বিড়াল ও তার ছানা
উৎপলকান্তি বড়ুয়া
🕐 ২:০৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১
এ ঘর ও ঘর হেলে দুলে
দিন-রাত্রি মাস,
গৃহস্থের এক ঘরে বিড়াল
করে সুখের বাস।
সেই বিড়ালের দুইটা ছানা
তাদের দুটো সাথী,
চারজনাতে সকাল বিকেল
খেলায় মাতামাতি।
তাদের পাশের চারটা আরো
বন্ধু বিড়ালছানা,
তারাও এসে হেসে খেলে
তাধিন তা না না না।
সুর করে গায় গান, কখনো-
নাচে তাধিন ধিন,
আট বিড়ালের বন্ধু ছানার
কাটে মজার দিন।
চেয়ার টেবিল খাট পালংক
চার বারান্দা ঘরে,
দিন কাটে রোজ নেচে গেয়ে
দৌড় লাফঝাঁপ করে।
খায় ওরা রোজ দুধ মাংস
মাছের কাঁটা মুড়ো,
খেয়ে ঢেকুর তুলে লাফায়
তুত্ তুরো তুত্ তুরো!
এমন সুখের সুখী ওরা
এক ফোটা নয় মিছে,
রাত্রি কাটে দিবস কাটে
একই ছাদের নিচে।
এক সঙ্গেই থেকে ওরা
চুকায় খুশির পাঠ,
এক বেড়ালের ছানা এখন
সংখ্যায় ওরা আট।
একটা ঘরেই থাকে ওরা
একসাথে খায় খানা,
আট ছানাদের সবার এখন
একটাই ঠিকানা।
আটটি ছানা নিয়ে হঠাৎ
হিসাব না আর মিলে,
একটা সময় এসে বেড়াল
যায় পড়ে মুশকিলে।
টান পড়ে যায় মাংস কাঁটা
মাছের মুড়ো ভাতও,
ঠিক প্রতিদিন একই রকম
সমানও যায় না তো।
এত্তো খানা করতে জোগার
পারছে না তো নিজে,
আটটা ছানার মুখে তবে
দেবেই তুলে কী যে?
কী যে হবে ক্ষুধায় যখন
করবে শুরু কাঁদা,
যায় বিড়ালের ভাবনা বেড়ে
দু’চোখ জুড়ে ধাঁধাঁ।
বিড়াল অনেক ভেবে শেষে
উপায় পেল খুঁজে,
নিজে নিজেই আঁটে চুরির
ফন্দি দু’চোখ বুজে।
কেউ যেন না পায় কোনো টের
বুঝতেও না পারে,
সারতে হবে নিমিষে কাজ
একাই চুপিসারে।
‘যেই ভাবা সেই কাজ’ বেড়ালের
এগোয় নিজের মতো,
মিটসেফে আর সেলফে আহা
খানা শত শত।
শংকা বুকে এদিক সেদিক
তাকায় ভয়ের চোখে,
গৃহস্থ টের না পায় মতো
রান্না ঘরে ঢোকে।
মাছ কোনোদিন, কিম্বা মুড়ো
আস্ত দুধের হাড়ি,
সাবধানে খুব, যত্নে বিড়াল
সরায় তাড়াতাড়ি।
গৃহস্থ-চোখ ফাঁকি দিয়ে
চুপ্তে ফোকর-ফাঁকে,
বাহ ক’দিনেই রপ্ত করে
চুরির কৌশলটাকে।
চুরির খাওয়া গপ গপা গপ
রোজ তাতে নেই মানা,
খেয়ে দেয়ে পেট তো ভরায়
আটটি বিড়াল ছানা।
সরিয়ে দূরে রেখে মনের
ঠেলে সকল কাজ,
প্রায় প্রতিদিন এমনি বিড়াল
যায় করে তার কাজ।
একদিন যায় দুইদিন যায়
বেশ ক’টা দিন পর,
বুঝতে পারে গৃহস্থ ঠিক
কিচ্ছু এক গড়বড়!
সবার শেষে অবশেষে
ঢের হয়েছে ঢের,
চোর বিড়ালের ব্যাপারখানা
গৃহস্থ পায় টের।
ঠিক ঠিকই তাই হয় পাহারা
দিনে এবং রাতে,
যায় পড়ে যায় অমনি ধরা
বেড়াল হাতে নাতে।
গৃহস্থ যায় রেগে ভীষণ
মারমুখী হয় আরো,
বলল, বিড়াল তুমি আমার
আজই এ ঘর ছাড়ো।
হচ্ছি অবাক, ভাবতে আমি
পারছি না ধুত্তুরি,
বললে খেতে বাড়তি দিতাম
করলে কেন চুরি?
লজ্জা পেয়ে বিড়াল তখন
ভীষণ ভড়কে যায়,
মাফ চেয়ে সে লুটিয়ে পড়ে
গৃহস্থেরই পায়।
আপনি উদার প্রভু আমার
আপনার নেই তুল,
আমার মস্ত বড় রকম
ভুল হয়েছে ভুল।
কোনোভাবেই হয়নি তো ঠিক
আমার চুরি করা,
তাইতো অপরাধে নিজেই
পরেছি হাতকড়া।
চুরিতে পাপ হয়, পুণ্য
আমার তো নেই জমা,
তবু প্রভু আমার ভুলের
করেন যদি ক্ষমা!
আপনার অঢেল সকল কিছুই
আছে ভুরি ভুরি,
এবার তো দিন ক্ষমা করে
করব না আর চুরি।
বিড়াল করে জোড় মিনতি
জড়িয়ে দু’পা ধরে,
প্রভু মহান আজকে আমায়
দিন না ক্ষমা করে!
চুরি করার ফলেই আমি
পাপ করেছি পাপ,
আর হবে না ভুল কখনো
দিন না করে মাপ।
ঠিক বলেছ, চুরির ফল তো
মহা ভীষণ পাপ,
যুগে যুগে কষ্টে ভোগে
করবে অনুতাপ।
না বলে ঠিক নিলেই কিছু
তা হয়ে যায় চুরি,
অগোচরে নেয়ায় তো নেই
কোনোই বাহাদুরি।
ক্ষমা যখন চাইছ নিজের
ভুল বুঝতে পেরে,
তাই এবারের মতো না হয়
তোমায় দিলাম ছেড়ে।
করবে না তো কিছুই চুরি
আর কখনো শোনো-
আমার অঢেল আছে, তোমার
নেই চিন্তা কোনো।
ক্ষমা করেই দিলাম, চুরি
করবে না আর ভেবে,
যা প্রয়োজন লাগবে, আমার
কাছেই চেয়ে নেবে।
ভুল করো না আর তো, যাতে
পড়বে নিজে দুখে,
তোমার আটটা ছানা নিয়েই
থাকবে খাবে সুখে।
আপনি মহান, মহান উদার
আপনার নেই তুল,
দয়ার প্রভু কথা দিলাম
আর হবে না ভুল।
ভুলের ক্ষমা পেল বিড়াল
ভুলকে স্বীকার করে,
আট ছানারাও খেলছে সুখে
চার বারান্দা ঘরে।