ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সংকটে সরবরাহ বিশ্লেষণ ও বাজার ব্যবস্থাপনা

মো. গোলাম সরওয়ার ব্যাপস্থাপক, বহুজাতিক কোম্পানী
🕐 ১:১২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১১, ২০২০

আমরা বর্তমানে এক সংকটময় সময় পার করছি। এই সংকটে জীবনের উত্তোরণ যত না মলিন তার চেয়ে ঢের বেশি টিকে থাকার ব্যাকুলতা। সীমিত সম্পদের স্বেচ্ছাচারমূলক ব্যবহার, দেশ ভাবনাকে ফিকে করে তুলছে। যখন দেখি দুঃখের দিনের মুঠো চাল দস্যুর দখলে আর সরবরাহের অসম বণ্টনে দিশেহারা মধ্যবিত্ত, তখন শিল্পের সরবরাহ সংকটে করপোরেটের খুদে কর্মীর জীবনে মাস শেষে কর্মহীনতার গ্লানি বিষিয়ে তুলেছে।

এ অবস্থা আমাদের সবার কাছে পরিচিত। এরূপ সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে ব্যক্তি কিংবা সামষ্টিক সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় কিছু কৌশলী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করি। যেমন : ১. চাহিদা বিশ্লেষণ ও সরবরাহের পরিবেশ নিরীক্ষণ করা; ২. জোগান বা সরবরাহের গুণগত মানের বিচার বিশ্লেষণ করা ও বিকল্প সরবরাহ চ্যানেলের যোগ্যতা নির্ণয় করা; ৩. সম্ভাব্য সরবরাহকারীগণের তালিকা তৈরি করা; ৪. তালিকাভুক্ত সরবরাহকারীগণের বিশ্লেষণ করা; ৫. তাদের তুলনামূলক প্রতিবেদন তৈরি করা; ৬. সরবরাহকারীর অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তালিকাক্রম তৈরি করা। এরূপ পদ্ধতিগত সুবিধা না নিতে পারলে আমাদের মতো বাফার রাষ্ট্রগুলো সরবরাহ সংকটে পড়ে, যার ফলে ভোগ্যপণ্য ও শিল্পে সরবরাহ কমে যায়, যার ফলে উৎপাদন কমে যায় এবং কর্মীরা কর্মহীন হয়, হঠাৎ দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়, যার ফলে কর্ম হারানো মানুষের সংখ্যা বাড়তে দেখা যায়। 

বাজার দখলের জন্য সরবরাহকারীরা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে। এমন প্রতিযোগিতা থেকে ভোক্তা হিসেবে আমাদের মতো দেশগুলো কিছু সুবিধা অর্জন করতে পারে। একটা ভালো সরবরাহ ব্যবস্থাপনা একটি দেশের অর্থনীতিকে সাবলীল করে তুলতে পারে এবং এর সুফল হিসেবে পণ্যমূল্য মার্জিনাল লেভেলে রেখে মানুষের আয়-ব্যয় বৈষম্য দূর করতে পারে। সরবরাহের চলমান প্রক্রিয়া সচল রেখে পণ্যমানের উন্নয়ন ঘটাতে পারে, যা কৌশলগত সুবিধারই অংশ হিসেবে সামগ্রিক অর্জন হয়ে থাকে।

বিশ্বময় সংকটের অংশীদার হিসেবে আমরা বঙ্গীয় জনপদের সাগরঘেঁষা তীরে বিশাল জলরাশির এক জনবহুল অঞ্চল। আমাদের আছে অনেক জল, আর জলের কান্না তার সঙ্গে একাকার হয়ে আছে জলের মাছ, জলের ধান, ভাটির মানুষ। বলা যায় জলমগ্ন এই জনপদে পল্লী জননীরা সংসারের সরবরাহ ব্যবস্থা ভালোই ঠিকঠাক রাখছিলেন, পালের নৌকা অনুকূলেই ছিল; কিন্তু এখন সে পালে আর হাওয়া আসে না। হঠাৎ রসহীন জীবনের মোকাবিলায় আমরা প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছি? জলের জননীরা কোনোদিন জানবেও না তাদের আশপাশে আজ এত অচেনা কেন, তাদের চলার পথে আজ এত কোলাহল কেন। গাছের ছায়ায় বসে দুজনের মনজুড়ানো আলাপচারিতা আর স্থান পায় না।

আর নেই তাপদাহে ওষ্ঠাগত দেহখানির আঁচলের ঠাঁই। কুড়ি বছর আগের সরবরাহ ব্যবস্থাপনা আর আজকের ব্যবস্থাপনা একরকম রাখার চেষ্টা করলে আমাদের পস্তাতে হবে। কারণ টেকনোলজির পরিবর্তনের ফলে লক্ষ্য করা যায়, অকেজো (ড়নংড়ষবঃব) পণ্য সরবরাহ করে আমাদের পণ্যের মান কমিয়ে দিচ্ছে তার সঙ্গে বেড়ে যাচ্ছে আমাদের ব্লকিং ক্যাপিটাল। হ্যাঁ যে কথাটি বলছিলাম, আমাদের সরবরাহ সংকট ও এখান থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী?

একটি দেশের সরবরাহ ঠিক রাখতে সরবরাহকারীদের অবশ্যই চাপে রাখতে হবে। চাপে রাখার জন্য কিছু তথ্যভা-ার সব সময়ের জন্য বিশ্লেষণ করতে হয়। যেটাকে বাণিজ্যের পরিভাষায় পোর্টার এনালাইসিস বলে। এখানে সরবরাহ মার্কেটের পাঁচটি শক্তি কাজ করে, যা থেকে একটি প্রতিষ্ঠান বা দেশ তার সুবিধাটা আদায় করে নিতে পারে। সাপ্লায়ারদের মধ্যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করতে হবে আর এই প্রতিযোগিতার অন্তরালে দর কষাকষির কাজটা সেরে নিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে এরূপ মার্কেটে নতুন কেউ এর চেয়েও বেশি সুবিধা দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসছে কি-না।

সাম্প্রতিককালে পেঁয়াজ সরবরাহের ক্ষেত্রে সাপ্লায়ার বাছাইয়ে ভুল সিদ্ধান্ত ছিল, যা চোখে পড়েছে। কেবল মাত্র এই সরল পথে মাড়িয়ে একটা সরবরাহ ব্যবস্থাপনা চালানো সম্ভব হয় না এর সঙ্গে যুক্ত থাকে রাজনৈতিক, আইনগত এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়াবলি।

স্থান কাল পাত্র ভেদে আউট বাউন্ড লজিস্টিক ঠিক করতে হয়, তা নাহলে মাঝপথে একটি দেশ তীব্র সংকটে পড়তে পারে। কৃষিপ্রধান এই কাদামাটির দেশে সরবরাহ চ্যানেল ঠিক রেখে আমরা এগোতে পারি দেশময় শিল্পায়নের পথে। আমার চায়না বন্ধু লি ভালো ইংরেজি জানে, সে তার দেশ ভাবনায় অনেক কথায় আমার সঙ্গে শেয়ার করে এবং প্রায়ই বলে তোমাদের দেশে আর্ন করা অনেক সহজ। তোমাদের আছে সাগর থেকে দেশের শেষ অব্দি নদীপথ। আরও আছে নরম মাটি আর সাগরের গভীরতা।

আমরা আজ সত্যি স্বপ্ন দেখতে চাই, মায়ের চোখের লোনা জলে না ভেসে, সাগরের জলে ভাসতে চাই আর মাঝ দরিয়ায় উল্লাস করে খেলতে চাই জলকেলির খেলা।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper