দখল-দূষণে বেহাল ধলাই
নেত্রকোনা প্রতিনিধি
🕐 ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৯
পৌর শহরের বুকচিরে বয়ে চলা ধলাই নদীর পানি দুই যুগ আগেই দূষিত হয়ে গেছে। প্রায় দুই কিলোমিটার স্থানে দুই পাড়ে ময়লা আর কচুরিপানা পচে নষ্ট হচ্ছে আশপাশের পরিবেশও। দুই যুগ ধরে এমন অবস্থার সৃষ্টি হলেও নদীর পরিবেশ উন্নয়নে পৌর কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কিন্তু পানি সংকটের কারণে বাধ্য হয়েই নদীর ময়লাযুক্ত দূষিত পানি ব্যবহার করছেন দুই পাড়ের হাজারো পরিবার। আর দূষিত পানি ব্যবহারে চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
জেলা শহরের উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ‘ধলাই’ নদী। কংস থেকে এর উৎপত্তি। স্থানীয় ভাষায় ‘ধলা’ শব্দটি ‘স্বচ্ছ’ বা ‘সাদা’ শব্দের প্রতিশব্দ। প্রচলিত আছে, ধলাইয়ের পানি এতই স্বচ্ছ ও টলটলে ছিল, যা রোদের আলোতে ‘সাদা’ মনে হতো। আর এ কারণেই নদীটির নাম হয়েছিল ‘ধলাই’। এককালের বেগবতী ধলাইয়ের কোনো কোনো অংশে এখন পা-ও ভেজে না।
এ বিষয়ে পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম খান বলেন, নদীটি মরে গেছে। এটি রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় এমপি ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরুর সঙ্গে নদীটি খনন করার ব্যাপারে কথা হয়েছে। উভয় পাড়ে ওয়াকওয়ে তৈরির পর লাইটিং করে সৌন্দর্য বাড়ানো হবে।
জানা যায়, নেত্রকোনায় এরকম মোট ৩৯টি নদনদী যৌবন হারিয়ে এখন পরিণত হয়েছে মরা খালে। এগুলো হচ্ছে- তেওড়াখালি, ধুপিখালি, লাউয়ারি, সুরিয়া, সাইডুলি, কানাই, কাওনাল, সোনাই, বাউরি, ছিলা, তুষাই, বিষনাই, বেতাই, পাতকুড়া, সুতি, বারুনি, ছেলা, বলী, নয়া নদী, পিয়াইন, নিতাই, বাঁকহারা, কালিহর, বল, বালিয়া, গুনাই, কানসা, রাজেশ্বরী, পাটেশ্বরী, ফুলেশ্বরী, কালিয়ারা, ধোপকলা, জলকান্দি, জল শিমূলকান্দি, বালিয়া, মঙ্গেশ্বরী, রাজাখালী, বৌলাই ও কাউনাই নদী।
মানচিত্রে থাকলেও এর অনেকগুলোর এখন আর কোনো অস্তিত্বই নেই। কোনো কোনোটি টিকে আছে একাবারেই সরু খাল বা নালার আকারে। শহরের পূর্ব সাতপাই এলাকার বাসিন্দা মিসবাহ উদ্দিন খান আসাদ বলেন, দুই যুগ ধরে জমে থাকা কচুরিপানা আর আশপাশ থেকে ফেলা ময়লায় ধলাই নদীর পানি দূষিত হয়ে পড়েছে।
দু’পাড়ে টয়লেট নির্মাণ করে নদীতে লাইন দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় অন্য কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে নদীর দূষিত পানি ব্যবহার করে স্থানীয়রা নানান চর্ম রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এছাড়া নদীর দুই পাড়ই অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে ভূমিদস্যুরা। সাতপাই এলাকার বাসিন্দা সালাহ উদ্দিন খান বলেন, দীর্ঘদিনের পচা কচুরিপানার কারণে ধলাই নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে দুই পাড়ের বাসিন্দারা ময়লা ফেলে নদীটিকে ভাগাড়ে পরিণত করেছে।
আবার বাসা-বাড়িতে পানি সংকট থাকায় এ দূষিত পানিই ব্যবহার করছেন স্থানীয়রা। ফলে বিভিন্ন চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। নদীটি খনন করে দুই পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করে দিলে শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি পানি সংকটও দূর হবে।
স্থনীয় গবেষক আলী আহমদ খান আইয়ূব জানান, ধলাই নদী প্রায় ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ। ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার ভুরভুরিয়া বিল থেকে এসে নেত্রকোনা-পূর্বধলার সংযোগ স্থলে মিলেছে। এরপর লাউয়ারী হয়ে মগড়ার সঙ্গে মিলে নেত্রকোনা শহরের উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। চলার পথে বিভিন্ন এলাকায় নদীটির নাম পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিত সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের কারণে নদীটি মরে গেছে।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
