ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পোশাক শিল্পে পশ্চাৎ সংযোজন শিল্পের স্থানীয় অবদান বাড়ছে

রবি রায়হান
🕐 ৫:৪৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৯, ২০২০

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প শুরুর দিকে রপ্তানিমুখী শিল্প সম্পূর্ণভাবেই আমদানিকৃত কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এই নির্ভরতার কারণে তৈরি পোশাক শিল্পের অবস্থান নড়বড়ে ও খুবই নাজুক অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাত্রা শুরু হয়।

আজ সময়ের বিবর্তনে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকগণ পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ হয়ে তৈরি পোশাক শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। শুরুর দিকের সমস্যা থেকে দিনে দিনে বেরিয়ে আসতে শুরু করে, স্থানীয় তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা। তৈরি পোশাক শিল্পের পশ্চাৎ সংযোগ শিল্প গড়ে তোলার দিকে মনোনিবেশ করে এবং স্থানীয়ভাবে দক্ষতা বৃদ্ধি করে রপ্তানি মানসম্পন্ন সুতা এবং সুতা দিয়ে রপ্তানি উপযুক্ত কাপড় উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করে এবং এক্সসোসরিজসহ অন্যান্য পশ্চাৎ সংযোগ বাড়িয়ে মূল্য সংযোজন বাড়াতে সক্ষম হয়। 

কথা হলো মূল্য সংযোজন জিনিসটা কী?

মূল্য সংযোজন হচ্ছে : কাঁচামাল ক্রয়ের পর ওই কাঁচামাল দ্বারা পণ্য তৈরি করে পণ্যের যে পরিমাণ বাড়তি দাম যোগ হয় তাকে মূল্য সংযোজন বলা হয়।

রপ্তানি যোগ্য তৈরি পোশাক শিল্পে ডায়িং ও ফিনিশিং শিল্প একটি বিশাল অংশজুড়ে থাকে পশ্চাৎ সংযোজন শিল্পের। স্থানীয়ভাবে কাপড় রঙ ও ফিনিশিং করার পর কাপড় কেটে সেলাই করে রপ্তানিযোগ্য পণ্যে রূপান্তরিত করা হয়।

বর্তমানে স্থানীয়ভাবে এই দক্ষতা ও যোগ্যতা পুরোপুরি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। গত ১২ থেকে ১৫ বছরে এর পরিধি ব্যাপক হারে বিস্তৃতি লাভ করেছে। এ ছাড়া খুব তাড়াতাড়ি পশ্চাৎ সংযোজন শিল্পের চেইন গড়ে ওঠার কারণে এখন আর পূর্বের ন্যায় তৈরি পোশাক শিল্প পুরোপুরি কাঁচামাল আমদানির ওপর নির্ভরশীল নয়।

২০১০ সালের এপ্রিল মাসের পরিসংখ্যান অনুসারে ওভেন তৈরি পোশাকে ৫০ ভাগ এবং নিট তৈরি পোশাক শিল্পে মাত্র ১০ ভাগ পশ্চাৎ সংযোজনে আমদানির ওপর নির্ভরশীল ছিল।

বর্তমানে বাংলাদেশে অসংখ্য বহুস্তর বিশিষ্ট স্বয়ংসম্পূর্ণ তৈরি পোশাক শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। একই সঙ্গে বয়ন, সুতা কাটা, রঙ এবং ক্যালেন্ডারিং প্রক্রিয়াসহ অন্যান্য কর্ম সম্পন্ন করতে সক্ষম।

এ ছাড়া এখন রপ্তানিযোগ্য কাপড়ের চাহিদা স্থানীয় কারখানাগুলোতেও প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এই সমস্ত কাপড় ভালো বিক্রি হয়।
স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা ছোট ছোট তৈরি পোশাক কারখানাগুলো বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ডিজাইনকৃত নকশা অনুসারে, এসব কাপড় কেটে সেলাই, এক্সসোসরিজ সংযোগ, ক্যালেন্ডারিং ও প্যাকিং করে নির্দিষ্ট ক্রেতার কাছে রপ্তানি করে। এতে পুরোপুরি স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য ব্যবহার করে তৈরি পোশাক রপ্তানি করা হয়।

এখন বাংলাদেশে পশ্চাৎ সংযোজন শিল্প চেইন গড়ে ওঠার কারণে, তৈরি পোশাক শিল্প, বিশে^ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আগের তুলনায় অনেকটা সুসংগঠিত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

গত ২০ থেকে ২৫ বছরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে নিট তৈরি পোশাক খাত উল্লেখযোগ্য। ওভেন খাতে ডেনিম বা জিন্স কাপড় ৮০ ভাগ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয় এবং তৈরি পোশাক হিসেবে রপ্তানি হয়।

২০১৮-১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে :
ওভেন তৈরি পোশাক শিল্পের পশ্চাৎ সংযোজন ৩৫ শতাংশ এবং নিট তৈরি পোশাক শিল্পের ৫ শতাংশ পশ্চাৎ সংযোজনে কাঁচামাল আমদানির ওপর নির্ভরশীল।

এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ডব্লিউ অ্যাপারেলস লিমিটেডের উদ্যোক্তা মোহাম্মাদ আখতার হোসেন বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পের অবস্থান বিশ^বাজারে আরও সমৃদ্ধ করতে এবং মূল্য সংযোজন বাড়াতে হলে স্থানীয়ভাবে পশ্চাৎ সংযোজন শিল্পকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল কাপড় এবং এক্সসোরিজ পশ্চাৎ সংযোগ শিল্পের আধুনিকায়ন করা জরুরি।

যাতে ১০০ ভাগ মূল্য সংযোজন স্থানীয়ভাবে করা সম্ভব হবে। এটা সম্ভব হলে রপ্তানিতে এই শিল্পের গতি বাড়বে, রপ্তানি আয় শতভাগ দেশেই থাকবে এবং বিশ^বাজারে যে কোনো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সক্ষম হবে বলে তৈরি পোশাক শিল্প বোদ্ধাদের মতো।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper