ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কুষ্টিয়ার চালকলের প্রভাব বাজারে

শরীফুল ইসলাম
🕐 ১:৫৮ অপরাহ্ণ, জুন ২৭, ২০২১

কুষ্টিয়ার চালকলের প্রভাব বাজারে

ধান থেকে চাল তৈরির জন্য শীর্ষ জেলার পরিচিতি পেয়েছে কুষ্টিয়া। সারা দেশে যে পরিমাণ চাল উৎপাদন হয় তার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ চাল কুষ্টিয়ার চালকলে। সেই সঙ্গে চালকল, চাতাল ও এর সঙ্গে কর্মরত মানুষের সংখ্যাও বেশি। এ কারণে কুষ্টিয়ায় চালের অন্যতম প্রধান মোকামে পরিণত হয়েছে। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে কুষ্টিয়ার অদৃশ্য হাত থাকে বলে মনে করা হয়।

তথ্যমতে কুষ্টিয়া শহর সংলগ্ন খাজানগর ৩৩টি বৃহৎ এগ্রো অটো রাইস মিলসহ ছোট-বড় প্রায় ৬০০ রাইস মিল রয়েছে। পাশাপাশি ধান সিদ্ধ ও শুকানোর চাতাল রয়েছে দুই সহস্রাধিক। আর এসব মিল ও চাতালে প্রায় ২২ হাজার মানুষ কর্মে নিয়োজিত রয়েছে।

কুষ্টিয়া শুধু চালকল বা চাল উৎপাদনেই বিখ্যাত নয়। উৎপাদনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জিকে প্রকল্প এ এলাকায় হওয়ার কারণে অনেক আগে থেকে ধান উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জেলাতে পরিণত হয়েছে। কুষ্টিয়ায় এবারের বোরো মৌসুমে ৩৩ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ধান চাষ হয়েছে ৩৫ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে। যা থেকে ২ লাখ ২৯ হাজার ৪৮ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ধানের ফলন হয়েছে বাম্পার। কৃষি বিভাগের সহায়তায় বিঘা প্রতি মাত্র ৫-৭ হাজার টাকা খরচ করে ২৩-২৪ মণ হারে ফলন হওয়ায় লাভ হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। অপরদিকে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ফলে কৃষকদের সময় ও অর্থ দুই-ই সাশ্রয় হওয়ার পাশাপাশি ধানের অপচয়ও হয়েছে কম। এর আগে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে কৃষকদের খরচ যেমন বেশি হতো, তেমনি ধানের অপচয় হতো বেশি। জেলার দৌলতপুরের চুয়ামল্লিকপাড়া গ্রামের কৃষক রানা হোসেন জানিয়েছেন, এবারের বোরো মৌসুমে বিঘা প্রতি তার ধানের ফলন হয়েছে গড়ে ২৪ মণ হারে। কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটার ফলে তার সময়, অর্থ ও ধানের অপচয় কম হয়েছে। এতে তিনি অন্যান্য বছরের তুলনায় অধিক লাভবান হয়েছেন।

কৃষকদের উন্নত জাতের বীজ, সারসহ প্রয়োজীয় প্রণোদনা ও পরামর্শ দেওয়ায় এ বছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে। পাশাপাশি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটার ফলে কৃষকদের সময়, অর্থ ও ধানের অপচয় কম হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক, শ্যামল কুমার সরকার।

জানা গেছে এবার জেলায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই কৃষকরা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে আনন্দের সঙ্গে মেশিন দিয়ে ধান কাটা উৎসব পালন করেছেন। শ্রমিক সংকট নিরসনে মেশিন দিয়ে ধান কাটা ও মাড়াই করতে কৃষকদের সময় ও অর্থ সাশ্রয় হওয়ার পাশাপাশি ধানের অপচয় রোধ হচ্ছে।

কৃষকের উৎপাদিত ২ লাখ ২৯ হাজার ৪৮ মেট্রিক টন ধানের মধ্য থেকে মাত্র ৪ হাজার মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হচ্ছে কুষ্টিয়া জেলায়। ২৭ টাকা কেজি দরে কৃষি বিভাগের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী কার্ডধারী প্রতি কৃষকের কাছ থেকে মাত্র ৩ মেট্রিক টন করে ধান ক্রয় করছে কুষ্টিয়া খাদ্য বিভাগ। যা চলবে আগস্ট মাস পর্যন্ত। তবে কৃষকরা ধানের দাম বেশি পাওয়ায় এ বছর বিভিন্ন চালকল মালিকদের কাছে ধান বিক্রয় করেছেন। চালকল মালিকরা ইতোমধ্যে ধান ক্রয় নিজ নিজ আড়তে মজুদও করেছেন। ফলে অদ্যবধি কুষ্টিয়া খাদ্য বিভাগ তাদের লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক ধানও ক্রয় করতে পারেননি।

দেশের অন্যতম বৃহৎ চালের আড়ত কুষ্টিয়ার খাজানগর। এখানকার উৎপাদিত চাল ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়ে থাকে। গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ ট্রাক চাল সরবরাহ করা হয়। অবার চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ ও সিন্ডিকেট করে চালের বাজার অস্থির করার ক্ষেত্রেও খাজানগর চালকল মালিকদের ভূমিকা থাকে সবসময়। বিপুলসংখ্যক চালকল এখানে কেন্দ্রীভূত হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দেশের চালের বাজার ব্যবস্থাপনায় এ বাজারের কথা মাথায় রাখতে হয়।

চালের দাম বৃদ্ধি ও ধান মজুদের বিষয়ে বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন কুষ্টিয়ার সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, বাজারে ধানের দাম বেশি হলে প্রভাব পড়ে চালের বাজারে। চালকল মালিকরা বেশি দামে ধান ক্রয় করলে চালের দাম বেশি পড়বে। এতে চালকল মালিকদের হাত বা কারসাজির কথা ঠিক না। ধান মজুদের বিষয়ে তিনি বলেন, মিলে যে পরিমাণ ধান প্রয়োজন হয় মালিকরা তা ক্রয় করে থাকেন।

সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান ক্রয়ের বিষয়ে দৌলতপুর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, দৌলতপুরে লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত কার্ডধারী কৃষকদের কাছ থেকে ৬৩৭ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হবে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৬০ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হয়েছে যা জেলার মধ্যে বেশি। বাকি ধানও ক্রয় করা সম্ভব হবে এবং লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর আগস্ট মাস পর্যন্ত কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় কার্যক্রম চলবে।

তবে খাদ্য গুদামে ধান বিক্রয়ের বিষয়ে সাধারণ কৃষকদের অভিযোগ রয়েছে। কৃষকদের ধান স্থানীয় দালাল বা দলীয় নেতাকর্মীরা সরবরাহ করে থাকেন। সাধারণ কৃষকদের তাদের উৎপাদিত ধান নিয়ে খাদ্য গুদাম পর্যন্ত পৌঁছানোর সুযোগ কম। খাদ্য গুদামকেন্দ্রিক সিন্ডিকেট বা দালাল চক্র লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত কৃষকদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তাদের কার্ডগুলো ভয়ভীতি দেখিয়ে অথবা অর্থের লোভ দেখিয়ে সংগ্রহ করে ওইসব কার্ডের মাধ্যমে তারা খাদ্যগুদামে ধান সরবরাহ করে থাকেন। ফলে কৃষকরা সরকারি গুদামে ধান বিক্রয়ের ক্ষেত্রে অনেকটাই বঞ্চিত থাকেন। 

লেখক : প্রভাষক, দৌলতপুর কলেজ, কুষ্টিয়া

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper