ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিতে বেড়েছে দুর্ভোগ

সুকান্ত দাস
🕐 ১২:৪৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ০৪, ২০২১

জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিতে বেড়েছে দুর্ভোগ

দাহ্য পদার্থের বিস্ফোরণের মতো হঠাৎ করে করোনা সংক্রমণের বিস্ফোরণ ঘটেছে। কয়েক দিনের ব্যবধানে সংক্রমণ বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। প্রতিদিন শনাক্ত এবং মৃতের নতুন রেকর্ড হচ্ছে। গত বছরের শেষ দিকে করোনার প্রকোপ বেশ কমে গিয়েছিল। শনাক্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা আস্তে আস্তে কমে আসছিল । কিন্তু মার্চের শুরু থেকে শনাক্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে শুরু করে, যা এখন প্রতিনিয়ত নতুন রেকর্ড তৈরি করছে। হঠাৎ করেই শনাক্ত এবং মৃতের সংখ্যা এত বৃদ্ধিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে সবাই।

বৈশ্বিক মহামারী করোনায় পর্যুদস্ত সমস্ত বিশ্ব। বিশেষ করে উন্নয়নশীল এবং নিম্ন আয়ের দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই করুণ। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। গত বছরের শুরুর দিকে করোনার দ্রুত সংক্রমণ রোধ করতে দেওয়া লকডাউনে দেশের অর্থনীতি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সরকারি বেতনভুক্ত চাকরিজীবী ব্যতীত সকল পেশাজীবী মানুষ চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে যা থেকে এখনো মুক্তি মেলেনি। নিম্নআয়ের মানুষ যারা দিন আনে দিন খায় তারা গত বছরের লকডাউন এর সময় হওয়া ক্ষতি কাটিয়ে উঠছিল আস্তে আস্তে। কিন্তু দেশে আবারও করোনা সংক্রমণ বাড়ার কারণে তাদের আয়ের উৎস কমতে শুরু করেছে। হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার বেশ কিছু নিয়মে করেছে। এতে কতটুকু উপকার মিলবে তা বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে এটা সন্দেহাতীত সত্যি।

করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী নেওয়া এবং ভাড়া ৬০ ভাগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যদিও এই সিদ্ধান্ত মানুষের ভালোর জন্য কিন্তু ভাড়া বৃদ্ধির কারণে সাধারণ জনগণ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। গত বছর যখন এই নিয়ম করা হয়েছিল তার কিছুদিন পর থেকে অধিক যাত্রী এবং বেশি ভাড়া নিত অধিকাংশ গণপরিবহন। যদি গাদাগাদি করে লোক তুলে বেশি ভাড়া নেওয়া হয় তাহলে লাভটা কী হলো। সংক্রমণ এড়ানো তো সম্ভবই না শুধু শুধু সাধারণ মানুষের ভোগান্তি। গত বছরের অভিজ্ঞতার পরও এবার এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। ফল সেই একই। এবারও ঠিক গত বছরের মতো অবস্থা। বেশ কিছু গণপরিবহন এবং লঞ্চ স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে অধিক যাত্রী তুলছে কিন্তু ভাড়া বেশি নিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ৬০ ভাগ ভাড়া বাড়ানোর জায়গায় দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছে। নিয়ম করার পরও অবস্থা যদি এমন থাকে তাহলে এই নিয়মের কার্যকারিতা কতটুকু। এতে মানুষের উপকার তো হচ্ছেই না বরং অর্থনৈতিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে সাধারণ মানুষ। যারা দিন আনে দিন খায় তাদের সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

এছাড়া আরও একটি বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে বড় শহরগুলোতে। অনেক গণপরিবহন বেশি যাত্রী উঠালেও বেশকিছু গণপরিবহন নিয়ম মেনে অর্ধেক যাত্রী নিচ্ছে। বিপত্তিটা এখানেই বেঁধেছে। বড় শহরগুলোতে সকালে একটা নির্দিষ্ট সময়ে অধিকাংশ মানুষ তাদের কর্মস্থলে যায়।

এমনিতেই জনসংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে প্রতিদিন গাদাগাদি করে বাদুড়ঝোলা হয়ে যেতে হয় এসব মানুষকে তাদের কর্মস্থলে। বাসে অর্ধেক যাত্রী তুললেও প্রতিদিনের মতো সেই একই সংখ্যক মানুষকে কর্মস্থলে যেতেই হচ্ছে।

ফলে একটা বড়সংখ্যক মানুষ সঠিক সময়ে তাদের কর্মস্থলে পৌঁছতে পারছে না। যেসব অফিসে সঠিক সময়ে না পৌঁছালে বেতন কাটার নিয়ম আছে সেখানে কর্মরত মানুষগুলো আরও বেশি বিপদে পড়েছে। পাশাপাশি মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং বন্ধ করেছে প্রশাসন। এ কারণে মানুষ আরো বেশি বিপদে পড়েছে। মোটরসাইকেল চালকরা এই কাজ করে তাদের সংসার চালাতেন হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্তে তারাও মহা বিপদে পড়েছেন। বেশকিছু গণপরিবহন এবং লঞ্চ বেশি যাত্রী পরিবহন আছে কিন্তু মোটরসাইকেলে তো একজন যাত্রী উঠছে। এ কারণে মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং বন্ধ করার সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। একদিকে যেমন গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সাধারণ মানুষের আয় কমেছে অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেপরোয়াভাবে বাড়ছে। চাল, ডাল, মাছ, মাংস, তরকারি, ফলমূল, চিনি, লবন, আটা, বিস্কুটসহ সকল প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। হিমশিম খেতে হচ্ছে সংসার চালাতে। অবস্থা এমন হয়েছে যে নিম্নআয়ের মানুষের টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
সামনে রমজান মাস। রমজান মাস আসার আগে প্রতি বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দেয় অসাধু ব্যবসায়ীরা। সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া বিভিন্ন জিনিসের দাম মানছে না ব্যবসায়ীরা। তারা সরকারি সিদ্ধান্তের কোনোরকম তোয়াক্কা করছে না। এতে সাধারণ মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দুবেলা-দুমুঠো খাবার মতো অবস্থা নেই অনেকের।

সরকারের উচিত অতিসত্বর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া। রমজানের আগে প্রতি বছরই সরকার জিনিসপত্রের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া এবং যথারীতি ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত মূল্যের থেকে বেশি নেয়। এ কারণে বিগত বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে এখনই সচেষ্ট হতে হবে। রমজান মাসে যেন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে এটা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।
শুধুমাত্র জিনিসপত্রের মূল্য নির্ধারণ করে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। প্রশাসনের উচিত নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা। সম্ভব হলে সাদা পোশাকে পরিচয় গোপন রেখে মনিটরিং করতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তাহলেই হয়তো বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

সাধারণ মানুষের দুর্দশা লাঘবে সরকারের উচিত গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি এবং মোটরসাইকেলের রাইট শেয়ারিং বন্ধের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা। গণপরিবহন গুলোতে যদি অর্ধেক যাত্রী তোলে তাহলে বাকি লোকগুলো কীভাবে গন্তব্যে পৌঁছাবে। যদি অফিসে অর্ধেক জনবল নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে তবুও ঝামেলা এড়ানো সম্ভব নয়, কারণ সকল মানুষ তো অফিসে যায় না। আর সব অফিসে তো এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।

আর ৬০ ভাগ ভাড়া বৃদ্ধির জায়গায় দ্বিগুণ ভাড়া এবং বেশি যাত্রী নেওয়ার ঘটনা তো আছেই। এতে জনগণের দুর্ভোগ বাড়ছে, কমছে না। এ ছাড়া মোটরসাইকেলের রাইড শেয়ারিং বন্ধ করাতে চালকরা খুব সমস্যায় পড়েছেন। তাদের আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে গেছে।

একদিকে ভাড়া বৃদ্ধিতে জনগণের ভোগান্তি হচ্ছে, অনেকেই নিয়ম মানছে না অন্যদিকে করোনা সংক্রমণ তীব্রভাবে বাড়ছে। সরকার পড়েছে উভয় সংকটে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি, দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি, সাধারণ মানুষের আয় কমে যাওয়া, এসকল বিষয়ে কেমন যেন একটা হ-য-ব-র-ল অবস্থা। বিশেষ করে কর্মস্থলে অর্ধেক জনবল নিয়ে কাজ করার বিষয়টা নিশ্চিত না করে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী নেওয়ার সিদ্ধান্তটা খুব সমস্যার সৃষ্টি করছে। অতিসত্বর এই সমস্যার সমাধান জরুরি। এমতাবস্থায় সরকারের উচিত বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেওয়া। যাতে সাধারণ মানুষের উপকার হয়।

সুকান্ত দাস : শিক্ষার্থী
পরিসংখ্যান বিভাগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper