ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

অন্যরকম ‘কটকডি’ মাছ

আরিফ সাওন
🕐 ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১১, ২০২০

মাথার উপরে দুটি চোখ। মুখটা ঠিক মাথার তলে। দাঁতগুলো সুঁচালো। আঁশগুলো কাটাকাটা। এ মাছের আঁশ নয়; ছাল ফেলে খেতে হয়। আঁশের মতো দেখতে হলেও বিক্রেতারা বলেন, এগুলো আঁশ নয়। আঁশের মতো ওঠানো যায় না। দেখতে অনেকটা বেলে মাছের মতো। তবে পার্থক্যটা ঠিক বেলে মাছের বিপরীত। বেলে মাছের শরীর খুবই নরম। আর ‘কটকডি’ মাছের শরীর এতই শক্ত আর আঁশের মতো দেখতে অংশগুলো এতই কাটাকাটা যে, ধরতে গেলেই হাতে ফোঁটার ভয় থাকে। আর হাতে ফুটলে তো বেজায় বিপত্তি।

কেননা, এ মাছে আঁশ আর কাটার খোঁচা বেশ বিষাক্ত। পেটের রঙ ডোরাকাটা। গায়েও কালো হলদেটে ডোরাকাটা। বিভিন্ন সময়ে রাজধানীর মেরাদিয়া হাটে এই মাছ বিক্রি করতে দেখা যায়। বিক্রেতা জামাল হোসেন জানান, তিনি প্রায়ই বুধবারে এ মাছ বিক্রি করেন। তিনি একাই এ মাছ আনেন। কুমিল্লার দাউদকান্দি গৌরিপুর বিলে পাওয়া যায়। সেখান থেকে আনেন। তার বক্তব্য এ মাছের নাম ‘কটকডি’ মাছ। বাজারে আনার পর অনেকেই মাছটি দেখে অবাক হন। কৌতূহল থেকে মাছটির নাম জানতে চান। খাওয়া যায় কি-না? এমন সব নানা প্রশ্ন করেন বিক্রেতাকে। কেউ কেউ ছবি তুলে নেন, ভিডিও করেন।

ব্যবসায়ী জামাল হোসেনের বাড়ি নরসিংদী। তিনি ঢাকাতেই থাকেন। জামাল হোসেন বলেন, এ মাছ জালে ধরা পড়ে। দেখতে প্রায় বেলে মাছের মতো। গায়ে আঁশের মতো দেখতে হলেও ওগুলো শক্ত কাটাকাটা। আঁশের মতো উঠিয়ে ফেলা যায় না। উপরের অংশটা ছুলে ফেলে রান্না করতে হয়। কাটা বেশ বিষাক্ত। সতর্ক থাকতে হয় যাতে কোথাও না ফুটে যায়। ১০-১২ কেজি করে আনেন। দুইশ’-আড়াইশ’ টাকা করে বিক্রি করেন। বিক্রিও হয়ে যায়। তবে সবসময় এ মাছ পাওয়া যায় না। কেউ কেউ সখ করেই কেনেন। তবে স্বাদ কেমন তা কারও কাছ থেকে জানা যায়নি।

সালের ১৭ আগস্ট মাগুরার এক জেলে জালে মাছটি পান। মধুমতির ঝামা এলাকা থেকে মাছটি  ধরা পড়ে। ২০১৫ সালে দেশের বেশ কয়েক জায়গায় মাছটি ধরা পড়ার খবর পাওয়া যায়। এ বছরের ১১ এপ্রিল নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার তুলাতলী গ্রামের এমরান সোহেলের পুকুরে তিনটি মাছ পাওয়া যায়। ২০ জুন চট্টগ্রামের রাউজানের পৌর এলাকার ৫-নং ওয়ার্ডে বেরুলিয়া খালে সাইফুল ইসলামের জালে মাছটি ধরা পড়ে। ১৩ আগস্ট পিরোজপুরের কাউখালি চিরাপাড়া নদীতে তারেক নামের এক জেলের জালে ধরা পরে। ১৪ আগস্ট ঝিনাইদহের চিত্রা নদীতে পাওয়া যায়। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার চাপালী গ্রামের আকুল হোসেনের জালে মাছটি ধরা পড়ে।

২০১৭ সালে ১০ নভেম্বর পিরোজপুরের বলেশ্বর নদীতে জেলের জালে ধরা পড়ে এই মাছ। ২০১৮ সালের ১০ মার্চ রাজশাহীর গোদাগাড়ীর মোল্লাপাড়া গ্রামের আলমের পুকুরে এ মাছ পাওয়া যায়। ২৩ নভেম্বর রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আটঘরি গ্রামের রনি সরকারের পুকুরে পাওয়া যায়। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বিশলা গ্রামের স্বাধীন চন্দ্রের বাড়ির উঠানে বৃষ্টির সময় মাছটি পাওয়া যায়। ২৬ নভেম্বর পাবনার রতনাই নদীতে পাওয়া যায়। পাবনার চাটমোহরের মুলগ্রাম ইউনিয়নের জেলে সেকেন্দার আলীর জালে ধরা পড়ে। তখন চাটমোহর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান এটিকে ‘সাকার মাউথ ক্যাট ফিশ’ বলে শনাক্ত করেছিলেন।

এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া ও নারায়ণগঞ্জেও মাছটি পাওয়া গেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে গত ছয় বছরে যে মাছগুলো পাওয়া গেছে, তা ওজনে ২০০ গ্রাম থেকে অন্তত ৫-৬ কেজি। বাগেরহাটের উলফাতুন্নেসা বলেন, আমাদের পুকুরে একটি মাছ ছিল। আমার আব্বু একজনের কাছ থেকে কিনে ছেড়েছিলেন। আমরা এটাকে সুইপার ফিশ বলতাম। দেখতাম শেওলা খেত। শুনেছি এরা ময়লা খায়। সে কারণে  নাকি নাম ‘সুইপার ফিশ’।

ঢাকা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা  (ডিএফও) মুহাম্মদ মামুনুর রশীদ বলেন, এগুলো মূলত ‘সাকার ফিশ’, ‘অ্যাকুরিয়াম ফিশ’। অ্যাকুয়ারিয়ামে রাখা হয়। বর্তমানে জলাশয়ে চলে এসেছে। বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে।

 

 
Electronic Paper