নিজেকে আজীবন সাহিত্যের ছাত্র ভাবি
এনাম রাজু
🕐 ৩:২৩ অপরাহ্ণ, জুন ২৫, ২০২১
সাহিত্য কী আর তার উৎস কোথায় তখনো জানা হয়নি। বিশেষ আগ্রহও ছিল না। তবে শুরুটা হয়েছিল নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন। হঠাৎ করে বাংলা শিক্ষক গল্প, কবিতা বা ছড়া লেখার আহ্বান করেন। ক্লাসে বসে সেদিনই প্রথম ছড়া লিখি। তখনো ছড়া লেখার কৌশল জানা ছিল না।
জানা ছিল না রূপ, রস, ছন্দ ও অলঙ্কার কী! তবে অন্ত্যমিলকে ছন্দ মনে করতাম। আর বিষয়টা মাথায় রেখে প্রথম ছড়া লিখি। বাংলা শিক্ষক ছড়াটি পড়ে শুধু প্রশংসাই করেননি ছড়াটা একটি পত্রিকায় পাঠিয়েও দেন। সেই উৎসাহে কয়েক সপ্তাহে বেশ কিছু ছড়া লিখলেও পরবর্তী দু’বছর আর লেখালেখি হয়নি। ইন্টারমিডিয়েট পড়াকালীন কিছু গল্প লেখা হলেও তা সংরক্ষণ করিনি। পরবর্তীকালে লেখালেখির চিন্তা করে অনার্সে বাংলা বিষয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নিই। অনার্সের প্রথম ক্লাস থেকেই শিক্ষক হিসেবে পাই ড. তুহিন ওয়াদুদ স্যারকে। তার কাছেই প্রথম ছন্দবিষয়ক ধারণা পাই। তিনি বেশ কিছু বইয়ের নাম লিখেও দেন। এরপর থেকেই সাহিত্যের প্রতি বিশেষ টান সৃষ্টি হয়। নিজেকে আজীবন সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে ভাবতে শুরু করি। ধীরে ধীরে কবিতার প্রতি বিশেষ আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। শুরু হয় পড়ালেখা। দীর্ঘ ছয়-সাত বছর কবিতা ও কবিতাবিষয়ক প্রবন্ধ পড়ার পর প্রথম কবিতা লিখি।
আগামী সূর্যদিবস
ডান চোখ যখন বাম চোখকে চেনে না
তখন এক পা আরেক পা’কে পিছনে ফেলতে
অবিরাম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত
তাদের সঙ্গ দিতে হাত দুটি নড়েচড়ে ইচ্ছেমতো...
মেরুদ-ের জরুরত কেউ অনুভব করে না
অনুভূতিতে নেই লবণাক্ত জলের প্রয়োজন।
কতটা দরকারি কী হিসাব হয়নি এতদিন
সে হিসাবের নকশা করবে-
প্রথম আলোর ঠোঁটে চুম্বন এঁকে আগামী সূর্যদিবস।
দেয়ালে বন্দি
যে মুখে শুনতে পাই কামানের গর্জন
সে মুখেই আবার শান্তি আহ্বান!
সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয়ে তাই
বারবার ভুল হয়ে যায়।
ছলনার ঘরে বন্দি আমি ও পৃথিবী
যার দেয়ালের একপাশে আল্লাহ
অন্য পাশে শয়তান।
ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া
আজকাল জানালা গলে রোদ এলে আঁতকে উঠি
ভয় পাই জোছনাকুমারী উঁকি দিলে সদর দরজায়
আমি ভীষণ ভীতু, বিড়ালকে দেখলে লোম দাঁড়ায়।
আমার সবচেয়ে পছন্দের খাবার মানুষ
সেই মানুষও প্রতিশ্রুতি দিলে শিউরে ওঠে মন
যাকে ভালোবাসি, সে প্রত্যাখ্যান করেছে জেনে
একহাজার বছর নারী সঙ্গ ত্যাগ করার জিদ ধরেছি
আমৃত্যু কবুল বলব না বি-লিঙ্গের কাউকে
তার জন্য অপেক্ষা করব সূর্যের বয়স নিয়ে,
গতরাতে সেও বত্রিশ বসন্তে জমানো পুষ্প হাতে
কড়া নেড়েছিল সদর দরজায়! ফিরিয়ে দিয়েছি।
ফিরিয়ে দেয়ার অভ্যাস রপ্ত করার সৌন্দর্য সকলে জানে না
অন্তরঙ্গ গ্রহণ কিংবা ফিরিয়ে দেওয়া শিখতে হয়।
সব করেছি, সবকিছুর বিপরীত ক্রিয়া আছে জেনে...
সেতু
একটা চোখ বন্ধ করলে পাখির মতো উড়ি
একটা চোখ বিকল হলে আকাশজুড়ে ঘুড়ি।
একটা হাত এগিয়ে দিলে নদী হয়ে যাই
সকল বাধার পিলার ভেঙে মিলনগীতি গাই।
প্রণয়জ্বরে ছুঁয়ে দিলে পিরামিড বয়স পাই
বেঁচে থাকার সকল রসদ সিয়াম ভেঙে খাই
এমনি করে তোমায় ভাবি তোমার মাঝে আজ
আসা-যাওয়ার সেতু বানাই এটাই পরম কাজ।