ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দারিদ্র্য বেশি কুড়িগ্রামে কম নারায়ণগঞ্জে

আলতাফ হোসেন
🕐 ১২:১১ অপরাহ্ণ, মে ২৩, ২০২২

দারিদ্র্য বেশি কুড়িগ্রামে কম নারায়ণগঞ্জে

দেশের সবচেয়ে বেশি গরিব মানুষের জেলা কুড়িগ্রাম। এ জেলার ৭০ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষই দরিদ্র। অন্যদিকে সবচেয়ে কম গরিব মানুষের জেলা নারায়ণগঞ্জ। এ জেলার অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার ওপরে রয়েছে। এ জেলায় গড় দারিদ্র্যের হার ২ দশমিক ৬ শতাংশ। এছাড়া মেট্রোপলিটন এলাকা হিসেবে সবচেয়ে কম দরিদ্র মানুষের বসবাস ঢাকার গুলশানে, মাত্র ০ দশমিক ৪ শতাংশ। আর সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের বসবাস কুড়িগ্রামের চর রাজিব উপজেলায়, ৭৯ দশমিক ৮ শতাংশ।

 

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল রোববার কার্নিভাল হলে ‘প্রভার্টি অ্যান্ড আন্ডার নিউট্রিশন ম্যাপস বেজড অন স্মল এরিয়া এস্টিমেশন টেকনিক’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। বিবিএস ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি যৌথভাবে সেমিনারটির আয়োজন করে। ২০১৬ সালের দারিদ্র্যের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে উপজেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকার দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বের করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এসব তথ্য জানিয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০১৬-এর তথ্যানুযায়ী, দেশের ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগে দারিদ্র্যের হার ২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এই বিভাগের ভোলার দৌলতখান অন্যদিকে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় দারিদ্র্যের হার বেশি ৫২ দশমিক ৮ শতাংশ।

চট্টগ্রাম বিভাগে গড় দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এই বিভাগে সবচেয়ে কম দারিদ্র্যের হার চট্টগ্রাম সদরে, মাত্র ১ দশমিক ৫ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যের হার বান্দরবানের থানচি উপজেলায়, ৭৭ দশমিক ৮ শতাংশ। ঢাকা বিভাগে গড় দারিদ্র্যের হার ১৬ শতাংশ। সবচেয়ে কম দারিদ্র্যের হার গুলশানে, মাত্র ০ দশমিক ৪ শতাংশ। মিঠামইন উপজেলায় সবচেয়ে বেশি, ৬১ দশমিক ২ শতাংশ।

খুলনা বিভাগে গড় দারিদ্র্যের হার ২৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ, এই বিভাগের চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা দারিদ্র্যের হার সবেচেয়ে কম, ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। সবেচেয়ে বেশি মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলায়, ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ। ময়মনসিংহ বিভাগে গড় দারিদ্র্যের হার ৩২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ময়মনসিংহের ভালুকায় দারিদ্র্যের হার সবেচেয়ে কম, ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এই বিভাগে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের বসবাস জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায়, ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ।

রাজশাহী বিভাগে গড় দারিদ্র্যের হার ২৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এই বিভাগে কম দারিদ্র্যের হার রাজশাহীর বোয়ালিয়া উপজেলায়, মাত্র ৯ শতাংশ। সবেচেয়ে বেশি নওগাঁর পোরশায়, ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ। রংপুর বিভাগে গড় দারিদ্র্যের হার ৪৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। এই ব্ভিাগে সবচেয়ে বেশি দরিদ্রপ্রবণ এলাকা কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর, ৭৯ দশমিক ৮ শতাংশ। সবচেয়ে কম দারিদ্র্যের হার পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায়, ৯ দশমিক ৩ শতাংশ। এছাড়া সিলেটে গড় দারিদ্র্যের হার ১৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। এই বিভাগে কম দরিদ্রপ্রবণ উপজেলা সিলেটের বিশ্বনাথ, ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। বেশি দারিদ্র্যের হার সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা, ৬০ দশমিক ৯ শতাংশ। দেশে গড় দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ।

বিবিএস-এর তথ্যানুযায়ী, সবচেয়ে কম দারিদ্র্যপূর্ণ ১০ জেলার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ ২ দশমিক ৬ শতাংশ, মুন্সীগঞ্জ ৩ দশমিক ১ শতাংশ, মাদারীপুর ৩ দশমিক ৭ শতাংশ, গাজীপুর ৬ দশমিক ৯ শতাংশ, ফরিদপুর ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, ফেনী ৮ দশমিক ১ শতাংশ, ঢাকা ১০ শতাংশ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১০ দশমিক ৩ শতাংশ, নরসিংদী ১০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মৌলভীবাজার ১১ শতাংশ। এছাড়া সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যপূর্ণ ১০ জেলার মধ্যে কুড়িগ্রাম ৭০ দশমিক ৮ শতাংশ, দিনাজপুর ৬৪ দশমিক ৩ শতাংশ, বান্দরবান ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ, মাগুরা ৫৬ দশমিক ৭ শতাংশ, কিশোরগঞ্জ ৫৩ দশমিক ৫ শতাংশ, খাগড়াছড়ি ৫২ দশমিক ৭ শতাংশ, জামালপুর ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ, গাইবান্ধা ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশ, রংপুর ৪৩ দশমিক ৮ শতাংশ এবং লালমনিরহাট ৪২ শতাংশ।

সেমিনারে জানানো হয় অপুষ্টি কমানোর ক্ষেত্রে যেসব দেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে, বাংলাদেশ সেগুলোর অন্যতম। শিশুদের অপুষ্টি কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য ইতিহাসে দ্রুততম। বাংলাদেশের অপুষ্টি মানচিত্র ২০১৯ এর তথ্যানুযায়ী, খাদ্য উৎপাদন উন্নতকরণ ও বণ্টন ব্যবস্থা সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশ শিশুদের খর্বাকৃতির হার ১৪ শতাংশ কমাতে সক্ষম হয়েছে। খর্বাকৃতির হার ২০১৩ সালে ছিল ৪২ শতাংশ, ২০১৯ সালে তা কমে ২৮ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে সর্বোচ্চ খর্বকায় শিশুর হার বেশি সুনামগঞ্জে, ৪৪ শতাংশ। অন্যদিকে সবচেয়ে কম খর্বকায় শিশুর জন্ম মেহেরপুর ও কুষ্টিয়ায়, ১৫ শতাংশ।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, যেসব জেলায় দারিদ্র্যের হার কম সেখানে সাহায্য পাবে না তা হয় না। দারিদ্র্যের হার অনুযায়ী জেলাভিত্তিক সাহায্য দেওয়া উচিত। কারণ দারিদ্র্যের ব্যথা সব জায়গায় সমান। তাই দারিদ্র্যের হারের অনুপাতে সাহায্য বণ্টন করার আহবন জানান তিনি।

বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, উপজেলা ও মেট্রোপলিটন ভিত্তিক দেশে গড় দারিদ্র্যের হার বের করা হয়েছে। নানা কারণে এটা দেরিতে করতে হয়েছে। তবে সামনে আরও দ্রুত সময়ে উপজেলাভিত্তিক দেশে গড় দারিদ্র্যের হার বের করবো। গড় দারিদ্র্যের হার বের করায় অনেক সংসদ সদস্য খুশি নন। দারিদ্র্যের হার বেশি দেখানোর জন্যও অনেক সংসদ সদস্য আমার কাছে আসেন, যাতে করে বেশি সুবিধা ভোগ করা যায়।

 
Electronic Paper