ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সরকারের বহুমুখী উদ্যোগে হাওরে বাড়ছে মাছের উৎপাদন

শহীদনূর আহমেদ
🕐 ৩:৩১ অপরাহ্ণ, জুলাই ১১, ২০২১

সরকারের বহুমুখী উদ্যোগে হাওরে বাড়ছে মাছের উৎপাদন

মাছের রাজধানী নামে খ্যাত সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওর, পুকুর, জলাশয়ে উৎপাদনকৃত মাছ জেলার আমিষের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত মাছ রপ্তানি হচ্ছে দেশ ও দেশের বাহিরে। যা দেশের অর্থনীতিতে রাখছে প্রত্যক্ষ ভূমিকা। মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বহুমুখী উদ্যোগে সুনামগঞ্জের হাওর ও জলাশয়ে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া প্রশিক্ষণ ও সুযোগ-সুবিধার ফলে মাছ চাষে দেখা দিয়েছে অপার সম্ভাবনা। তবে হাওরে কার্প কিংবা বিদেশি জাতীয় মাছের উৎপাদন বাড়লেও কমেছে দেশীয় মাছের উৎপাদন। মৎস্য আইন না মেনে মাছ আহরণ, বিল সেচ দিয়ে মাছ ধরা, কোনাজাল কিংবা কারেন্ট জাল দিয়ে অবাদে পোনা মাছ ও মা-মাছ শিকার ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বিলুপ্তের পথে দেশীয় মাছ। দেশীয় মাছ রক্ষায় এখনই উদ্যোগ না নিলে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে শতাধিক প্রজাতির দেশীয় মাছ।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের হাওর, পুকুর, জলাশয়ে প্রতি বছর মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে ১ লাখ ৩ হাজার মেট্টিক টন। জেলার মাছের চাহিদা ৫৫ হাজার মেট্রিক টন। জেলার আমিষের চাহিদা মিটে উদ্বৃত্ত থাকে ৪৮ হাজার মেট্রিক টন মাছ। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও প্রজনন বৃদ্ধিতে সরকার রাজস্ব খাত থেকে প্রতি বছরে উপজেলা অনুযায়ী লক্ষাধিক টাকার মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশীয় প্রজাতির মাছের উৎপাদনে দেশের শীর্ষতম জেলা সুনামগঞ্জ। চিতল, পাবদা, রুই ও আইড় মাছের মতো দামি মাছ এই জেলা থেকেই দেশে-বিদেশে সরবরাহ হয়। বছরে এই জেলায় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি মাছের উৎপাদন হয়েছে। এই জেলায় ৬২ হাজার হেক্টর প্লাবন ভূমি ও ২০ হাজার ৫০০ পুকুর রয়েছে। গত বছর জেলায় ৯৮ হাজার ২২৯ টন মাছের উৎপাদন হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করলে জেলায় মাছের উৎপাদন দ্বিগুণ অর্থাৎ ৬ হাজার কোটি টাকার মাছ উৎপাদন করা সম্ভব। হাওরের পানিকে সম্পদ হিসেবেও ব্যবহারের চিন্তা করতে হবে।

সুনামগঞ্জের হাওরে ১৪৩ দেশীয় প্রজাতির মাছ এখনো পাওয়া যায়। কয়েক প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত বা বিপদাপন্ন হলেও বেশিরভাগ প্রজাতির মাছ এখনো চষে বেড়ায় হাওরে হাওরে নদী থেকে নদীতে। জেলায় ৬২ হাজার হেক্টরের মতো প্লাবনভূমিতে সারা বছরই বলতে গেলে পানি থাকে। আর বর্ষার তিন মাস উঁচু সড়ক ও বাড়িঘর ছাড়া পুরো জেলাই ভেসে থাকে পানিতে। তখন মাছের আবাসস্থল আরও বিস্তৃত হয়। মাছ উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্তরা বলেছেন, পানিকেই আয়ের উৎস বিবেচনা করে এগুলে, মাছের উৎপাদন এই জেলায় দ্বিগুণ করা যেতে পারে। মৎস্য পাথর ধান সুনামগঞ্জের মানুষের প্রাণ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় ভরাট হয়ে যাওয়া খাল, বিল ও জলাশয়গুলো খননের আওতায় নিয়ে আসলে মাছের প্রজনন দ্বিগুণ হবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।

হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, আমাদের ছোটবেলায় দেখতাম মাছ আর মাছ। দীর্ঘদিন হাওরের ওপর ইজারাদারদের তা-ব ও অপরিকল্পিত মাছ আহরণের ফলে মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছিল। মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সরকারের গৃহীত উদ্যোগের ফলে সুনামগঞ্জে ইদানীং মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে জেলায় দেশি মাছ বিলুপ্তির পথে। দেশি মাছ রক্ষায় সরকারকে যত্নবান হতে হবে। ভরাট হওয়া নদী, খাল, বিল, জলাশয় খনন না করলে মাছের অবস্থান তৈরী হবে। এতে মাছ প্রজননে বিরূপ প্রভাব পড়বে।

হাওর আান্দোলনের এই নেতা বলেন, সরকারের জাল যার জলা তার এই নীতি কার্যকর করতে হবে। ইজারা প্রথা বাতিল করে প্রকৃত জেলেদের বিল, জলাশয় শাসনের অধিকার দিতে হবে। হাওরে কেবল প্রাকৃতিক উপায়ে মাছ প্রজননের ওপর নির্ভর না করে কৃত্রিম উপায়ে মাছ চাষে চাষিদের প্রশিক্ষণ ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে জেলার সার্বিক মাছের উৎপাদন আরও বাড়বে বলে ধারণা তার।

এদিকে দেশীয় প্রজাতির মছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে জলাশয়গুলো খননের উদ্যোগ গ্রহণ করছে সরকার। সে লক্ষ্যে হাওরপাড়ের সরকারি জলাশয়গুলো খননকাজে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ ৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জলাশয়গুলো সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে আশাবাদী হয়ে উঠছেন হাওরপাড়ের কৃষক ও মৎস্যজীবীরা।’ অপরদিকে কৃত্রিম উপায়ে মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, মৎস্য আহরণের উপকরণ সরবরাহ, পোনা সংগ্রহ, মৎস্য সপ্তাহ পালন, মা ও পোনা মাছ নিধন রোধে অভিযান পরিচালনা ও ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের প্রণোদনার ব্যবস্থাসহ নানামুখী উদ্যোগের মাধ্যমে সুনামগঞ্জের মৎস্য উন্নয়নে জেলা মৎস্য অধিদফতর কাজ করছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

জেলা মৎস্য কর্মকতা সুনীল মন্ডল বলেন, হাওরের রাজধানী সুনামগঞ্জে প্রতি বছর যে মাছ উৎপাদন হয় তা জেলার আমিষের চাহিদা পূরণ করে উদ্বৃত্ত থাকে। হাওরে মাছের উৎপাদন বাড়াতে কাজ করছে সরকার। সরকারের নানামুখী উদ্যোগে সুনামগঞ্জে হাওর, জলাশয়, পুকুরে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি বছর মাছের পোনা অবমুক্তকরণ, ভরাটকৃত খাল জলাশয় খনন, জলমহাল বিলের সংস্কার করে মাছে প্রজনন বৃদ্ধিতে নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দেশি মাছ রক্ষায় কাজ করা হচ্ছে। দেশীয় মাছ চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তাছাড়া প্রশিক্ষণ ও উন্নত সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে কৃত্রিম উপায়ে মাছ চাষে চাষিদের আগ্রহী করছে মৎস্য বিভাগ বলে জানান এই কর্মকর্তা।

দেশের মোট আমিষের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখছে হাওরাঞ্চল। সুনামগঞ্জ ছাড়াও পূর্বের সাত জেলা কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, হবিগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নিয়ে এ হাওরাঞ্চলের অবস্থান। কয়েক বছর ধরে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার মধ্যে এই হাওর অন্যতম। এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওরাঞ্চলের খ্যাতি পেয়ে এই এলাকাটি। সাত জেলায় ছোট-বড় অসংখ্য হাওর আছে। এর মধ্যে ৩৭৩টি আকারে অনেক বড়। তাছাড়া অসংখ্য নদ-নদী ডোবা ও জলাশয় রয়েছে। প্রচুর জলাশয় থাকার ফলে অনেক মাছ উৎপন্ন হয়। অত্র এলাকাকে বাংলাদেশের খাদ্যগুদাম বলা হয়। এই মাছগুদামকে সমৃদ্ধ করতে উদ্যোগগুলো কাজে লাগছে।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper