ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

করোনা নিয়ন্ত্রণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ মডেল

আব্দুর রব নাহিদ
🕐 ৩:৩৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৪, ২০২১

করোনা নিয়ন্ত্রণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ মডেল

করোনার সংক্রমণ হার ঊর্ধ্বমুখী হওয়া নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনায় ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ। সেই সঙ্গে সীমান্তবর্তী হওয়ায় ঝুঁকিও সামনে আসে। অন্যদিকে করোনা চিকিৎসার সক্ষমতাও ছিল অনেক কম। তবে দুই দফায় ১৪ দিনে সর্বাত্মক লকডাউন এই ধাক্কায় সামলানো গেছে করোনার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনার সংক্রমণ হার ৫০ শতাংশের বেশি হওয়ায় ২৫ মে ৭ দিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসন। লকডাউন কার্যকরে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন ছিল খুবই কঠোর। প্রথম দফা ৭ দিনের লকডাউনের পরও সংক্রমনের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা না কমায়, ফের ১ জুন থেকে আবারো ৭ দিন লকডাউন বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় দফাতেও প্রশাসন ছিল কঠোর। ফলে অনেকটায় সর্বাত্মকভাবে কার্যকর হয় টানা ১৪ দিনের লকডাউন। দ্বিতীয় দফা লকডাউন শেষের আগের দিন, ৬ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সফরে আসেন। এ সময় তিনি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে লকডাউনের কারণে করোনার সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ঠেকানো গেছে, স্থিতিশীল পর্যায়ে এসেছে এখানকার করোনা পরিস্থিতি।

৭ জুন দ্বিতীয় দফা লকডাউন শেষে, করোনার সংক্রমণ হার নেমে আসে ২৯ শতাংশে। সংক্রমণ হার কমতে থাকা ও আম বাণিজ্যসহ, দোকানমালিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লকডাউন না বাড়ালেও ১১ দফা বিধিনিষেধ দেয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ৯টা থেকে ৫টা পযন্ত দোকানপাট খুলে রাখার সুযোগ পান ব্যবসায়ীরা।

জুন মাস শেষে এক সময়ের করোনার হটস্পট চাঁপাইনবাবগঞ্জে সংক্রমণ হার ১৭ শতাংশ। সেই সঙ্গে এখানে বেড়েছে চিকিৎসার সক্ষমতাও। মাত্র ২০ বেডের করোনা ইউনিট নিয়ে, করোনা রোগীদের চিকিৎসা দুরূহ ছিল। ফলে অধিকাংশ রোগীকেই যেতে হয়েছিল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। রোগীদের রাজশাহীতে পাঠাতে পাঠাতেই অনেক সময় অনেকের মৃত্যুও হয়েছে। তবে গত ২ জুন সেন্টাল অক্সিজেন সুবিধা চালু হওয়ার পর থেকেই ২০ বেডের করোনা ইউনিটে কয়েক দফায় বেড সংখ্যা বাড়িয়ে ৭২টিতে নেওয়া হয়। এর ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোগীদের অনেকটায় কমেছে রাজশাহী পাঠানোর প্রয়োজনীয়তা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটের চিকিৎসক আহনাফ শাহরিয়ার জানান, করোনা ইউনিটে ৭২ বেডের বিপরীতে ৭২ জন রোগীই ভর্তি থাকে, তবে আগে দেখা যেত বেড খালি নাই, তারপরও ১০-১৫ জন রোগীকে ভর্তির সুপারিশ আসত, অনেকে ফোন দিতেন। গত কয়েকদিন থেকে এখন কোনো ফোনই পাইনি। এখন রোগীর বাড়তি চাপ নেই। করোনা ইউনিটের এ চিকিৎসক জানান, সাধারণত যাদের মিনিটে ১৫ লিটার অক্সিজেন দিয়েও অবস্থার উন্নতি হয় না, তাদের তারা রাজশাহীতে রেফার্ড করেন। তবে এই সংখ্যাটাও আগের তুলনায় অনেক কমে এসেছে।

তিনি জানান, আগে প্রতিদিনই ২-৩ জন মারা যাচ্ছিল, সেখানে এখন অনেক দিন মৃত্যু শূন্য থাকছে।

এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সেও করোনা রোগীদের চিকিৎসার কিছুটা সুযোগ আছে। সেখানে ছয়টি মাঝারী সাইজের অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে, একটা সেন্টাল অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা করা হয়েছে।

উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাসুদ পারভেজ জানান. গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স এ ১০ টি বেড আছে করোনা রোগীদের জন্য। সেখানে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা আছে। তবে যাদের অক্সিজেন বেশি প্রয়োজন পড়ে তাদের সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে রেফার্ড করা হয়। তিনি বলেন, এখানে অক্সিজেনের ৬টা সিলিন্ডার আছে, ফলে রিফিল করার সময় সমস্যা হয়, সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছি আমরা।

অন্যদিকে সীমান্তবর্তী উপজেলা শিবগঞ্জে করোনা রোগীদের জন্য চিকিৎসার সুযোগ নেই, তবে করোনা আক্রান্তদের টেলিফোনে নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।

উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েরা খান জানান, অনেক সময় কোনো রোগীর অক্সিজেনের লেবেল কমে গেলে, তাদের এখানে এনে সিলিন্ডার অক্সিজেন দিয়ে, কিছুক্ষণ অক্সিজেন দেওয়া হয়, এতে কিছুটা ভালো হলে আবারো বাড়ি পাঠানো হয়, আর তাদের অবস্থার উন্নতি হয় না তাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা ইউনিটে পাঠানো হয়।

তবে এই চিকিৎসকের মতে আগের চেয়ে অনেকটা কমে এসেছে, রোগী আসার প্রবণতা। পরিস্থিতি এখন কিছুটা ভালো উল্লেখ করে এ চিকিৎসক বলেন, আমাদের এই সতর্কতার সঙ্গে এ স্থিতিশীল অবস্থাটা ধরে রাখতে হবে। আগের চেয়ে মানুষের কিছুটা সচেতনা বেড়েছে বলেও উল্লেখ করেন এ চিকিৎসক।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী মনে করেন, কঠোর লকডাউনের কারণেই কমানো গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের করোনার সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। তিনি বলেন, ১৪ দিনের করোনার লকডাউন খুব বেশি কাজে দিয়েছে। সাধারণত এসব ক্ষেত্রে ১৪-২১ দিন যদি ঘরে মানুষকে আটকে রাখা যায়, তাহলে সংক্রমণের বৃদ্ধি অনেকাংশেই কমানো সম্ভব। আমাদের এখানে ১৪ দিনের লকডাউন ও এরপর বিধিনিষেধের মধ্যে রাখার কারণেই আমরা কিছুটা হলেও ভালো অবস্থানে আছি। সেই সঙ্গে এখন মানুষের মধ্যে কিছুটা হলেও সচেতনা বেড়েছে, তবে এটাকে ধরে রাখতে হবে। ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের করোনা আক্রান্তদের চাঁপাইনবাবগঞ্জেই যাতে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়, সেই লক্ষ্যে সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটের পরিসর বাড়ানো হয়েছে, সেথানে ৭২ জন এখন চিকিৎসা নিতে পারছেন।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper