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তেমন একটি গাছে লাগানো ব্যানারের ছবি মোবাইল ফোনে তুলছিলেন তিনি। অকস্মাৎ শিকড় উপড়ে সেই গাছটি হেলে পড়ে। মুহূর্তে গাছ এসে পড়ে তার মাথার ওপর। চারদিকে রক্ত ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুত সবাই গাছতলা থেকে বের করে আনেন তার প্রাণহীন দেহ।
শুধু কি মোস্তাফিজ? কৃষ্ণচূড়ার প্রসঙ্গ এলেই মনে পড়ে চলচ্চিত্রকার খালিদ মাহমুদ মিঠুর রক্তাক্ত দেহ। ২০১৬ সালের ৭ মার্চে প্রখ্যাত চিত্রাঙ্কনশিল্পী ও চলচ্চিত্রকার খালিদ মাহমুদ মিঠু ধানমণ্ডির চার নম্বর সড়কে ফুটপাতের একটি বড় গাছ হঠাৎ তার ওপর উপড়ে পড়ায় মারা গিয়েছিলেন। ওই গাছটিও ছিল কৃষ্ণচূড়া! সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গিয়েছিল, ধনুকের মতো হেলে পড়া একটি গাছ সবেগে আছড়ে পড়ে রাস্তায়। মিঠু রিকশা করে যাচ্ছিলেন। মৃত্যু বোধহয় মানুষকে এভাবেই ডাকে! আছড়ে পড়ার আগমুহূর্তে নিজেকে বলি দেওয়ার মতো করে যেন ধেয়ে আসে রিকশা। রিকশার যাত্রী শেষ মুহূর্তে মাথা নিচু করেন বাঁচার জন্য। কিন্তু বিদ্যুৎগতির পতন বাঁচতে দেয় না মিঠুকে।  
কৃষ্ণচূড়ারই বা দোষ কী! কংক্রিটের ফুটপাতে সে আর কতটুকুই বা শিকড় ছড়াতে পারে। শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য পর্যাপ্ত মাটি পায় না সে। উপরন্তু স্যুয়ারেজ বা টেলিফোন লাইনের জন্য মাটি কাটলে কাটা পড়ে তার শিকড়। এ অভিযোগ শুধু কৃষ্ণচূড়ার নয়, নগরীর প্রায় সব গাছের।  
ঝড়বৃষ্টিতে মাঝেমধ্যেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গাছ উপড়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর অন্যতম হলো, কংক্রিটের নগরে বৃক্ষগুলোর শিকড় মাটির গভীরে যাওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে সড়ক বিভাজনে এমন গাছ লাগানো হয়, যা সামান্য জায়গায় বেড়ে ওঠার উপযোগী নয়। তা ছাড়া কৃষ্ণচূড়া গাছের বৈশিষ্ট্যই এমন, এর শিকড় মাটির খুব গভীরে না গিয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তাই সামান্য বাতাস কিংবা ঝড়বৃষ্টিতে এই গাছের উপড়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। সে ক্ষেত্রে কৃষ্ণচূড়া লাগানোর আগেই প্রয়োজন যথাযথ পরিকল্পনা। 

 
Electronic Paper