ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নিরিবিলি জোছনা

গোলাম মোর্তুজা
🕐 ২:৪০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ০৯, ২০২০

বুড়ো আকাশটা ঢঙ ধরে বসে আছে। মেঘগুলোও দৌড়ে দৌড়ে ক্লান্ত হয়ে জিরোচ্ছে। ঠিক তখনি আমাদের গাড়িটা ছাড়ল কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষা সফর প্রতিবারই হয়। প্রথমে অনেকেই যেতে না চাইলেও শেষ মুহূর্তে যাওয়ার উৎসাহ ও উত্তাপ বেড়ে যায়। তাই গাড়িতে সিট সংখ্যার চেয়ে যাত্রীর সংখ্যাই বেশি হয়েছে। সালিম স্যার সবাইকে একটু ম্যানেজ করে বসতে বললেন। রাত দুপুরে সব পেরিয়ে আমাদের গাড়ি চলছে। সালিম স্যার বললেন, ‘সব ঠিকঠাক আছে?’
বাইরে জোছনার লুটোপুটি। স্যারের কথায় মাথা উচিয়ে বললাম, ‘হ্যাঁ স্যার, ঠিক আছে।’

স্যার আবার বললেন, ‘কবির তুমি এখনো দাঁড়িয়ে কেন? জায়গা শেয়ার করে বসে পড়।’ স্যার নিজের স্থান থেকে ঝুঁকে ফিসফিসানি স¦রে বললেন, ‘ছেলেটির আজও লজ্জাবোধ কাটল না।’

বললাম, ‘আচ্ছা স্যার।’ আমার পাশের ডান সিটে শ্যামলিমা ও অঙ্কন। বামের সিটে রতœা ও জোছনা। সবাই ঘুমকাতুরে।

রাত অনেক হলো। শরীরটা পারছে না। চোখটা কিন্তু পারছে! হঠাৎ ভিতরের জোছনার আড়মোড় ভাঙল। ওর হাতটা আমার হাতে লাগল। জোছনা বলল, ‘কী রে তোর বসবার জায়গা হয়নি? বোস, এখানেই বোস!’ বলেই রতœাকে ধাক্কা দিল। রতœা আঁতকে উঠল। বলল, ‘এত রাতে কী যে করিস!’

বলে পাশ ফিরে আবার ঘুমাল। আমি বসব না। কিন্তু জোছনার হ্যাঁচকা টানে বসতেই ওর চেহারা শান্ত, স্নিগ্ধ আর মায়াময়। মসৃণ ও টলটলে চোখ। গাল দুটো মনে হয় পেইন্ট করা। আমি এখন পাথরের মতো নিরেট। জোছনার আবেশ সারা শরীরে তিরতির করে ছড়িয়ে পড়ল। জোছনা বলল, ‘আরামে বোস। এ রকম তেলাপোকা হয়ে কেন?’ গাড়ি চলছেই। নাগরদোলার সুখানুভূতিতে জোছনা আমার ঘাড়ে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে গেছে।

আমার মাথার গহিনে জোছনার আলো। ঘাড়ে থাকা ঘুমন্ত জোছনার মাথাটা সোজা করার চেষ্টা করছি। কিন্তু জোছনা আমার দিকে ঠিকরে পড়ছে।

দেখলাম, ওর পলকহীন চোখ নিরিবিলি নদীতীর হয়ে ঘুমিয়ে আছে। আমিও কিছুটা সময় ছাপোষা বিষণœতায় ঘুমিয়ে ছিলাম। যখন পাখির ডানায় একান্তে স্তব্ধতার অনুনাদ ভেঙে সূর্য নেমে এলো। তখন সবাই গাড়ি থেকে নেমে গেছে। আমাদের দুজনের জন্য রতœাও নামতে পারছে না। বলল, ‘কী রে তোরা এখনো ঘুমাবি নাকি? ওঠ’। বলেই জোছনার মাথায় ঠোকর দিল। দুজনে একসঙ্গে জাগলাম।

 
Electronic Paper