ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছের দেখা মিলছে চলনবিলে

নাজমুল হাসান, নাটোর
🕐 ৩:৪৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ১১, ২০২১

বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছের দেখা মিলছে চলনবিলে

প্রচলিত আছে, গ্রাম দেখলে কলম, আর বিল দেখলে চলন। দেশের সর্ববৃহৎ বিলাঞ্চল চলনবিল। যার নাম শুনলেই এক সময় ভয়ে গা শিউরে উঠত। উত্তর জনপদের এই বিলের উত্তাল ঢেউয়ের গর্জনে ঘুম ভাঙত বিল পাড়ের বাসিন্দাদের। কিন্তু এখন আর আগের মতো সেই উত্তাল ঢেউ নেই। কারণ প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ঘনমিটার পলি পড়ে দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে চলনবিল। কিন্তু বিলে যে মাছ উৎপাদন হয় তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। মিঠাপানির মাছ রক্ষা ও উৎপাদনে সরকারের বিশেষ উদ্যোগের ফলে বিলের পানির গর্জন কমে গেলেও পানিতে মাছের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। যা বিল অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকায় ভূমিকা রেখেছে।

চলনবিলের সীমানা কয়েকটি জেলা অতিক্রম করেছে। যেমন, নাটোরের সিংড়া, বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর। সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ, তাড়াশ ও উল্লাপাড়া। পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুরা, ফরিদপুর এবং নওগাঁর আত্রাই। ১০টি উপজেলার সীমান্তবর্তী নিম্নাঞ্চলই চলনবিল। প্রায় দুই হাজার গ্রামের এই বিলটিতে ৩৯টি বিভিন্ন আকৃতির ছোট-বড় বিল, ১৬টি নদী ও ২২টি খাল রয়েছে। নদীগুলোর মধ্যে করতোয়া, আত্রাই, বড়াল, গুড়, হিজলী, তুলশী, ইছামতি, নন্দকুজা, গুমানী, চৈচুয়া, ভাদাই, চিকনাই, বানগঙ্গা, কুমারডাঙ্গা, মরা আত্রাই ও করতোয়া উল্লেখযোগ্য।

জলবায়ু পরিবর্তন, নদীর তীর দখল, ফারাক্কার বিরূপ প্রভাব এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে যেখানে সেখানে অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ ও রেগুলেটর নির্মাণের ফলে চলনবিলের জীববৈচিত্র্য এখন অনেকটাই হুমকির মুখে। আর এই কারণে বিভিন্ন জীববৈচিত্র্য বিলুপ্তির পাশাপাশি দেশীয় প্রজাতির ৩৯ প্রকার মাছের অধিকাংশরই বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। তবে আশার কথা হচ্ছে, দেশের মিঠাপানির সবচেয়ে বড় জলাভূমি চলনবিলে আবারো বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছের দেখা মিলছে। গত বছর বন্যার শুরুতে বিলে দেশীয় প্রজাতির মা মাছ প্রবেশ করে প্রজনন শুরু করে। এছাড়া প্রশাসনের কঠোর নজরদারির কারণে মৎস্য শিকারিদের হাত থেকে রক্ষা পায় মা মাছ ও পোনা। ফলে কিছুটা প্রাণ ফিরেছে চলনবিলে। দেখা মিলছে প্রচুর দেশীয় প্রজাতির মাছ। বিলে এখন দেখা মিলছে চেলা, মোয়া, টেংরা, পুঁটি, রায়েক, খলিসা, কই, শিং, মাগুর, টাকি, বেলে, চিংড়ি, বোয়াল, শোল, গুচি, বাইম, রুই, কাতলা ও মৃগেলসহ নানা জাতের মাছ।

নাটোরের চকসিংড়া এলাকার মৎস্যজীবী শাহাদৎ হোসেন জানান, এ বছর বেশি সময় বন্যা থাকায় তারা বিভিন্ন ধরনের দেশি মাছ পাচ্ছেন। ধর্মজাল কিংবা খড়াজালে ঝাঁকে ঝাঁকে দেশি মাছ ধরা পড়ছে। বিগত বছরের তুলনায় এবার মাছের পরিমাণ বেশি। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিলে মাছের পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। চলনবিল অধ্যুষিত শোলাকুড়া গ্রামের রাজ্জাক মৃধা, রহিম মৃধা, করিম মৃধা জানান, এ বছর চলনবিল থেকে আহরণকৃত মোয়া মাছ ৪০০ টাকা, পুঁটি ৪০০ টাকা কেজি, গুচি ৫০০ টাকা, টেংরা ৫০০ কেজি দরে বিক্রি করছেন। সামনের দিনগুলোতে মাছের পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।

নাটোরের সিংড়া আসনের সংসদ সদস্য এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক খোলা কাগজকে জানান, ‘মৎস্য ভা-ার খ্যাত চলনবিল বাংলাদেশের বৃহৎ বিল। অনেক আগে থেকেই এই বিলের মাছ দেশের চাহিদা মেটাচ্ছে।’ এই মাছ এলাকার মানুষের চাহিদা পূরণ করে দেশের চাহিদাও মেটায়। বর্তমানে চলনবিলে নানা প্রজাতির দেশি মাছের দেখা মিলছে। অসাধু জেলেরা যাতে অবৈধ জাল দিয়ে মাছ নিধন করতে না পারে সেজন্য তিনি মৎস্য কর্মকর্তাসহ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তৎপর হতে নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের তৎপরতার ফলেই চলনবিলে পূর্বের মতো মাছের দেখা মিলছে। এটা একটা আশাব্যঞ্জক দিক।

জেলা মৎস্য অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চলনবিলের নাটোর অংশে এবার ২৬ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। পুরো চলনবিলে ৬০ থেকে হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মৎস্য বিভাগ ও প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা রাখার কারণে চলনবিলে মা ও পোনা মাছ রক্ষা পেয়েছে। এ কারণে চলনবিলে প্রচুর দেশি মাছ উৎপাদিত হয়েছে। এছাড়া দীর্ঘসময় বন্যা থাকার কারণে মাছগুলো বেশি সময় ধরে বিস্তৃীর্ণ অঞ্চলজুড়ে চলাচল করতে পেরেছে। এতে করে মাছের প্রজনন বেড়েছে। পাশাপাশি মা ও পোনা মাছ নিধনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় দেশি মাছের উৎপাদন অনেক বেশি হয়েছে। দু-এক সপ্তাহ পর থেকে প্রচুর দেশি মাছ ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper