নকশিকাঁথার গ্রাম জয়নগর
শুভ সালাতিন
🕐 ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৫, ২০২০
গ্রামের নাম জয়নগর। নামে জয়নগর হলেও গ্রামটিকে এখনও নগর-সভ্যতা পুরোপুরি গ্রাস করেনি। গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে বিদ্যুৎ আছে। বেশিরভাগই টিনের ঘর। কিছু কিছু একতলা পাকা বাড়ি চোখে পড়ে। গ্রামের বুক চিরে চলে গেছে একমাত্র পাকা সড়ক। সড়কটি বেশ উঁচু। মাসখানেক আগে বন্যায় যখন পুরো গ্রামটি প্লাবিত হয়, তখন অনেকে আশ্রয় নেয় এখানে। এখন পানি নেমে গেছে।
খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে হাঁটতে বের হলাম। বাড়ির সামনে পূর্ব প্রান্তে আরেকটা পুকুর। মাছ চাষ হয়। পুকুর পাড়ে সুপারি গাছের নিচে বাঁশের দুটি মাচা। এক মাচায় বসে নিবিষ্ট মনে কাঁথা সেলাই করছে উকিয়া বেগম। ধীরপায়ে এগিয়ে গেলাম সেদিকে। লাল কাপড়ের জমিনে ফুটে উঠছে দৃষ্টিনন্দন নকশা।
নকশিকাঁথা আমাদের প্রাচীন লোকশিল্প। ‘নকশিকাঁথা’ কথাটার ব্যবহার শুরু হয় পল্লীকবি জসীম উদ্দিনের ‘নকশিকাঁথার মাঠ’ থেকে। কথা প্রসঙ্গে উকিয়া বেগম জানালেন, একটি কাঁথা সেলাই করে ৫৫০ টাকা পান তিনি। একেকটা কাঁথা সেলাই করতে সময় লাগে তিন থেকে ছয় মাসের মতো।
কোনো কোনো সময় নকশা জটিল হলে সময় লাগে আরও বেশি। কাপড় ও সুতার জোগান দেয় মূলত শহুরে ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া অনেক এনজিও এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এই শহুরে ব্যবসায়ীরা এবং এনজিও গ্রাম্য নারীদের মাধ্যমে কম খরচে কাঁথা সেলাই করে শহরে নিয়ে আসে। শহরের বড় বড় মার্কেটে শোভা পায় এই সব নকশিকাঁথা এবং চাদর।
গ্রামের নারীরা অবসর সময়ে ঘরের কাজ শেষ করে বিকেলের দিকে কাঁথা সেলাই করতে বসেন। গল্প-গুজব করতে করতেই চলে কাঁথা সেলাই। আমি কাঁথা কেনার আগ্রহের কথা জানাতেই উকিয়া বেগম আরেক মহিলাকে ডেকে আনলেন। মহিলাটি ঘর থেকে একটি ভাঁজ করা কাঁথা নিয়ে এলেন। ভালো করে দেখানোর জন্য বেশ কয়েকজন মিলে কাঁথাটি সামনে মেলে ধরলেন তারা।
একটু দরদাম করে অবশেষে ১৫০০ টাকায় রফা হলো। এত অল্পমূল্যে অসাধারণ একটা শিল্পকর্ম কিনতে পেরে মনটা ভালো হয়ে গেল। আমার কাছে ১৫০০ টাকা হয়তো কিছুই না, কিন্তু এই গ্রাম্য মহিলার কাছে এই মহামারীকালে এই টাকাই অনেক কিছু।
গ্রাম্য মহিলাটি যে খুশি, সেটি তার চোখ-মুখ দেখেই বুঝতে পারলাম। পরিশ্রমের উপযুক্ত মূল্য পেলে সবাই খুশি হয়। রাতে আরও কয়েকজন মহিলা তাদের সেলাই করা কাঁথা নিয়ে আসল। সাধ্যমতো তিনটা কিনলাম। কেনাকাটায় যে এত সুখ তা অনেকদিন পর আবার টের পেলাম।
নকশিকাঁথা আমাদের গর্ব। সরকার এবং আমাদের সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে এই গ্রামীণ শিল্পকে রক্ষা করার জন্য। খেয়াল রাখতে হবে এই নকশিকাঁথা বুননের পেছনে যে গ্রাম্য নারীর নিরলস পরিশ্রম, মেধা ও মনন জড়িত আছে, তিনি যেন উপযুক্ত পারিশ্রমিক ও স্বীকৃতি পান।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228