ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

যশোরের রেণু পোনা যাচ্ছে সারা দেশে

বি এম ফারুক, যশোর
🕐 ১:১৬ অপরাহ্ণ, জুন ২০, ২০২১

যশোরের রেণু পোনা যাচ্ছে সারা দেশে

যশোরের মাছ চাষিরা বিপ্লব ঘটিয়েছেন। প্রতি বছর যশোর জেলায় উৎপাদিত হচ্ছে ২০০ কোটি টাকার রেণু ও মাছ। জেলার ২৫ লাখ মানুষের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত মাছ চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। খাওয়ার মাছের পাশাপাশি যশোরের বিভিন্ন হ্যাচারিতে বছরে উৎপাদিত হচ্ছে ৬০ হাজার কেজি রেণুপোনা।

দেশের মোট উৎপাদনের ৭০ শতাংশ রেণুপোনা যশোরে উৎপাদিত হচ্ছে। মাছ চাষের সঙ্গে যুক্ত প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ। এর মধ্যে বেশির ভাগ রেণু ও পোনা উৎপাদিত হচ্ছে মৎস্যপল্লী হিসেবে খ্যাত চাঁচড়া এলাকায়। মাছ চাষের ভরা মৌসুমে চাঁচড়া এলাকা জেগে উঠেছে। ভোররাত থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ওই এলাকায় বিক্রি হচ্ছে কোটি কোটি টাকার মাছের পোনা। সেই পোনার চালান চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এলাকার সব শ্রেণির মানুষ এখন মাছ নিয়ে মহাব্যস্ত। কিন্তু মাছের পোনা পরিবহনে বাধা, উন্নত ব্রুট ফিশের অভাব, কৃষির সুবিধা না পাওয়া, খাবারের দাম বৃদ্ধি, মাছের রোগ নির্ণয়ের অসুবিধা, আবহাওয়ার বৈপরীত্য ও রেণুপোনা রপ্তানির সুযোগ না থাকায় সম্ভাবনাময় মাছ চাষ ব্যাহত হচ্ছে। সরেজমিন গিয়ে মাছ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

হিসাব-নিকাশ : জেলার ৫২টি হ্যাচারিতে বছরে প্রায় ৬০ হাজার কেজি রেণুপোনা উৎপাদিত হচ্ছে। জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৪৭ হাজার হেক্টর জলাশয় রয়েছে। ওই জলাশয়ে বছরে ৫৯ হাজার ৫৭৯ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। সব মিলিয়ে উৎপাদিত রেণু ও খাওয়ার মাছের দাম প্রায় ২০০ কোটি টাকা।

মৎস্য বিভাগ সূত্রে আরও জানা যায়, জেলার ২৫ লাখ মানুষের জন্য মাছের প্রয়োজন মাথাপিছু ৪৯ গ্রাম হিসাবে ৪১ হাজার ৫১৫ মেট্রিক টন। তাতে দেখা যায়, জেলার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত ১৮ হাজার ৬৪ মেট্রিক টন মাছ অন্যান্য জেলায় বিক্রি হয়।

যেভাবে শুরু : আজ থেকে ২০০ বছর আগে যশোরের রাজা সতীশ চন্দ্র মাছ চাষ শুরু করেন। ওই রাজার প্রিয় মাছ ছিল পাবদা। তিনি এলাকার রাজবংশীদের দিয়ে পাবদা মাছের চাষের মধ্য দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। ষাটের দশকে সদর উপজেলার চাঁচড়া এলাকার মহসিন আলী প্রথম নদী থেকে রেণু সংগ্রহ করে বাণিজ্যিকভাবে পোনা উৎপাদন শুরু করেন। ১৯৮২ সালে তার ছেলে বাহাউদ্দিন দেশে প্রথম বেসরকারি পর্যায়ে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে রেণু উৎপাদনের জন্য হ্যাচারি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর একই এলাকার সাইফুজ্জামান মজু, ফিরোজ খান, রেজাউল হক, শেখ মেজবাহ উদ্দিন, মোস্তফা কামাল, শওকত আলী, জাহিদুর রহমান জাহিদ, সেলিম রেজা পান্নু, শামছুর রহমান, ডাব্লিউসহ আরও অনেকে হ্যাচারি প্রতিষ্ঠা করে রেণু উৎপাদন শুরু করেন। অন্যদিকে রেণু উৎপাদনের পাশাপাশি এলাকায় গড়ে ওঠে শত শত নার্সারি ও মাছের খামার।

উৎপাদিত মাছ : যশোরের হ্যাচারিগুলোতে বর্তমানে রুই, কাতল, মৃগেল, কালবাউস, কমন কার্প, থাই সরপুঁটি, সিলভার কার্প, ব্রিগেড কার্প, ব্লাক কার্প, ইলশে বাটা, কই, জিয়ল, পাঙ্গাশ, চিতল, আইড়সহ নানা প্রজাতির মাছের রেণু উৎপাদিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি ওইসব মাছের পোনা ও টেবিল ফিশ উৎপাদন করে অনেকেই লাভবান হচ্ছেন।

মাছ চাষে যশোরে কয়েকজন নায়ক : যশোরের চাঁচড়া ডাল মিল এলাকার শুভ্র হ্যাচারি নামে সাইফুজ্জামান মজুর একটি মাছের অত্যাধুনিক হ্যাচারি রয়েছে। তার হ্যাচারিতে বছরে রেণু উৎপাদনের ক্ষমতা ছয় হাজার কেজি। কিন্তু এবার বৈরী আবহাওয়ার কারণে তিনি চার হাজার কেজি রেণু উৎপাদন করতে পেরেছেন। সামান্য পুঁজি নিয়ে মাছ চাষ শুরু করলেও মজু এখন গাড়ি-বাড়ি ও বড় একটি মৎস্য খামারের মালিক। তিনি মাছ চাষে অবদান রাখার জন্য ১৯৯৫ ও ১৯৯৭ সালের রাষ্ট্রীয় স্বর্ণপদক পেয়েছেন। মাছের খাবারের মূল্য বৃদ্ধি, বৈরী আবহাওয়া, পোনার বাজারের জন্য নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় মাছ চাষ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া যেসব দেশে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে মাছ চাষ হয়, সেসব দেশের প্রযুক্তি আনা হলে মাছ চাষিরা লাভবান হবেন। দেশ এগিয়ে যাবে।

চাঁচড়া ডাল মিল এলাকার মা ফাতিমা হ্যাচারির মালিক ফিরোজ খান ও হাজী আনিসুর রহমান মুকুল। ফিরোজ খান ২০১০ সালে মাছ চাষে অবদান রাখার জন্য জহির রায়হান স্বর্ণপদক পেয়েছেন। এর আগে তিনি ১৯৯৫ ও ১৯৯৯ সালে রাষ্ট্রীয় পদক পেয়েছেন। তিনি বছরে ছয় হাজার কেজি রেণু উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন।

চাঁচড়া গোলদার বাড়ি এলাকার মাতৃ ফিশ হ্যাচারির মালিক তরুণ যুবক জাহিদুর রহমান জাহিদ। মৎস্য চাষে অবদানের জন্য তিনি ২০০৯ সালে রাষ্ট্রীয় পদকসহ আরও কিছু পুরস্কার পেয়েছেন।

চোরে নিল মৎস্য গবেষণার ল্যাবের যন্ত্র : মাছ চাষিদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০১ সালে চাঁচড়া এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট স্বাদু পানি উপকেন্দ্র। এখানে একটি মিনি ল্যাবরেটরিও গড়ে তোলা হয়েছিল। কিন্তু ল্যাবের সব যন্ত্রপাতি কয়েক বছর আগে ডাকাতি হয়ে যায়।

এ ব্যাপারে যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, যশোরের মাছ চাষিরা রেণু ও মাছ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper