কথিত দুর্নীতির খবরের পরিপ্রেক্ষিতে নীলসাগর গ্রুপের বক্তব্য
খোলা কাগজ প্রতিবেদক
🕐 ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২০
সম্প্রতি ICB-2.10 Rehabilitation of Distribution Network' শীর্ষক কাজের দরপত্রে অংশ নিয়েছে দেশি-বিদেশি ১০টি কোম্পানি। এতে নীলসাগর গ্রুপ কোনো দরদাতা নয় এবং তার সরাসরি অংশগ্রহণও নেই। এ সংক্রান্ত খবরগুলোতে নীলসাগর গ্রুপের সম্পৃক্ততা টেনে আনা খুবই অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। প্রকৃত ঘটনা হলো: এই আন্তর্জাতিক দরপত্রটি One Stage-Two Envelop (এক ধাপ দুই খাম) পদ্ধতির। এই পদ্ধতির দরপত্রে দুর্নীতির কোনো সুযোগই নেই। দরপত্রে মোট ১০টি দরদাতা প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।
প্রথম ধাপে, Technical Evaluation কমিটি পূর্ণাঙ্গ যাচাই-বাছাই শেষে কোনো অসংগতি না পাওয়ায় শুধু চারটি প্রতিষ্ঠানকে Technically Responsive করে। যা এডিপি কর্তৃকও পুনরায় যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেয়া হয়। এই চারটি দরদাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুটি দরদাতা প্রতিষ্ঠানের Sub-Contructor হিসেবে ‘এসএ ইঞ্জিনিয়ারিং’-এর নাম প্রস্তাব করা হয়। Technical Evaluation কমিটি এ নিয়ে কোনো আপত্তি করেনি। কারণ সব দরদাতা প্রতিষ্ঠান চাইলে একটি বা একাধিক প্রতিষ্ঠানকে Sub-Contructor হিসেবে প্রস্তাব করতে পারে।
এডিবির গাইডলাইনে এ বিষয়ে বিধিনিষেধ নেই। বরং অনুমোদন আছে। দ্বিতীয় ধাপে, চারটি দরদাতার ফিন্যান্সিয়াল অফার খোলা হয়। তাতে দেখা যায়, সর্বনিম্ন দরদাতা-১ ও সর্বনিম্ন দরদাতা-২ এর কনস্ট্রাকশন Sub-Contructor একই অর্থাৎ ‘এসএ ইঞ্জিনিয়ারিং’। এর মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা-১ এর লোকাল এজেন্ট জাহা এন্টারপ্রাইজ ও সর্বনিম্ন দরদাতা-২ এর লোকাল এজেন্ট পারুমা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস। এসব দেখেও মূল্যায়ন কমিটি সর্বনিম্ন দরদাতা-১ কে আর্থিক মূল্যায়নপূর্বক কাজ দেয়ার পক্ষে এডিবি বরাবর সুপারিশ করে।
পরবর্তীতে সর্বনিম্ন দুই দরদাতার মধ্যে দরপ্রস্তাবের পার্থক্য কম থাকায় বিষয়টি ওয়াসার কাছে জানতে চায় এডিবি। এরপর যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে লোকাল এজেন্ট ও সাব কন্ট্রাক্টরদের মধ্যে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট (স্বার্থসংশ্লিষ্ট যোগাযোগ) খুঁজে পায়। কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের কারণে সর্বনিম্ন দরদাতা-১ ও সর্বনিম্ন দরদাতা-২ কে বাদ দিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা-৩ কে কাজ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
পক্ষান্তরে সর্বনিম্ন দরদাতা-১ ও সর্বনিম্ন দরদাতা-২ এর লোকাল এজেন্ট এবং Sub-Contructor-দের মাধ্যমে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট থাকায় একটি ‘কমন রিলেশনশিপ’ দেখিয়ে এডিবি তার অর্থায়নে পরিচালিত কাজ দেয়া থেকে ওই তিনটি প্রতিষ্ঠানকে তিন বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা দেয়। তবে এই নিষেধাজ্ঞা ভবিষ্যৎ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে দুই বছরের মাথায় তুলে নেয়া যেতে পারে বলেও জানায় এডিবি।
এ ঘটনাটিকে বিভিন্ন গণমাধ্যম ‘দুর্নীতি’ বলে চালিয়ে দিচ্ছে। অথচ নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী কর্তৃপক্ষ-এডিবি নিজেও এখানে দুর্নীতির দালিলিক প্রমাণ পায়নি। সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি (CCGP)-এর পর্যবেক্ষণেও ওই প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি খুঁজে পায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অধিকন্তু, যেখানে ওয়াসার Estimated Cost থেকে সর্বনিম্ন দরদাতা-১ ও সর্বনিম্ন দরদাতা-২ এর দরপ্রস্তাব প্রায় ৭৫ কোটি টাকা কম এবং কাজ পাওয়া সর্বনিম্ন দরদাতা-৩ থেকেও প্রায় ৪৫ কোটি টাকা কম, সেখানে কম দরপ্রস্তাবকৃত দরদাতা প্রতিষ্ঠান তাহলে কীভাবে দুর্নীতি করে? আর সেই সুযোগেও আন্তর্জাতিক দরপত্রে আদৌ নেই।
পুরো প্রক্রিয়াটি মূল বিডারদের বিষয়। এখানে Sub-Contructor বা লোকাল এজেন্টদের কোনো ভূমিকা নেই। বিডার কাজ পেলে Sub-Contructor কে কাজ দিতেও পারে, নাও দিতে পারে। কাজ দিতে হলে ওয়াসার অনুমোদনও লাগবে। অনুমোদন সাপেক্ষে কাজ দিলেও শুধু কনস্ট্রাকশনের কাজই Sub-Contructor করতে পারবে।
যেখানে মূল বিডারই কাজ পায়নি, সেখানে Sub-Contructor এর দুর্নীতির প্রশ্ন আসে কী করে? তাহলে প্রকাশিত সংবাদগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, কোনো একটি মহল প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে নীলসাগর গ্রুপের ওপর অন্যায় ও অনৈতিকভাবে কথিত দুর্নীতির দুর্নাম চাপিয়ে দিচ্ছে এবং গ্রুপের সুনামকেও হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে।
নীলসাগর গ্রুপ দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে ২০ বছর ধরে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১০ হাজারেরও বেশি লোক কর্মরত। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নেও রয়েছে এই শিল্পগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অবদান। অথচ পুরো গ্রুপকে জড়িয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ প্রচারে সুদূরপ্রসারী কোনো ষড়যন্ত্র কিনা- তা নিয়েও কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
নীলসাগর গ্রুপকে নিয়ে ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য গণমাধ্যম কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মীরা। নীলসাগর গ্রুপ এর জোর প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং প্রকৃত সত্য অনুসন্ধানের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে বিনীতভাবে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।