ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কবিতা হাতে ফেরা বংশীবাদক

হিরণ্ময় মালাকার
🕐 ৩:৪২ অপরাহ্ণ, জুলাই ০২, ২০২১

কবিতা হাতে ফেরা বংশীবাদক

চলতি বছরের পহেলা আষাঢ়ে বের হলো কবি আহমেদ তানভীরের চতুর্থ কবিতার বই ‘আষাঢ়িকা’। বরাবরের মতো এ বইতেও শব্দের দারুণ কারুকাজ দেখিয়েছেন কবি। এবারের আয়োজন পঁয়ত্রিশ পর্বের সিরিজ কাব্য।

আগাগোড়া ভালোবাসায় মোড়ানো কথামালা দিয়ে সাজানো হলেও জীবনের গভীর বোধ সুস্পষ্ট প্রায় প্রতিটি পর্বে।

দেড় যুগের অধিককাল ধরে যদিও লিখছেন, আহমেদ তানভীরকে পড়ার সুযোগ হয়েছে অল্প কয়েক বছর হলো। শুরুতে আঞ্চলিক ভাষার কবিতা, এরপর মিশ্র স্বাদের আধুনিক কবিতা; এবার প্রকাশ হলো বিষয়াবদ্ধ সিরিজ কবিতা। তবে এ কথা বললে নিশ্চয়ই অত্যুক্তি হবে না- তানভীর জীবনকে যেমন দেখেন তৃতীয় নয়নে, ঠিক তেমনই শব্দ নিয়ে খেলতেও জানেন বেশ। উপমা, অলংকার, দ্বিরুক্ত শব্দ আর অনুপ্রয়াসের যথার্থ ব্যবহার তানভীরের কবিতাকে নিয়ে যায় অনন্য উচ্চতায়। কিছু যূথবদ্ধ শব্দ যেমন- ‘দিগন্তরঙ শাড়ি’, ‘সঙ্গ-তিয়াস’, ‘জলহাওয়াভোর’, ‘কাঁপুনিবেলা’, ‘সাদাচুলবেলা’ পড়তে গেলে ভিতরে শিহরণ লাগে। যেন আলপথে হেঁটে যাওয়ার কালে নতমুখ শস্যছড়ার আদুরে ছোঁয়া। মনে হয় হ্যামিলনের বংশীবাদক আবার ফিরেছে পুনর্জন্ম নিয়ে, হাতে তার ‘আষাঢ়িকা’ নামক কবিতাগ্রন্থ। পড়তে পড়তে এগোতেই হয়, আগ্রহ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়; কী আছে পরের পর্বে!

মানবজীবনের নানা অনুষঙ্গ এমনকি মৃত্যুকেও ভিন্নরূপে প্রতিভাত করেছেন তানভীর তার কবিতায়- ‘মৃত্যুর কায়া কেমন? সে যেন এক শেকলছেঁড়া কালো ঘোড়া।/ তার খুরের আওয়াজে প্রায় রাতেই ঘুমাতে পারি না।/ মৃত্যুর ঘ্রাণ কেমন? খুব শুঁকে দেখতে ইচ্ছে হয়।/ নিত্যখরচ বাঁচিয়ে আলগোছে কিনে আনি আগরবাতি-গোলাপজল।/ তাকে আহ্বান করি অভিসারে।’ (আষাঢ়িকা : পঁচিশ)।

‘আষাঢ়িকা’ মূলত প্রেমের কাব্য, প্রতিটি পর্বের পাঠ মনোযোগী পাঠকের সম্মুখে তুলে ধরে এক নিবেদিত প্রেমিকের অবয়ব, যে তার ভালোবাসার জন্য জীবনের নির্মম বাস্তবতাকে অবলীলায় পাশ কাটিয়ে যেতে প্রস্তুত- ‘তোমার মুখ মনে এলে/ মৃত্যুর পশ্চাতে পদাঘাত করে শুয়ে থাকি জীবন-জীবিকার নাগরদোলায়।’ (প্রাগুক্ত)।

তানভীরের ‘আষাঢ়িকা’ কাব্যগ্রন্থ একদিক থেকে কিছুটা গ-িবদ্ধ। বইটি নির্দিষ্ট বিষয়-বলয়ে লেখা, ফলে কবির নানা মেজাজের লেখার বৈচিত্র্য থেকে এখানে পাঠককুল কিছুটা বঞ্চিত হলো বোধকরি। তবু পাঠ শেষে এটুকু উপলব্ধি হয়েছে, ‘আষাঢ়িকা’ বারবার পড়ার মতো একটি বই। এর অনেক চরণই দীর্ঘদিন পাঠকের হৃদয়-প্রকোষ্ঠে টিকে থাকার ক্ষমতা রাখে। বইটির পাঠবহুলতা আন্তরিকভাবে প্রত্যাশিত।

 
Electronic Paper