ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বগুড়ার শিল্পনগরীতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে

তোফাজ্জল হোসেন, বগুড়া
🕐 ৩:১৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ০৩, ২০২১

বগুড়ার শিল্পনগরীতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে

মহামারী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ও মৃত্যুর দিক থেকে রাজশাহী বিভাগের মধ্যে হস্পট হিসেবেই পরিচিত ছিল বগুড়া জেলা। বগুড়া স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে এ পর্যন্ত (শনিবার, ২ অক্টোবর) জেলায় এক লাখ ১৯ হাজার পাঁচজনের নমুনা পরীক্ষায় ২১ হাজার ৫১৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৬৮৫ জন। দীর্ঘ প্রায় দেড় বছরের অধিক সময়ে করোনার প্রভাবে দেশের অন্যান্য জেলার মতো বগুড়ার জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছিল। করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে আসায় প্রায় এক মাসের অধিক সময় ধরে খোলা রয়েছে অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দোকান-পাট, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, যানবাহন চলাচলসহ সবকিছু। আর এর মধ্য দিয়ে সবক্ষেত্রেই করোনার প্রভাবজনিত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগের অবস্থানে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন মানুষ।

এক সময়ের শিল্পনগরী হিসেবে খ্যাত বগুড়ায় বর্তমানে উৎপাদিত হচ্ছে পাওয়ার টিলার, ডিজেল ইঞ্জিন, রাইস মিল, জুট মিল, ফ্লাওয়ার মিলের যন্ত্রাংশ এবং টিউবওয়েল, ধান, গম, ভুট্টা মাড়াই মেশিন, চাল, হলুদ, মরিচ গুড়া করার মেশিন, লায়নার, পিস্টন, সেন্ট্রিফিউগ্যাল পাম্পসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। যা দেশের ৭০ ভাগ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হয়। বগুড়া পৌরসভার ফুলবাড়ি এলাকায় প্রতিষ্ঠিত বিসিক শিল্পনগরীর প্লট শেষ হয়ে যাওয়ায় উদ্যোক্তাদের চাহিদার প্রেক্ষিতে বিসিক ছাড়াও বগুড়া স্টেশন রোডের রেলওয়ে মার্কেট, ফুলবাড়ি, মাটিডালি, চারমাথা, তিনমাথা রেলগেট, ছিলিমপুর, ফুলতলা, বনানী, দ্বিতীয় বাইপাস সড়ক, এরুলিয়া, শাকপালা, নেংরা বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে কৃষিকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। বিসিকসহ ওইসব কারখানায় তৈরি হচ্ছে এসব কৃষি যন্ত্রাংশ। করোনার প্রভাবে দেড় বছর এসব হালকা প্রকৌশল শিল্প কারখানা বন্ধ থাকার পর সেগুলোতে আবারও কর্মব্যস্ততা শুরু হয়েছে নিয়োজিত শ্রমিকদের। দীর্ঘদিনের বন্ধ থাকা কলকারখানা যেন আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। আর মালিক শ্রমিক সবাই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।

বগুড়ার এ রহমান মেটাল অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল রহমান জানান, তাদের মেটাল অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিতে বিভিন্ন মডেলের টিউবওয়েল, ব্রেক ড্রাম তৈরি করা হয়। বর্তমানে তার কারখানায় আগের মতো আবারও উৎপাদন শুরু হয়েছে।

বগুড়া বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মাহফুজার রহমান জানান, বগুড়া বিসিক শিল্প নগরীতে ৯৩টি ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে। এর মধ্যে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প রয়েছে ৫৩টি। এছাড়া বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, ওষুধ তৈরিসহ অন্যান্য কারখানা রয়েছে। এসব শিল্প কলকারখানায় প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তিনি বলেন, বিসিক এলাকার প্রায় সকল কলকারখানা এখন চালু রয়েছে। এছাড়া বিসিকের বাইরেও রয়েছে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান।

বরাবরই ভালো ফলাফল করে আসছে বগুড়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। রাজশাহী বোর্ডের শীর্ষ ৫-১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বগুড়ার বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতি বছর ভালো অবস্থানে থাকে।

শিক্ষা ক্ষেত্রেও এগিয়ে থাকা বগুড়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় আবারও উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে। অথচ কয়েকদিন আগে করোনার সংক্রমণ বেশি থাকাবস্থায় সেগুলো ছিল ফাঁকা। সব কিছু এখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টরা করোনার প্রভাবজনিত ক্ষতি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন।

বগুড়া বিয়াম মডেল স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ মুহা. মুস্তাফিজার রহমান জানান, করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়ায় দীর্ঘদিন পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান চলছে। এর ফলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। এভাবেই যেন সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসে সেটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।

করোনার প্রভাবে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে শ্রমজীবী মানুষগুলো কর্মহীন হয়ে পড়ে। সড়কে বিধি নিষেধের আওতার বাইরে চলাচলকারী যানবাহন এবং পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়া প্রায় অন্যান্য যানবাহন চলাচলে ছিল বিধিনিষেধ। এসব কারণে বেশিরভাগ পরিবহন শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হয়। ওই সময় বগুড়া শহরের নামাজগড় মোড়ে শ্রমজীবী মানুষদের দাঁড়িয়ে বা বসে থাকতে দেখা যায়। মানুষের চাহিদা অনুযায়ী সেখান থেকে তারা কাজে যান। কিন্তু মানুষের কাজও কম থাকায় তাদেরও প্রয়োজন কমে আসে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের সহযোগিতায় চলে অনেকের সংসার। সেই করোনার দাপট এখন অনেকটাই কম। আর এ কারণেই সবকিছু যখন স্বাভাবিক তখন সেসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো আবারও আগের মতো উপার্জন শুরু করেছেন। করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পরিশ্রম করছেন তারা।

বগুড়া শহরের নামাজগড় এলাকার হোটেল শ্রমিক মোমিনুর রহমান জানান, করোনার প্রভাব যখন বেশি ছিল, তখন তাদের হোটেলে লোকজন খুব কম আসা যাওয়া করতেন। বেচা-কেনা নাই বললেই চলে। অল্প টাকার উপার্জন দিয়ে তার সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। এখন সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ায় বেচা-কেনা কিছুটা বেড়েছে।

বগুড়া শহরের সাতমাথার চা বিক্রেতা রফিকুল ইসলামও বললেন একই কথা। তিনি জানান, করোনার প্রভাব যখন বেশি ছিল, তখন চায়ের দোকান বন্ধ ছিল। মাঝে মধ্যে দোকান খোলা হলেও লোকজন ছিল কম। ওই অবস্থা থেকে এখন অনেক ভালো আছি। এভাবেই যেন থাকে সবসময়।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper