ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জেলা শহরে বেসরকারি হাসপাতাল

সহজলভ্য হবে চিকিৎসা

দেবাশীষ দত্ত
🕐 ২:৫৬ অপরাহ্ণ, জুন ১৩, ২০২১

সহজলভ্য হবে চিকিৎসা

মানুষের মৌলিক অধিকারের একটি হলো উপযুক্ত চিকিৎসা প্রাপ্তি। চিকিৎসাসেবা দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে জনগণের দুয়ারে পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও বাস্তবে তা সহজলভ্য হয়ে উঠছে না। জেলা শহরগুলোতে এ আয়োজন বাস্তবায়ন হতে পারছে না ব্যক্তি উদ্যোগের অভাবে। আবার ইচ্ছে থাকলেও তা কার্যকর হচ্ছে না বিভিন্ন জটিলতায়। উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে কি পরিমাণ রোগী হাসপাতালে ছুটছেন, তা বোঝা যায় বড় শহরের হাসপাতালগুলো পরিদর্শন করলে।

এদিকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বাজেটে বিশেষায়িত ও সাধারণ হাসপাতাল নির্মাণে কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। নতুন বাজেটে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রাম এবং বিভাগীয় শহরের বাইরে জেলা শহরে বেসরকারি উদ্যোগে হাসপাতাল তৈরি করার ক্ষেত্রে ১০ বছরের জন্য কর অব্যাহতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ২০৩১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এ সুযোগ মিলবে। তবে শিশু ও নবজাতক, নারী ও মাতৃস্বাস্থ্য, অনপকালজি, ওয়েল বিং ও প্রিভেনটিভ মেডিসিন ইউনিট থাকা সাপেক্ষে ন্যূনতম ২৫০ শয্যার সাধারণ হাসপাতাল এবং ন্যূনতম ২০০ শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপিত হলে শর্ত সাপেক্ষে ১০ বছরের জন্য এই কর অব্যাহতি পাবে। কুষ্টিয়া শহরেও বিশ^মানের একটি হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে। তবে এটি সরকারি নয়, ব্যক্তি উদ্যোগে করা হচ্ছে। শহরের উপজেলা মোড়ে বহুতল ভবনের এ হাসপাতালটি তৈরি করছেন দেশের অন্যতম করপোরেট প্রতিষ্ঠান বিআরবি গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ মজিবর রহমান।

এছাড়াও কুমারখালীর আলাউদ্দিননগরে ব্যক্তি উদ্যোগে হাসপাতাল নির্মাণ করেছেন হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ আলাউদ্দিন আহমেদ। ইতিমধ্যে ২০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের ৩০ শতাংশ কাজ তিনি শেষ করেছেন। তাছাড়া দৌলতপুর উপজেলায় ব্যক্তি উদ্যোগে ২০ শয্যাবিশিষ্ট আনোয়ারা বিশ্বাস মা ও শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন শিল্পপতি নাসির উদ্দিন বিশ্বাস। তবে বর্তমানে হাসপাতালগুলোর শয্যা সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

এদিকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বাজেটে বিশেষায়িত ও সাধারণ হাসপাতাল নির্মাণে ১০ বছরের কর অবকাশ সুবিধা দেওয়ার যে প্রস্তাবনা এসেছে তা বাস্তবায়ন হলে ব্যক্তি উদ্যোগে মানসম্মত হাসপাতাল নির্মাণে কোনো পরিকল্পনা আছে কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে আলহাজ আলাউদ্দিন আহমেদ বলেন, জেলা শহরগুলোতে বেসরকারি উদ্যোগে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে স্বাস্থ্য অধিকার সুরক্ষার জন্য সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তাহলেই সম্মিলিতভাবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন বাস্তবে পরিণত হবে। বাজেট প্রস্তাবনার অনেক আগেই আমি নিজ উদ্যোগে তহিরুন নেছা মেমোরিয়াল হাসপাতালের কাজ শুরু করেছি। ভবিষ্যতেও এমন উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।

তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দেশের ৫৫ শতাংশ মানুষ এখনো মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে ও সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে, অথচ আমাদের দেশে চিকিৎসা পেতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, এর ৬৭ শতাংশই রোগীকে বহন করতে হচ্ছে।

শহরের বাসিন্দা মাহাবুব রহমান জানান, স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা বৈষম্য আছে। বৈষম্য আছে গ্রামে ও শহরে, আছে ধনী ও দরিদ্র শ্রেণিতে। শহরের মানুষ গ্রামের মানুষের চেয়ে স্বাস্থ্যসেবা বেশি পাচ্ছেন। আবার জেলা শহরগুলোতে মানসম্মত হাসপাতাল নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উন্নত চিকিৎসার জন্য বিভাগীয় শহরে ছুটতে হচ্ছে। একদিকে সময়,অন্যদিকে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার বিকল্প নেই। সেটা সরকারি হোক আর বেসরকারি হোক। কুষ্টিয়া জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান লাকী মনে করেন, সরকারের এই ধরনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এর জন্য সমাজের সামর্থ্যবানদের এগিয়ে আসতে হবে। আবার মনে রাখতে হবে এই সুযোগ যেন কৌশল না হয়। বেসরকারি উদ্যোগে বিশেষায়িত বা সাধারণ হাসপাতাল তৈরির ক্ষেত্রে শিল্পপতিরা বেশি আগ্রহ দেখায়। মানসম্মত সেবার সঙ্গে করপোরেট চিন্তাভাবনা থাকলে প্রান্তিক মানুষগুলো সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। আমার দাবি বিশ্বমানের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় যেন একেবারেই নাম মাত্র হয়।

এদিকে, যেসব জেলায় মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, সেসব জেলার জনগণ আধুনিক চিকিৎসা গ্রহণের সব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। পাশের জেলা থেকে অনেক রোগী এসব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। দূর-দূরান্ত থেকে রোগীরা এসে চিকিৎসা নিতে গিয়ে যোগাযোগ, আসা-যাওয়া ও খাবারের জন্য নিঃস্ব হয়ে পড়েন।

চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. আমিনুল হক রতন বলেন, এটা নিঃসন্দেহে মহতী উদ্যোগ। যেভাবে রোগী বাড়ছে, সেক্ষেত্রে আমাদের দেশে বিশেষায়িত হাসপাতালের প্রয়োজন অনেক বেশি। তবে বেসরকারি উদ্যোগে যে হাসপাতালগুলো প্রতিষ্ঠা করা হবে তা যেন বাণিজ্যিকভাবে গড়ে না ওঠে। তাহলে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হবে।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper