গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রাখতে ভূমিকা রাখছে প্রাণিসম্পদ খাত
দেশ মাংস ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ, দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দ্বারপ্রান্তে
শ ম রেজাউল করিম
🕐 ৭:২৮ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৮, ২০২১
দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জন, বেকার সমস্যার সমাধান, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং মেধাসম্পন্ন জাতি গঠনে প্রাণিসম্পদ খাত অপরিহার্য।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিগত একযুগে দেশে প্রাণিসম্পদ খাতে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে গবাদি পশুর জাত উন্নয়ণ ও সম্প্রসারণ, পোল্ট্রি ও ডেইরি গবেষণার উন্নয়ন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, শিক্ষিত উদ্যোক্তা তৈরি, সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, প্রণোদনা প্রদানসহ সরকারের নানামুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কারণে এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন মাংস ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দ্বারপ্রান্তে।
গত ১২ বছরে দুধ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৫ গুণ, মাংস উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৭ গুণ এবং ডিমের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে মাংসের উৎপাদন ছিল ১০ দশমিক ৮০ লাখ মেট্রিক টন এবং মাংসের প্রাপ্যতা ছিল ২০ দশমিক ৬০ গ্রাম/দিন/জন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে মাংসের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬ দশমিক ৭৪ লাখ মেট্রিক টন এবং মাংসের প্রাপ্যতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৬ দশমিক ২০ গ্রাম/দিন/জন। একইভাবে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে ডিমের উৎপাদন ছিল ৪৬৯ দশমিক ৯১ কোটি এবং ডিমের প্রাপ্যতা ছিল ৩২ দশমিক ৫৭টি/বছর/জন। ২০১৯-২০ ডিমের উৎপাদন বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৭৩৬টি এবং প্রাপ্যতা ১০৪ দশমিক ২৩টি/বছর/জন এ উন্নীত হয়েছে। দুধের উৎপাদন ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ২২ দশমিক ৯০ লাখ মেট্রিক টন এবং প্রাপ্যতা ছিল ৪৩ দশমিক ৪৩ মিলি/দিন/জন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৬ দশমিক ৮০ লাখ মেট্রিক টন এবং মাথাপিছু প্রাপ্যতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৫ দশমিক ৬৩ মিলি/দিন/জন। দেশকে দুগ্ধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রাণিসম্পদ অধিদফতর প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, মার্কেট ভ্যালু চেইন উন্নয়ন এবং দুধের ভোক্তা সৃষ্টিসহ নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। আমরা আশা করছি আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যে আমরা দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারব।
পোল্ট্রি ও ডেইরি খাতের উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হওয়ায় আমরা প্রাণিজাত খাদ্যের বহুমুখীকরণ এবং রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছি। গুণগতমান সম্পন্ন প্রাণিজাত খাদ্য উৎপাদন ও প্রাণিজাত খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ এবং বিদেশে রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ আমাদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ উত্তরণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রাণিসম্পদ উৎপাদন উপকরণ ও প্রাণিজাত খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ গবেষণাগার স্থাপন করেছি। এটি মানসম্পন্ন প্রাণিজাত খাদ্য উৎপাদন এবং দেশের পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনের পথে একটি মাইলফলক হবে। পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ খাতের রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
করোনা সংকটে দারিদ্র বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, উদ্যোক্তা তৈরি, কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করা, সর্বোপরি গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখতে প্রাণিসম্পদ খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে এ খাতের বিকাশে সরকার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। এ খাতের খামারি ও উদ্যোক্তারা যাতে করোনার ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেজন্য প্রায় ৬ লক্ষাধিক খামারিকে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ৭০০ কোটি টাকা নগদ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ দেওয়া হচ্ছে। পোল্ট্রি ও ডেইরি শিল্পের উদ্যোক্তাদের নতুন অর্থবছরের বাজেটে কর অব্যাহতির সুযোগসহ বিভিন্ন প্রাণী খাদ্য উপকরণ আমদানির ক্ষেত্রে কর রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ খাতে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য ১০ বছরের কর অব্যাহতি সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। দেশের দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনে ১০ বছরের কর মুক্তি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। দেশের ডেইরি ও পোল্ট্রি শিল্পের সুরক্ষায় মাংস আমদানিতে শুল্ক হার বাড়ানো হয়েছে ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। আশা করছি অদূর ভবিষ্যতে প্রাণিসম্পদ খাত উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228