ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

হাওরে মিলছে না দেশীয় মাছ

মো. সহিবুর রহমান, হবিগঞ্জ
🕐 ১২:২৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১০, ২০২১

হাওরে মিলছে না দেশীয় মাছ

বর্ষা মৌসুম শেষ হয়ে আসছে। তবুও হবিগঞ্জের হাওর অঞ্চলে দেখা মিলছে না দেশীয় মাছের। একদিকে করোনায় দীর্ঘদিন কর্মহীন থাকা, অন্যদিকে বর্ষায় কাক্সিক্ষত মাছের দেখা না পেয়ে মাথায় হাত পড়েছে জেলার জেলে পল্লীর মানুষদের। স্থানীয় জেলেরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সঠিক সময়ে পানি আসেনি হাওরে। এছাড়া ভরা বর্ষা মৌসুমেও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি হয়নি। যে কারণে বর্ষার শেষের দিকেও দেখা মিলছে না দেশীয় প্রজাতির মাছের। এমতাবস্থায় বাধ্য হয়েই অনেক জেলে পেশা বদল করছে।

হাওর-বাঁওড় বেষ্টিত একটি জেলার নাম হবিগঞ্জ জেলা। এ জেলাটি বিভিন্ন কারণে দেশের শীর্ষে রয়েছে। তেমনি একটি কারণ মাছের প্রাচুর্য। হাওর অঞ্চল হওয়ায় এখানকার অধিকাংশ মানুষের বর্ষাকালের প্রধান কাজ মাছ শিকার বা মাছ চাষ। মাছ চাষ করে এখানকার লোকজন দেশের উন্নয়নে বিরাট অবদান রাখছেন। কেউ লিজ নিয়ে, কেউবা নিজের পুকুরে মাছ চাষ করছেন। এখানকার অনেক লোক পুকুরে মাছ চাষ না করেও বিভিন্ন হাওর থেকে মাছ আহরণ করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি নিজেদের উন্নয়ন করছেন।

জেলার আজমীরিগঞ্জ, লাখাই, নবীগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলাতে বেশিরভাগ মানুষ মাছ শিকারের সঙ্গে জড়িত। বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকার মানুষ পেশা হিসাবে মাছ শিকারকে বেছে নেয়। বছরের অন্য সময় অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকে। কেউ কেউ বছরের এক বর্ষাতেই পেশা হিসাবে মাছ শিকার করে থাকেন। বেকাররাও বর্ষকালে পেশা হিসাবে মাছ শিকারকে বেছে নেন। জেলায় রয়েছে করাঙ্গী, বরাক, ভেড়ামোহনা, সুটকী, রত্না, বিজনা, খোয়াই, কুশিয়ারা, ঝিংড়ী, সুতাংসহ বিভিন্ন নদী। আরও আছে অসংখ্য খাল-বিল, ডোবাসহ নানা প্রাকৃতিক জলাশয়। আর এ কারণেই এখানে বেশি পরিমাণে মাছ পাওয়া যায়। যদিও এবার জলাশয়গুলোতে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো শৈল, গজার, শিং, পাবদা, রুই, কাতল, চিতল, টেংরা, চিংড়ি, বোয়াল, বাউস, আইড়, টাকি, বাইন, পুঁটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের দেখা মিলছে না।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় জলাশয়ের পরিমাণ ৯০ হাজার ১৩৫ হেক্টর। গত দুই তিন বছর আগেও যেখানে মাছ উৎপাদন হতো ২৮ হাজার ৪০০ টন। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা হতো ইউরোপসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে, সেখানে এবার স্থানীয় চাহিদা মেটানো সম্ভবপর হচ্ছে না। জেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, এখানকার মিঠা পানির মাছ এ সময় ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হতো। কিন্তু দিন দিন দেশীয় মাছের উৎপাদন কমে আসায় এখন স্থানীয় চাহিদা মেটানোই সম্ভবপর হয়ে উঠছে না। যদিও পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাছের পরিমাণও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করছেন তারা।

স্থানীয় মৎস্যজীবীরা বলছেন, এবার জেলার হাওরে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি আসেনি। ফলে পর্যাপ্ত পানি না আসায় দেশীয় মাছ বৃদ্ধি পাচ্ছে না। হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর মাছ বাজারে মাছ ক্রয় করতে আসা হরমুজ মিয়া জানান, এখন বাজারে যে মাছ আসছে বেশিরভাগ মাছই চাষের মাছ। আর যে অল্পপরিমাণ দেশীয় মাছ বাজারে আনা হচ্ছে তার দাম আকাশচুম্বি। তাই সাধারণ মানুষের পক্ষে এখন দেশীয় মাছ কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। আব্দুর রহমান নামে অপর আরেক ব্যক্তি জানান, দেশীয় মাছ কিনে খাওয়া এখন গরিবদের জন্য স্বপ্ন হয়ে যাচ্ছে। নি¤œ আয়ের মানুষরা এখন বেশি চাষের মাছের প্রতিই ঝুকছে।

মাছ বিক্রেতা সুশীল জানান, এমনিতেই করোনার কারণে দীর্ঘদিন কর্মহীন ছিল তারা। তারপর আবার বর্ষা মৌসুমেও হাওরে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ও মাছের দেখা না মেলায় হতাশায় রয়েছেন তারা। তাই পরিবার পরিজন নিয়ে তাদের সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়ছে। রহমান মিয়া নামে অপর আরেক মাছ বিক্রেতা জানান, আমরা নি¤œ আয়ের মানুষ। হাওর থেকে মাছ ধরে সংসার চালাই। কিন্তু এবার কাক্সিক্ষত মাছ আমরা পাচ্ছি না। তাই এ পেশা বদল করে এখন অন্য কাজে যেতে হবে আমাদের।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এবার হাওরে দেরিতে পানি আসায় দেশীয় মাছের প্রজনন অনেকটা ব্যবহৃত হচ্ছে। হাওরে ছোট ও মা মাছ রক্ষায় উপজেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper