অভিশপ্ত আবদার
জোবায়ের রাজু
🕐 ৩:৪৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৬, ২০২১
জানালা খুলে বাইরের দিকে তাকাতেই মিমির চোখ গেল খোলা আকাশের দিকে। আদিগন্ত জোড়া কালো মেঘের ঘনঘটা দেখেই সে বুঝতে পারল একটু পর ভুবন কাঁপিয়ে বৃষ্টি নামবে। কথাটা ভাবতে না ভাবতেই বেগতিক বৃষ্টি নামতে শুরু। জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকে মিমি। অতীতে ফিরে যায়। বিয়ের আগে এমনই বর্ষাকালে বৃষ্টিতে ভেজার একটি স্বাধীনতা ছিল তার। বৃষ্টি বড় প্রিয় মিমির।
তাই যখন তখন বৃষ্টিতে ভেজার ব্যাকুলতায় সে ঘরের বাহির হয়ে যেত। কিন্তু রনির সঙ্গে দুই বছর আগে বিয়ে হওয়ার পর জীবনের অনেকগুলো স্বাধীনতায় বিঘ্ন ঘটেছে। ঘরের বউদের যে হুটহাট যখন যা ইচ্ছে তা করা যায় না, শাশুড়ি সেটা রোজ-দিন ইশারা ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেন। তাই বৃষ্টিতে ভেজার আকুলতাকে বুকে চেপে ধরে মুখে বিষণতার মেঘ ডেকে আনে। এই বিকেলের অঘোর বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে হচ্ছে মিমির। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা যে সেটা সহজ চোখে দেখবে না। রনি মিমির পাশে এসে দাঁড়ায়।
আহ্লাদি গলায় বলে, ‘চলো, বৃষ্টিতে নামি।’ চোখ দুটো চকচক করে ওঠে মিমির। এই মানুষটা কী করে যে তার ইচ্ছা অনিচ্ছার অনুভবগুলো অনায়াসে ধরে ফেলে। বড় রোমান্টিক মানুষটা।
ছাদে চলে যায় রনি আর মিমি। ভিজতে থাকে দুজনে। ভেজা নীল ফতুয়ায় রনিকে সুন্দর লাগছে। বৃষ্টিতে ভেজার উন্মাদনাকে পরোয়া না করে মিমি নিজের মানুষটাকে দুই চোখে অনুরাগ মেখে দেখছে। মানুষটা যে এত সুন্দর, আজই যেন তার চোখে ধরা পড়েছে।
চুল থেকে বেয়ে পড়া বৃষ্টির পানি দু’হাতে সরিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রনি বলল, ‘চলো বাসায় যাই। এখনই সন্ধ্যা নামবে। বেশি ভিজলে আমার আবার জ্বর সর্দির ভয় আছে।’
মিমি উৎকণ্ঠে বলল, ‘তোমাকে সুন্দর লাগছে গো। একটু অপেক্ষা করো, আমি মোবাইল ফোনটা নিয়ে আসি। এই বেশে তোমার কয়েকটা ছবি তুলি।’
রনি মৃদু আপত্তি তুলে বলল, ‘না না। পারব না। ঠাণ্ডায় কাঁপুনি দশা শুরু।’
মিমি অভিমানী সুরে বলল, ‘আমার এই আবদারটুকু রাখো। দোহাই!’
রনি আর নিষেধ করে না। রাজি হয়ে গেল। বৃষ্টি পড়া ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে রইল আর মিমি মোবাইল ফোন আনতে নিচে চলে গেল।
মোবাইল ফোনটা হাতে নিতেই বাইরে এক ভয়াবহ বজ্রপাতের বিকট শব্দে চমকে গেল মিমি। এমন বজ্রপাতের শব্দ আগে আর শোনেনি। মনে হচ্ছে আশপাশে কোথাও পড়েছে বজ্রপাতটি।
ছাদে এসে এক অঘটনের মুখোমুখি মিমি। রনি লুটিয়ে পড়ে আছে। সারা শরীর ঝলসানো। বজ্রপাতটা যে তার গায়েই পড়েছে!
মিমি গলা ফাটিয়ে চিৎকার দেয়। বৃষ্টি যেন আরও বাড়তে থাকে। রনির লাশের কাছে ছুটে আসে মিমি। তার ছবি তোলার আবদার যে এভাবে অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে, বুঝতে পারেনি। বৃষ্টির গতি বাড়ছে তো বাড়ছেই।