ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আবু হাসান শাহরিয়ার শব্দের বটবৃক্ষ

নাসিমা হক মুক্তা
🕐 ৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ০৩, ২০২০

‘প্রেম ও সারল্য’ মানুষকে চমৎকার একটি সম্পর্কের গাঁথুনিতে বেঁধে ফেলে। এই দুটো শব্দ মিলে স্বপ্নের অভিসারের মিলন ঘটলে অনুভবের জগতটা অষ্ট ধাতুর পরিম-লে আনন্দগুলো শব্দ, বর্ণ ও অস্তিত্বের যোগসূত্রে এক হয়ে মনের চৌকাঠে গড়ে ওঠে নিসর্গ আবাস। যেখানে ভালোবাসা নামক শব্দটি নদীর মতো তরতরিয়ে চর্তুদিকে শাখা-প্রশাখা ছড়ায়। তখন মানুষের কোমল মনের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করে তার কথামালার ছন্দে।

তখনই প্রতিটি মানুষ তার নিজস্ব চিন্তাভাবনার বহিঃপ্রকাশ থেকে কবি হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে সবাই যে কবি হয় তা নয়। কেউ কেউ অকবি, কেউ সার্থক কবি, কেউ রোমান্টিক বা কেউবা সাহিত্যসেবক হয়। তেমন একজন সার্থক কবি, রোমান্টিক কবি ও সাহিত্যের নিষ্ঠাবান প্রেমিক কবির নাম আবু হাসান শাহরিয়ার।

আবু হাসান শাহরিয়ারের সঙ্গে নদী ও প্রকৃতির দারুণ একটি সখ্য লক্ষ করা যায়। নদীর তীরবর্তী নির্মল হাওয়া তার কাব্যিক সত্তায় নিমগ্ন হওয়ার একটি সতেজ খোরাক। কবি যতটুকু প্রকৃতি থেকে শুষে নেন ততটুকু প্রকৃতিকে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। বর্ষা এলে হাঁটু গেঁড়ে বসে না থেকে অঝোর বৃষ্টিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন গাছ লাগাতে।
কবিকে দেখলে কঠিন স্বভাবের মনে হলেও আপাদমস্তক মানবিক মানুষ।

আবু হাসান শাহরিয়ার সমাজের অবচেতন দিকগুলো দারুণভাবে তুলে এনেছেন কবিতায়-
যখন আমার হাজার বোনের গোলাপ মুখে এসিড ঝরে
ঝলসানো মুখ নিয়ে আমার পঙ্ক্তি কাঁদে আর্তস্বরে।
অপদার্থ ভাইটি আমি, অস্ত্র তো নেই কাব্য ছাড়া
কেউ তাকে ভয় পায় না তবু শব্দ হাতে দেয় পাহারা।
(কাব্যগ্রন্থ- নিরন্তরের ষষ্ঠীপদী)

এই কবিতায় কবিকে ভাবিয়ে তুলেছে। মানুষের সমাজে মানুষ কত মূল্যহীন। এই মানুষ সমাজ পুরুষ ও নারী দু’শ্রেণিতে বিভক্ত করে পাষ- মানুষ। এখানে নারীকে খুব অবজ্ঞা ও ভোগবস্তু মনে করে পাষ- শক্তির বলয়ে ঝলসে যেতে হয়। হারাতে হয় অস্তিত্ব ও বেঁচে থাকার অধিকার। তাই কবি দুঃখ করে বলেছেন হাজার বোনের গোলাপ মুখ পুড়ে যায়।

কবি বলেন তিনি কবিতার ‘একার সন্ন্যাস’। কবিতা লিখতে গিয়ে কে কী বলল সেটা তোয়াক্কা করেন না।

কবির ভাষ্যে ‘দর্শক গৌণ কবিদের আশ্রয়’। এসব মাথায় নেননি বিধায় নিজেকে ভেঙেছেন উচ্চমাত্রায়। তিনি পুরোদমে সাহিত্যে নতুন আঙিকে বারবার এসেছেন নতুন ছন্দে, নতুন স্বরভঙ্গিতে ও চিত্রকল্পে।

গাছ নিধনকারী মানুষের বিপক্ষে কলম তুলেছেন বিভিন্ন আঙ্গিকে-
প্রাণের আদ্যকথা- গাছ,
প্রাণের প্রান্তকথা- গাছ
প্রাণের ঊর্ধ্বকথা- গাছ
প্রাণের নিম্নকথা- গাছ
প্রাণের মধ্যকথা- গাছ
প্রাণের অন্তঃকথা- গাছ

মানুষ হয়েও আমি তাই বৃক্ষবিনাশী মানুষের বিপক্ষে কথা বলি।
(গাছসূত্র, গ্রন্থ- এ বছর পাখিবন্যা হবে)।
‘বাংলাদেশ’ নামের কবিতাটি এমন স্পর্শকাতর শব্দের বিন্যাসে সাজিয়েছেন, পাঠক যতই পড়বে ততই নত হবে।
নিজের দেশকে আপন মেয়ের মতো তুলনা করে বিভিন্ন উপমা দেন- লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে, আহ্লাদী মেয়ে ও শান্ত মেয়ে।
নমনীয় ভাষায় কবিতাটি লিখেছেন- বাংলাদেশ বড় লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে। ওকে অন্ধকার জানালার ওপাশে দাঁড়িয়ে ভূত সেজে ভয় দেখিও না। ওর বুক ধড়ফড় করে।
(কাব্যগ্রন্থ- অনন্ত মায়াবী ভ্রমণ)।

 
Electronic Paper