অবহেলিত গারো সম্প্রদায়ের মানুষ
এম. সুরুজ্জামান, নালিতাবাড়ী
🕐 ৫:৩১ অপরাহ্ণ, মে ২১, ২০২২
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকায় বাস করে পাহাড়ি গারো আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। মুসলমান, হিন্দু কোচ, ডালু, বানাই ও হদি সম্প্রদায়ের পাশাপাশি খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী গারো সম্প্রদায়ের মানুষগুলো ক্ষুধা, দারিদ্র ও বন্যহাতির সাথে লড়াই করে কোন রকমে টিকে আছে। এদের অধিকাংশ পরিবারই কর্মসংস্থানের অভাবে অন্যের বাড়িতে দিনমজুরী করে সংসার চালায়।
জানা গেছে, ৩শ ২৭.৬১ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট নালিতাবাড়ী উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ১১টি ইউনিয়নের ৭৪টি গ্রামে প্রায় ২২ হাজার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আদিবাসী মানুষ প্রকৃতির নানা প্রতিকুলতা মোকাবেলা করে বসবাস করেন। ২শ বছর আগে সুদুর চীনের তিব্বত প্রদেশ থেকে আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ের মানুষ এদেশে আগমন করে। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২ লক্ষাধিক গারো আদিবাসী দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বাস করে। আদিকাল থেকেই গারোরা শিকারী পেশায় খুবই দক্ষ ছিল বলে অধিকাংশ পরিবার বনে জঙ্গলে বাস করে। পারিবারিক দিকদিয়ে গারোরা মাতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনে পরিচালিত পরিবার। এরা প্রধানত ৬টি গোত্রে বিভক্ত।
এগোলো হলো- আত্তং, মিগাম, আবেং, দোয়াল, চিবক ও রোগা। তবে বাংলাদেশে আবেং গোত্রের লোকই বেশি। গারো সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ লোকই রোমান ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী। বিয়ে-শাদীর ব্যাপারে গারোরা নিজেদের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। পাত্র-পাত্রীর পছন্দ অনুযায়ী মিশনারীর ধর্মযাযকরা বিয়ের রেজিস্ট্রেশন করে থাকেন। বর্তমানে গারোদের পোষাক-পরিচ্ছদেও আধুনিকতার ছোঁয়া লক্ষ্য করা যায়। মেয়েরা দকবান্দা-দকশাড়ী ও সেলোয়ার কামিজ আর ছেলেরা শার্ট, প্যান্ট ও লুঙ্গি পরিধান করে। গারো নারীরা কৃষিকাজে খুবই পারদর্শী।
তাই তার পুরুষের পাপাশি কৃষিকাজে অংশ গ্রহন করে। গারোরা সংস্কৃতি ও অতিথি অপ্যায়নকে খুব পছন্দ করে। তারা বিশ্বাস করে ‘সেবাই পরম ধর্ম’। নাচে-গানে প্রভু ইশ্বরকে খুশি করা যায়। আর তিনি খুশি হলেই পরকালে স্বর্গ পাওয়া যাবে। প্রাচীনকালে গারোদের শিক্ষার হার খুব কম ছিল। বর্তমানে প্রায় ৮০ শতাংশ গারো আদিবাসীরা শিক্ষিত। গারোদের নিজস্ব ভাষা আছে যার নাম ‘আচিক ভাষা’। তারপরও শিক্ষিতরা বাংলায় ও ইংরেজীতে কথা বলতে পারে। গারোরা খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী হওয়ায় তাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলো বড়দিন। এছাড়া বছরের মাঝে মধ্যেই ছোটখাট সামাজিক উৎসব উদযাপন করে থাকে।
উপজেলার আন্ধারুপাড়া গ্রামের আদিবাসী সৌখিন রেমা জানান, আমরা খুব কষ্ট করে চলি। আগের মতো বনে লাকড়ী নেই। তাই কখনো কৃষি শ্রমিক ও নাকুগাঁও স্থলবন্দরে ৩০০ টাকা মজুরীতে বন্দর শ্রমিকের কাজ সংসার চালাই।
একই এলাকার কারমেলা চাম্বুগং বলেন, পরিবারের ৬ সদস্য নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাই। শ্রমিকের কাজ ছাড়া সংসার চালানো কঠিন। তিনি বলেন আমাদের পাহাড়ি গারো আদিবাসীদের দিকে সরকারের বিশেষ নজর দেওয়া দরকার।
নালিতাবাড়ীর আদিবাসী সংগঠন ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান মি. লুইস নেংমিনজা জানান, এখানকার আদিবাসীরা দারিদ্রতা, ভূমি সমস্যা ও বন্যহাতির অব্যাহত তান্ডবে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। শিক্ষা বিস্তারের পাশাপাশি আদিবাসীদের বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা ও অন্যান্য সরকারী সাহায্য সহযোগিতা আরো বাড়ানো প্রয়োজন।