ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মৃত্যু

সেলিম খান
🕐 ২:১৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৯, ২০২১

মৃত্যু

আমি এখন আমার বিলাসবহুল বাড়ির বাইরের বারান্দায় এটা চারকোনা বাক্সের মধ্যে সাদা কাপড়ের ভিতরে অবস্থান করছি। আমি জীবিত না মৃত বুঝতে পারছি না। একধরনের ঘোর কাজ করছে আমার ভিতরে। আমার স্ত্রী আর পুত্র কান্নাকাটি করছে। কে একজন আমার স্ত্রীকে বলল, ‘তোমার স্বামী তো একটা নাস্তিক, কাফের ছিল। আর কাফের মারা গেলে দুনিয়ার উপকার। তাই ওর লাইগা কাইন্দা কোনো লাভ নাই।’ কথাটা শুনে আমার খুব আনন্দ লাগছে, তার কারণ গালি শোনার মাঝেও অনাবিল আনন্দ আছে। ‘যে জীবনে যত বেশি গালি শোনে তার জীবন তত বেশি আনন্দময়’। আমি গালি শুনে আনন্দ উপভোগ করছি। 

কোনো এক বইয়ে পড়েছিলাম মৃত মানুষের অনুভূতি বলে কিছু থাকে না। কিন্তু আমি আনন্দ অনুভব করতে পারছি তাহলে কি আমি মৃত নই? আমি বোধহয় এখন কোয়ান্টাম ফিজিক্স/ কেমিস্ট্রির মজাদায়ক সম্ভাবনার জগতে অবস্থান করছি। আমার জীবিত কিংবা মৃত হওয়ার সম্ভাবনা অর্ধেক-অর্ধেক। আমার ভিতরে একজন জীবিত মানুষের মতো অনুভূতি কাজ করছে কিন্তু পার্থক্য এই, নিজের ওপর আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আমি শুনছি, দেখছি, অনুভব করছি কিন্তু কিছু বলতে পারছি না। তবে অনেক সময় যা দেখতে চাই না তাও আমাকে দেখা লাগছে। আবার যা দেখতে চাই তা দেখতে পারছি না। এটা অবশ্য খুবই বিরক্তিকর বিষয়। আমাকে এখন সবাই গোরস্থানে নিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য সবাই না মেয়েরা বাদে। এক্ষেত্রে অবশ্য মেয়েদের সমান অধিকার নিশ্চিত করা বলতে গেলে সমান অধিকার দেওয়া হয়নি। এখন আমার পিছনে যে পরিমাণ লোক দেখছি আমার বিয়েতেও এ পরিমাণ লোক আসেনি। ও সরি! এত লোক তো দাওয়াতই করা হয়েছিল না, এখন যুগ বদলে গেছে তাই দাওয়াত না দিয়ে কেউ আর আসে না। তবে যদি একজনকে দাওয়াত দেওয়া যায় তাহলে সারা বংশের লোকের জন্য খাবার সে নিয়ে যায়। এখন একইসঙ্গে যুগ এবং মানুষের স্বভাব দুটিই বদলেছে। তবে হুমায়ূন আহমেদের একটা বইতে পড়েছিলাম ‘বিয়ে ও মৃত্যু এমন একটি শুভ বিষয় যে, এই দুইদিনে যত কাছের-দূরের, আপন-পর সব আত্মীয়ের মিলন ঘটে’। কথাটা অবশ্য শতভাগ সত্য। আরে আমার স্মৃতিশক্তি তো এখনো মজবুত।

আমি ড. এমরান হোসেন। কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। কোনো এক বইতে পড়েছিলাম মৃত মানুষের স্মৃতি বলে কিছু থাকে না। কিন্তু আমার তো স্মৃতি রয়েছে, তাহলে কি আমি মৃত নই। আমাকে এবার একটা কবরের পাশে রাখা হলো। আমি ভাবছি আমাকে যদি এর ভিতরে রাখে তাহলে আমি বাইরের জগৎ দেখব কীভাবে? সবাই আমাকে দাফন করে চলে গেল। আমি দেখছি কবরের মাঝে কি অন্ধকার যেন ব্লাকহোলস। হঠাৎ কেন জানি খবরটা আলোকিত হতে শুরু করল। এবার আমার স্মৃতি, আমার ভাবনা, আমার দেখা সব গোলমাল হয়ে যেতে শুরু করল। কোথা থেকে একগুচ্ছ আলো ছুটে আসতে লাগল। আর আমি সেই ফোয়ারার উৎসের দিকে দৌড়াচ্ছি, কী এক অজানা অনন্ত আকর্ষণ শক্তি আমাকে টানছে সেই আলোর ফোয়ারার দিকে!

 
Electronic Paper