ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ডিজেএফবির সংলাপে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী

রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে স্বস্তি, চাঙ্গা হচ্ছে অর্থনীতি

# কমে আসছে মূল্যস্ফীতি # চালের বাজার প্রতারণামূলক # আইএমএফ ঋণের সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই # সুশাসনে অদক্ষতা থাকতে পারে কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
🕐 ৬:১৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩

রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে স্বস্তি, চাঙ্গা হচ্ছে অর্থনীতি

অর্থনীতি উত্তাল সময় পার করছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলেও বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েনি। সুশাসনে অদক্ষতা থাকতে পারে কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমে আসছে এবং অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠছে। প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয় ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। গত জুলাই-ডিসেম্বরে প্রবাসী আয় ছিল ১০.৪৯ বিলিয়ন ডলার এক মাসের ব্যবধানে জুলাই-জানুয়ারিতে হয়েছে ১২.৪৫ বিলিয়ন ডলার।

রপ্তানি আয় গত জুলাই-ডিসেম্বর ছিল ২৭ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার, এক মাস যোগ করলে ৩২ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন। তার মানে প্রবাসী ও রপ্তানি আয় বড় ধরণের জাম্প করেছে। রিজার্ভ ধীরেধীরে ইতিবাচক দেখা যাচ্ছে। আইএমএফ ঋণ না দিলেও আমাদের ভর্তুকি কমাতে হতো এবং কিছু দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়াতে হতো। ফলে আইএমএফ এর ঋণের সঙ্গে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই।

 মঙ্গলবার নগরীরর শেরে বাংলানগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে ডেভলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ডিজেএফবি) উন্নয়ন সংলাপে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলম এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সমসাময়িক অর্থনৈতিক সংকট ও উত্তরণের উপায়, আইএমএফের ঋণ ও অর্থনীতিতে এর প্রভাব, উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদনে বাড়তি সতর্কতা, জনজীবনে মূল্যস্ফীতির প্রভাব, নির্বাচনী বছরে অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি প্রভৃতি বিষয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। ডিজেএফবির সাধারণ সম্পাদক সাহানোয়ার সাইদ শাহীনের সঞ্চালনায় উন্নয়ন সংলাপে সভাপত্ত্বি করেন ডিজেএফবি সভাপতি হামিদ-উদ-জামান।

আইএমএফ ঋণের সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আইএমএফ ঋণ না দিলেও আমাদের কিছু কিছু জায়গায় দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো। আইএমএফ আমাদের মোট জিডিপির তুলনায় যে ঋণ দিয়েছে সেটা পরিমাণ খুবই কম। আইএমএফ ঋণ না দিলেও আমাদের ভর্তুকি কমাতে হতো এবং কিছু দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়াতে হতো। সুতরাং আইএমএফ এর ঋণের সঙ্গে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই।

পণ্যের দাম বৃদ্ধির শর্ত আইএমএফ-এর ঋণে নেই। যা চেয়েছি তার থেকে বেশি পেয়েছি। আমাদের সার্বিক অর্থনীতির প্রতি আইএিএফ আস্থাশীল বলেই ঋণ দিয়েছে। ঋণ দিতে পেরে আইএমএফ খুব খুশি। পাকিস্তান এখনো আইএমএফ ঋণ পায়নি কিন্তু আমরা পেয়েছি মানে বেশিই পেয়েছে।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, চালের বাজার পুরো প্রতারণামূলক। ফলে বাজার ব্যবস্থাকে সংস্কার করতে হবে। যে নামে চাল তৈরি হয় তা ব্যাগের ভেতরে থাকে না। স্বর্ণা চাল মোটা এটাকে চিকন করে পূষ্মমতি নামে বিক্রি করা হয়। মোটা চাল চিকন করে। যে নামে চাল সেই নামে চাল বিক্রি করতে হবে। চালের বাজার প্রতারণা চলতে দেওয়া যায় না এটা বন্ধ করা হবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, পলিশ করে চাল ফেলে দেওয়া হয়, চাল পলিশ করে এটা চিকন করে। চালের বাজারে প্রতারণা চলতে পারে না। কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কিনে এনে চিকন চাল তৈরি করা হয়। তিনটা মেশিনে পার করে মোটা চাল চিকন করে। এই বিষয়ে দ্রুত পক্ষেপ নেওয়া হবে। চালের প্রকৃত পুষ্টি চালের উপরের স্তরে থাকে অথচ এটা ছেটে ফেলে দেওয়া হয় এটা চলতে পারে না।

দেশে বৈষম্য কমছে দাবি করে তিনি বলেন, বৈষম্য সব দেশেই বাড়ে। সামাজিক বৈষম্য কমাতে আমরা কাজ করছি। আমরা আড়াই কোটি মানুষকে সাহায্য দিয়েছি। বিনামূল্য বই দিয়েছি বৈষম্য কমিয়ে রাখার জন্য। ২০৪১ সালে কুড়ে ঘর মিউজিয়ামে রাখতে হবে। সবার হাতে মোবাইল ঘরে কালার টিভি, কারোর পা খালি আছে? তার মানে বৈষম্য কমছে। বৈষম্য কমাতে গিয়ে আমরা নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি।

মূল্যস্ফীতি কখনো পূর্বের অবস্থায় ফেরে না বলে জানান পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ, গত বছরের (২০২২) জানুয়ারি মাসে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। নানা কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়তেই থাকে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, উৎপাদন উপকরণের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। এর ফলে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৯ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছিল। গত এক বছরে ৪৬ শতাংশ বেড়েছে। তবে কয়েক মাস ধীরে ধীরে কমে আসছে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মজুরি হারও বৃদ্ধি হচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মজুরির হার বেড়ে ৭ দশমিক ০৬ শতাংশ হয়েছে, গত বছরের জানুয়ারি মাসে ছিল ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ। মজুরি ভালোই বেড়েছে।

তবে মূল্যস্ফীতি পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায় না। কারণ উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। গরুর ফিড ও পোল্ট্রি ফিডের দাম অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি পরিবহন খরচও বেড়েছে। সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে এক কেজি ওজেনর দাম এখন ২৭০ টাকা। ডিমের দামও বাড়তি। তবে শাক সবজির দাম সহজ আছে।

দেশের আর্থিক প্রসঙ্গে ড.শামসুল আলম বলেন, গত এক মাসে রেমিটেন্সের ভালো লক্ষণ দেখতে পারি জুলাই-ডিসেম্বর রেমিটেন্স এসেছিল ১০ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার অথচ জানুয়ারি মাসে যোগ করলে বেড়ে দাঁড়াবে ১২ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। রিজার্ভ গঠনে প্রবাসী আয় ও এক্সপোর্ট ভূমিকা রাখে। এক মাসে দুই বিলিয়নের বেশি রেমিটেন্স এসেছে।

গত এক মাসে রিজার্ভও ইতিবাচক। রিজার্ভের তথ্য এখন অনেক ইতিবাচক। রিজার্ভ ধীরেধীরে ইতিবাচক দেখা যাচ্ছে। রপ্তানি জুলাই-ডিসেম্বর ছিল ২৭ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। এক মাস যোগ করলে ৩২ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন। তার মানে এক মাসে রপ্তানি আয়ে বড় ধরণের জাম্প করেছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা ইমপোর্ট নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছি, ইমপোর্ট কমে গেলে সমস্যা আছে। গত মাসে ইমপোর্ট বাড়তি এটা খারাপ না। কারণ অনেক পণ্য তৈরির জন্যও ইমপোর্ট জরুরি, যেমন আরএমজি।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন ডিজেএফবির সহ-সভাপতি মাসুম বিল্লাহ, যুগ্ম সম্পাদক মফিজুল সাদিক, অর্থ সম্পাদক সাইদ রিপন, দপ্তর সম্পাদক এম আর মাসফি প্রমুখ।

 
Electronic Paper