ঢাকা, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কবির কল্পনার জগত বিশাল

শারমিন সুলতানা রীনা
🕐 ৩:১৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ০১, ২০২১

কবির কল্পনার জগত বিশাল

প্রতিটি মানুষের মধ্যে থাকে একেক রকম অনুভূতি। কিন্তু সবাই সে অনুভূতিকে সমানভাবে প্রকাশ করতে পারে না। যিনি পারেন তিনি তার অন্তরের সব নির্যাস ঢেলে দেন লেখায়। শব্দের বিন্যাসে সৃষ্টি করেন বাক্য। সে বাক্য হয়ে ওঠে কবিতা। সব বাক্যই কবিতার রূপ পায় না।

কবিতা হতে হলে তাকে হতে হবে সুশৃঙ্খলিত আবেগ অনুভূতি এবং প্রতিবাদেরও প্রতীক। জীবনে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনাকে গভীরভাবে উপলব্ধি করা একজন কবির বড় কাজ। তাকে হতে হবে নির্লোভ, স্বার্থহীন। থাকতে হবে সমাজ রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতা। আর এ দায়বদ্ধতা থেকে একজন কবির অন্তর থেকে উৎসারিত শব্দ ছন্দ মাত্রা তাল লয়ে একটি বিশাল ঘটনাকে বেঁধে ফেলেন কবিতার ফ্রেমে। জীবন ও পারিপার্শ্বিক ঘটনাকে কল্পনার রঙে কবি কবিতা লেখেন। কবির কল্পনার জগত বিশাল ও ব্যাপ্তিময়। তিনি যা দেখেন ও অনুধাবন করেন তাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে লিখে একটি মনোমুগ্ধকর কবিতা রচনা করেন। নীরব প্রকৃতির মাঝে কবি নিজেকে আবিষ্কার করেন প্রতিনিয়ত। পূর্ণিমার চাঁদ কবির কাছে কখনো ঝলসানো রুটি কখনো প্রিয় মুখের প্রতিচ্ছবি। একটি নিঃসঙ্গ পাখির একাকী উড়ে যাওয়ার মধ্যেও কবি নিজেকে আবিষ্কার করে লেখেন আনন্দ-বেদনার কাব্য। নদীর সঙ্গে করেন জীবনের তুলনা। জীবনের প্রতিটি ঘটনা মাধুর্যম-িত করে সাদা কাগজে কালির আঁচড়ে লিখে কবিতার প্রাণ আনেন। আমরা কবিতাকে দেখি শাসকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাইলফলক। একটি কবিতা হতে পারে কোনো সমস্যার সমাধানও। একটি সুন্দর কবিতা সমাজের দর্পণ।

নারী মানেই নদী
তোমাকে ভেবে কাল রাতে আমার ঘুম হয়নি
একাকী হেঁটেছি উঠোনজুড়ে।
চাঁদের সিঁড়ি বেয়ে জোছনা ঢেউ খেলে গেছে
সোনামুখী সুইয়ের মতো
বিন্দু বিন্দু বৃষ্টির ফোঁটায় বিদ্ধ হয়েছি
যেন পরম প্রশান্তিতে তোমার ছোঁয়া।
স্বপ্ন ছুঁয়ে গেছে নীল নক্ষত্র
তুমিও যেন এক নীল বর্ণের প্রজাপতি
ভাবনার সাথে মিশে থাকা এক অচেনা অনুভূতি।
আমাকে ছায়া দাও,
শাড়ির আঁচল হয়ে ঢেকে দাও শরীরের ভাঁজ।
আজন্মের তৃষ্ণা মেটাতে হও জলের ধারা।
তুমি সাগর না হলে নারী জনম আমার বৃথা
নারী মানেই নদী
যে কেবলই ছুটে চলে সাগরের পানে।

এক নগরের অসভ্য ইতিহাস

স্বপ্নভাঙা এক নগরীর ইতিহাস খুঁড়ে
বের করে আনি প্রতœতাত্ত্বিক সুখ।
ইটের দেয়ালে খসে পড়া পলেস্তারা
কত নির্মাণ শ্রমিকের বেদনার ভাঁজ
কে রেখেছে কবে তার খোঁজ?
তারপরও খুঁজে ফিরি সভ্যতার ইতিহাস।
দেয়ালের রংয়ের মতো মানুষও ভোল পাল্টায়।
ভেতরটা থেকে যায় অজানা অচেনা।
যে সভ্যতায় গড়া বাহারি পাথরের ইমারত
ভেতরে তার ততটাই আদিম বন্যতা।
কারও অনাহারী চোখ চেয়ে থাকে
খোলা আকাশের পানে,
অন্যদিকে বদ্ধ দুয়ারের ওপাশে
কারও নির্লজ্জতার বশে
আদিম হিংস্রতায় মেতে ওঠে!
আমি যে শ্রমিকের লাজরাঙা বউ
তার অভাবের সংসারে প্রতিবাদ মিছিলে রূপ নেয়
শুধু একটি লোহার হাতুড়ি চাই
মুুহূর্তে সাইক্লোন হব।
আজ আমার কোনো গ্লানিবোধ নেই
যে সমাজে দুধের শিশু অনাহারী মায়ের স্তনে
দুধ না পেয়ে রক্ত চুষে খায়
বৈষম্যের এই নিরন্ন দেশে
আমি কারও রক্তচক্ষুর কাছে নতজানু নই।

জোছনা আবাস

আমার কবিতা তুমি ব্যথার ঐশ্বর্য
অন্তরে নীরবে আঁকি সুখের প্রণয়

হারিয়ে গিয়েও তবু রয়েছ নিকটে
বুকের ভিতরে কান্না জলের প্রপাত

অনাদি কালের স্মৃতি হৃদয়ে অক্ষত
নিবিড় চেতনা নিয়ে অনন্ত অপেক্ষা

প্রভাতে সোনালি আলো পাতার শরীরে
নতুন জীবন আনে কোমল লতায়

আঁধার আকাশে আনো জোছনা আবাস
প্রেমের কুসুমকলি ফোটাও জীবনে।

 
Electronic Paper