ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নিমাই বাবু, মেমসাহেব আমারও ছিল!

ইমরুল কায়েস
🕐 ১০:০৩ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ০৩, ২০২০

নিমাই বাবু ছিলেন ওপার বাংলায়, চলে গেলেন ওপারে! শুধু বেদনার ভাগটা দিয়ে গেলেন এপারে- আমাকে! আপনার মেমসাহেব তো দুই মলাট হয়ে বেঁচে থাকবেন কালোত্তীর্ণ হয়ে। আর আমার মেমসাহেব যে হারিয়ে গেল সময়ের শত্রুতায় কালের কৃষ্ণগহব্বরে...।

চলতি জুনের ২৫ তারিখ যখন শুনলাম নিমাই ভট্টাচার্য আর নেই! তখন মনে হল- আমাতে আমি নেই। অতি আবেগে আর দুঃখে এতটা হতবাক হয়েছিলাম যে টানা তিনদিন আর কোনো কাজে মন বসাতে পারিনি। মনে মনে এতটাই ডুকরেছি যে তাকে নিয়ে কয়েক চরণ লিখে পোস্ট বা পত্রিকায় পাঠাব সে শক্তিই পাইনি। কেননা তার মেমসাহেবের সঙ্গে আমারও একটি মেমসাহেবের নিখাদ গল্প আছে। শুধু গল্প না এ নিজের নিংড়ানো অনুভূতির কথা। এ নিছক লেখার ছলে লেখা না।

কেন জানি, এই তিনদিনে বারবার প্রশ্ন করতে মন চেয়েছে- আচ্ছা, নিমাই বাবু! মেমসাহেবকে অমন করে মেরে নাও ফেলতে পারতেন! সে জন্যই তো আমারো মেমসাহেবটা জীবিত থেকেও আমার জীবনে আর বেঁচে নেই।

পরিচয় পর্ব শেষে, পরিণয়ের শুরু থেকে তাকে ‘মেমসাহেব’ ও ‘পাগলি মেমসাহেব’ বলে ডাকতাম। সেই মেমসাহেব একদিন সুদূর ৩৩৫ কিলোমিটার দূরের জেলা শহর থেকে আমার জন্মদিনের উপহার হিসেবে কুরিয়ারে একটি হলুদ খাম পাঠিয়েছিল। শ্যামলী শাখা সুন্দরবন কুরিয়ার থেকে খামটি নিয়ে কৌতূহলের স্বাদ মেটাতে সোজা শ্যামলী শিশু পার্কের খোলা মাঠে কৃষ্ণচূড়ার নিচে বসে খুলতেই সুন্দর মোড়কে বেরিয়ে আসে সুন্দর প্রচ্ছদের মেমসাহেব, লেখক নিমাই ভট্টাচার্য!

মুগ্ধতার শেষ ছিল না তখন। আরে আমার পাগলি মেমসাহেব! মেমসাহেব নামের একটি বই পাঠিয়েছে। ভেতরে একটা অন্যরকম শিহরণ খেলে গেল। বইয়ের পেছনের পাতায় লেখা- ‘প্রিয় বুদ্ধরামকে, তার পাগলি মেমসাহেব’ তার পরেই লেখক নিমাই বাবুর বৃত্তান্ত। পরক্ষণে ভাবলাম বই তো অনেক পড়ি; এনার বই কেন পড়িনি? বা খোঁজ পাইনি! নিজেই নিজের কাছে লজ্জা পেলাম।

লেখক বৃত্তান্ত পরে দেখি কত কত কথাসাহিত্যের মালা তিনি গেঁথেছেন। একজন সাংবাদিক মানুষ হয়ে কত অসাধারণ সব সৃষ্টির তালিকা দেখে চোখ ছানাবড়া। সেই শুরু- নিমাই বাবুর মেমসাহেবের সঙ্গে আমার উপনয়ন।

সেই থেকে আমার দ্বৈত মেমসাহেব পরিভ্রমণ। টানা একদিনেই মেমসাহেব শেষ করে এমন বিভোর হয়েছিলাম অমন করে আর দ্বিতীয় বইয়ে হইনি। পড়ার সময় নতুন বই হিসেবে যে পাতাই পড়ি সেই পাতা যেন আমার গল্প বলে- এমন মনে হতে লাগলÑ আরে এ তো আমি! এ তো আমার কথা- আমার প্রেম; আমারই মেমসাহেব!

তারপরে নিমাই বাবুর অন্য বইগুলো একে একে সংগ্রহ করে পড়া শুরু করলাম। তখন থেকেই জীবন আমার নিমাইময়। পড়তাম আর ভাবতাম এমন করে কেমনে এত সুন্দর বয়ানে নিখুঁত জীবন তুলে ধরে! মাঝে মাঝে নিমাই বাবুর মেমসাহেবকে বাস্তবে দেখতে ইচ্ছে করত। তখন চলে যেতাম ঢাকা থেকে সেই ৩৩৫ কিলোমিটার দূরে আমার পাগলি মেমসাহেবের নীড়ে। এমন হত রাতের বাসে ঢাকা ছেড়েছি; সকালে দেখা করে, সন্ধ্যের বাসে ফিরেছি।

নিমাই বাবু, আপনিও চলে গেলেন! আমার পাগলি মেমসাহেবও আজ স্মৃতির মরীচিকা। শুধু রয়ে গেল আপনার মেমসাহেব আমার টেবিলে।

 
Electronic Paper