সাতক্ষীরায় মৃত্যু ও আক্রান্ত কমছে না
ইব্রাহিম খলিল
🕐 ৩:৩৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৪, ২০২১
সাতক্ষীরা জেলা সীমান্তবর্তী জেলা। ১৩৮ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে স্থল সীমান্ত। মহামারী করোনা আক্রান্ত জেলার মধ্যে এ জেলা রয়েছে শীর্ষে। সাতক্ষীরায় চতুর্থ দফা লকডাউন বাড়ানো হলেও মৃত্যু ও আক্রান্ত থামানো যাচ্ছে না। এদিকে সরকার কর্তৃক ঘোষিত কঠোর লকডাউনে থামানো যাচ্ছে না খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষদের। ছোট-খাটো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পড়েছে চরম বিপাকে।
সীমান্তবর্তী এ জেলায় মানুষের প্রধান ব্যবসা মৎস্য ঘের। লকডউনের কারণে তারা মাছ কেনাবেচা করতে পারছে না। এদিকে ভোমরাস্থল বন্দরে খোলা থাকলেও আমদানি রপ্তানি একেবারেই নেই বললেই চলে।
হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। সাতক্ষীরা শহরের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র সাতক্ষীরা বড় বাজার। প্রত্যেক দিন বিভিন্ন উপজেলা থেকে কাঁচামাল মাছ এখানে বিক্রি করা হয়। কিন্তু লকডাউনের কারণে তারা জেলা শহরে না আসতে পেরে পড়েছে চরম বিপাকে। একদিকে যেমন খেতের ফসল নষ্ট হচ্ছে তেমনি আর্থিকভাবে তারা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সীমান্ত জেলা হওয়ায় ভারতের করোনা আক্রান্তের প্রভাব পড়েছে সাতক্ষীরায়। শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট ৮০৮ আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে ৪৩৩ জন। শনিবারও ২৮ জন আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। চতুর্থ দফায় লকডাউনেও মানুষকে ঘরে রাখা যাচ্ছে না। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে ভারত থেকে সীমান্তে অবৈধপথে মানুষের যাতায়াত। সীমান্তপথে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় এ পর্যন্ত ১৪৩ জন মানুষ আটক হয়েছে। যাদের অধিকাংশই করোনা আক্রান্ত।
সাতক্ষীরা করোনা আক্রান্ত না থামার প্রধান কারণই হলো অবৈধপথে সীমান্তের ওপার থেকে করোনা বয়ে আনা। এই আক্রান্তের ছায়া পড়েছে এখানকার মানুষের জীবন ও জীবিকায়।
সাতক্ষীরা বড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বাদশা মিয়া জানান, সাতক্ষীরা জেলার মধ্যে সুলতানপুর বড় বাজার হলো ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র। এখানে বিভিন্ন উপজেলা পাইকাররা তরি-তরকারি মাছসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র এনে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করে থাকে। কিন্তু লকডাউনের কারণে ব্যবসা বাণিজ্যের ধস নেমেছে। আগের মতো উপজেলা শহর থেকে পাইকাররা আর এখানে আসতে পারে না। সে জন্য ব্যবসায় ধস নেমেছে।
সাতক্ষীরা মৎস্য ব্যবসায়ী মুনজিতপুর গ্রামের আমিনুর রহমান আলম জানান, তিনি ১০ বিঘা জমিতে মৎস্য ঘের করে পড়েছেন চরম বিপাকে। তিনি তার ঘেরে চালাই মাছের মাছ চাষ করেন। লকডাউনের কারণে তিনি মাছ বিক্রি করতে পারছেন না। তিনি সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে মৎস্য ঘের করেছিলেন। মাছ বিক্রি করতে না পারলে তিনি চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
সাতক্ষীরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হারেছ হোসেন জানান, তিনি সাতক্ষীরায় নিউ মার্কেটের সামনে ছোট-খাটো একটি দোকান নিয়ে মানিব্যাগ বেল্ট চিরুনির ব্যবসা করে থাকেন। তিনি বলেন লকডাউনের কারণে তার দোকানের মালামাল অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। এখন আর দোকানে মালামাল তুলতে পারি না। প্রতিদিন দোকানে দুই থেকে তিনশ’ টাকা কেনাবেচা হয় তাই দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে। দোকানে মাল তুলব কীভাবে?
সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি নাছিম ফারুখ খান মিঠু খোলা কাগজকে বলেন, সাতক্ষীরায় একদিকে যেমন করোনার ঊর্ধ্বগতি তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্যে নিম্নগতি।
সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় এখানে সংক্রামণের হার দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। খুচরা থেকে শুরু করে ভোমরাস্থল বন্দর পর্যন্ত সব ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আছে চরম দুর্ভোগের মধ্যে। দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান করা না গেলে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে এ জেলাকে।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228