আট মাসে ৪১ সাংবাদিকের নামে ডিজিটাল মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৯:৫১ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১
বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারীর গত ১৮ মাসে জনগণের তথ্য অধিকারের ক্রমাগত লঙ্ঘন ও সংকোচনের নজিরবিহীন প্রবণতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আর্টিকেল নাইনটিন। আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস-২০২১ উপলক্ষে গতকাল সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় সংস্থাটি। তারা বলছে, ৮ মাসে ৪১ জন সাংবাদিকের নামে ডিজিটাল মামলা হয়েছে।
সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ বলছে, মহামারীর প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে একই রকম সমন্বয়হীনতা, কর্মপরিকল্পনায় অস্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার তীব্র অভাব বাংলাদেশে এই সংকটকে গভীরতর করেছে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রের বিভিন্ন যন্ত্রের হাতে তথ্যের অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত, যা সরকার প্রতিশ্রুত টেকসই, স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণের পরিপন্থী প্রয়াস।
আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, করোনাকালে সরকার নানা অজুহাত দেখিয়ে তথ্য পাওয়ার অধিকার ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করেছে। এমনকি করোনা ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যসেবা ও টিকা বিষয়ে সরকার অনেক সময় ভুল ও অসঙ্গতিপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের চিহ্নিত অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে সরকার উল্টো সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকদের ওপরই খড়গহস্ত হয়েছে। এজন্য ২০১৮ সালের নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ শতবছরের পুরনো দাফতরিক গোপনীয়তা আইনের অপব্যবহার হচ্ছে।
উল্লেখ্য, আর্টিকেল নাইনটিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত মতপ্রকাশজনিত অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ ও রেকর্ড করে। সংস্থাটি চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া ১৭২টি মামলার ঘটনা রেকর্ড করেছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৩০৮ জন ব্যক্তি এসব মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৪১ জন সাংবাদিক। অভিযুক্তদের মধ্যে ১১৪ জনকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের অনেকেই এখনো জামিনের অপেক্ষায় আছেন। ২০২০ সালে ৩৬৮ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ১৯৭টি মামলার তথ্য রেকর্ড করা হয়। এর আগে ২০১৯ ও ২০১৮ সালে রেকর্ডকৃত মামলার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৬৩টি ও ৩৪টি। বিচার প্রক্রিয়া নিষ্পন্ন না হওয়ায় এসব মামলার ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগ এখনো গ্রেফতার-হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
ফারুখ ফয়সল আরও বলেন, তথ্য পাওয়া নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার। একইভাবে ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা ও গোপনীয়তার সমান অধিকারও নাগরিকের রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে প্রায়ই ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে আড়িপাতা এবং গোপন ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যাওয়ার মতো উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটছে। এরই মধ্যে প্রস্তাবিত ‘ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন’ ব্যক্তিতথ্য সুরক্ষার নামে বিরুদ্ধ মত নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবে ও স্বাধীন মতপ্রকাশ আরও বাধাগ্রস্ত করবে বলে জনমনে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (এসডিজি) অন্যতম লক্ষ্যমাত্রা ১৬ (শান্তি, ন্যয়বিচার ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান) অর্জনে তথ্য অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে ফারুখ ফয়সল বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান জনসাধারণের তথ্য অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার সুরক্ষা দেয়। বাংলাদেশ জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র (ইউডিএইচআর) এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তিরও (আইসিসিপিআর) অন্যতম অনুস্বাক্ষরকারী দেশ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের করা এই অঙ্গীকারগুলো প্রতিপালনে সচেষ্ট হতে আমরা সরকারের প্রতি আবারও আহ্বান জানাই।