বিমূর্ত, স্বতঃস্ফূর্ত শব্দ ও রূপকল্প
মঈনুস সুলতান
🕐 ১:০৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২১
জলাশয়ে ফুটে ওঠা শাপলার মতো আমার এলোমেলো ভাবনার সঙ্গে কীভাবে যেন কবিতার প্রসঙ্গ মিলেমিশে আছে, একটি থেকে অন্যটিকে বিচ্ছিন্ন করা খুবই মুশকিল। আর এ নিয়ে ভাবলেই স্মৃতির ছোট্ট হাঁস যেন জলজগুল্মের ভিতর দিয়ে এঁকেবেঁকে ভেসে... ডুবসাঁতারে বয়সের অতল থেকে তুলে আনে শ্যাওলামাখানো শামুক। মনে পড়ে, খুব ছোটবেলা ছনে ছাওয়া নির্জন এক বাংলাঘরের অন্ধকার কোণে অযত্নে ফেলে রাখা ভাঙা পালকির জানালার নকশার দিকে তাকিয়ে পেয়েছিলাম চমৎকার কিছু পঙ্ক্তি। মনে হয়, আমারই অবচেতনের একটি অংশ থেকে গেছে ‘আনস্পোকেন’, এ না বলা বিষয়টিকে অনুভব করি, মনে হয় বিমূর্ত, কখনো স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেরিয়ে আসে তা শব্দে... রূপকল্পে, প্রকাশিত হয় ভাবে, ভালোবাসায়, ছন্দনিবিড় গল্পে।
চাওয়া ও পাওয়া
কৈশোরে একবার নৌকার পাটাতনে দাঁড়িয়ে
দেখেছিলাম- হাকালুকি হাওরে সূর্যোদয়,
নাগচাঁপার পাপড়ি মেলার মতো এ স্মৃতিপট
মনের মেহরাবে হয়ে আছে অক্ষয়,
জলছোঁয়া দিগন্তজুড়ে ফুটে ছিল পুষ্পিত ভোর
তেঁতুলতলায় ছায়ারূপসীর সান্নিধ্যে
কেটেছিল রহস্যময় দুপুর।
মাঝে-মধ্যে ইচ্ছা হয় রাতের ইসটিমারে চেপে
চলে যাই ফের বরিশালে,
ডেকচেয়ারে আধশোয়া- প্রভাতী আভায়
হাওয়া লাগবে জেলে নৌকার পালে,
তেমন অসামান্য কিছু নয় আজকাল আমার চাওয়া,
শুধু একবার মেঘনার পাড়ে বসে
দেখতে চাই- ভাটির তালাশে নদীটির বয়ে যাওয়া।
কঙ্কাল করোটির জীবাশ্মে
স্নায়ু আমার উদগ্রীব হয়ে থাকে
শিশিরের ইনতেজারিতে পুষ্পের কোরক,
কার ছায়া যেন দেখি আবছা দূর সড়কের বাঁকে
ধানখেতের আলে মাছের খোয়াবে বিভোর বক।
কখনো শুনি আঙিনায় মৃদু পদশব্দ
এখনই সিঁড়ি বেয়ে উঠে কড়া নাড়বে দোরে,
কে সে সহস্র যুগের সাধনালব্ধ
কাছে এসে অন্তরঙ্গতায় হেসে উঠবে জোরে;
কে যেন হারিয়ে গেছে- দূর অতীতে- অজানা বিশ্বে
এসেছে কী ফিরে সে আমার চন্দ্রমল্লিকাময় আঙিনায়,
শিশিরে ভিজেছে ঘাস- আদিম পাথর- দোআঁশ মৃত্তিকায়
আতশি কাচ হাতে তাকিয়ে থাকি কঙ্কাল করোটির জীবাশ্মে?
মানস সরোবরের তীর্থযাত্রী
অবচেতনে অশান্ত শ্রমণ এক
দড়ির সিঁড়ি বেয়ে নেমে যায় ইঁদারার গহনে,
বাজায় পিতলের পিরিচে- মৃদু ঘণ্টা
আলো আঁধারের সন্ধিক্ষণে,
বৃত্তের নকশায় সম্প্রসারিত হয় প্রতিধ্বনি
জলে ভাসে গ্রহ নক্ষত্রের প্রতিফলন,
রুপালি আভায় ঝলসে বলয়ের জেওর পরা শনি
শ্যাওলায় ফুটে উঠে সাবুজিক বৃষ্টিবন;
পাড়ের পরাক্রান্ত বৃক্ষের খোড়লে বসে চিন্তামগ্ন প্যাঁচা
কখন চরাচর নিকষ করে নামবে কাক্সিক্ষত রাত্রি
ক্র্যাচ তুলে নিয়ে কায়ক্লেশে হাঁটি,
হিমবাহে ছায়া পড়ে ভারবাহী জন্তুর- হরেক রসদে পরিপাটি
হয়তো একদিন আমিও হব- মানস সরোবরের তীর্থযাত্রী।