ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

‘সেবা প্রকাশনীর লেখকরা সময়ের সেরা’

মাইনুল এইচ সিরাজী
🕐 ১২:১৮ অপরাহ্ণ, জুন ২৬, ২০২০

মিলা মাহফুজা। সেবা রোমান্টিক সিরিজের জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক। একই সময়ে তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন তার স্বামী প্রয়াত খন্দকার মজহারুল করিম। সেই সময়ে তাদের লেখালেখি, সাম্প্রতিক মাসুদ রানা বিতর্ক ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেছেন মাইনুল এইচ সিরাজী

আপনার লেখালেখির শুরুটা কীভাবে?
স্থানীয় পত্রিকায় ফিচার লিখে। আমি তখন যশোরে। উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রী ।

প্রথম বই কখন প্রকাশিত হয়?
১৯৯৫ সালে। সেবা প্রকাশনী থেকে। উপন্যাস। নাম তোমার দু’চোখে। সেবা রোমান্টিকের লেখক খন্দকার মজহারুল করিমের সঙ্গে মাঝে মাঝে সন্ধ্যায় রহস্যপত্রিকায় লেখা দিতে আর অন্যান্য লেখকের সঙ্গে আড্ডা দিতে যেতাম সেগুনবাগিচার সেবা কার্যালয়ে। রহস্যপত্রিকায় গল্প ইত্যাদি লিখি তখন। আড্ডায় কোনো কোনোদিন কাজী আনোয়ার হোসেনও উপস্থিত থাকতেন। তিনি একদিন আমাকে উপন্যাস লেখার জন্য বললেন। এর আগে উপন্যাস লিখিনি বলে রাজি হচ্ছিলাম না। উনি বললেন, নারী লেখকের হাতে রোমান্টিক লেখা অন্য মাত্রা পাবে। মূলত তার আগ্রহেই উপন্যাস লেখা। এটি আমার মৌলিক লেখা। কিন্তু কাজীদা বলে দিয়েছিলেন উপন্যাসে রহস্য-রোমাঞ্চ থাকতে হবে। আর ‘বিদেশি কাহিনীর ছায়া অবলম্বনে’ কথাটা লেখা থাকবে বইয়ের প্রিন্টার্স লাইনে। পরে অবশ্য তা লেখা হয়নি। উপন্যাসটি খুব পাঠকপ্রিয়তা পায়। বেশ কয়েকবার মুদ্রিত হয়। রোমান্টিক সিরিজের মাত্র দুটি বই লিখেছি। পরের বইটির নাম সুধাবিষে।

পরে লিখলেন না কেন?
তখন বিভিন্ন পত্রিকায় নানা বিষয়ে প্রবন্ধ লিখি। ছোটগল্প লিখছিলাম প্রচুর। এগুলো লেখার জন্য সম্পাদকরা ব্যস্ত রাখতেন। সেবার লেখা খানিকটা ফরমায়েশি, ছকবাঁধা বলে আগ্রহ কমে যায়। তবে কাজীদা ও ওনার ছেলে অনেকবার লেখার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কাজীদা একদিন বলেছিলেন, ‘আমি আপনার লেখার ভক্ত।’

এখন কি মনে হয়, লেখাটা চালিয়ে গেলে ভালো হত?
না। তা মনে হয় না। কারণ সে সময় কিছু বই আগামী প্রকাশনী, সাহিত্য প্রকাশ, ব্যতিক্রম, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র- এসব প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হচ্ছিল। এখন একটি মুক্তিযুদ্ধের গল্পগ্রন্থের পা-ুলিপি তৈরি করছি। বর্তমান সময় নিয়ে একটা উপন্যাসও লিখছি।

খন্দকার মজহারুল করিম প্রসঙ্গে আসি। সেই চোখ সম্ভবত ওনার প্রথম উপন্যাস।
হ্যাঁ। ১৯৮৭ সালে এই উপন্যাস প্রকাশিত হয়। হুমায়ূন আহমেদ তখনো তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেননি। ইমদাদুল হক মিলন, মঈনুল আহসান সাবের মাঠে রাজত্ব করছেন। মজহারের গদ্য অসাধারণ। সাবলীল। শব্দের খেলায় পারদর্শিতা ছিল। কাহিনী রচনায় দক্ষতা তাকে পাঠকপ্রিয় করে। নিয়মানুসারে বিদেশি কাহিনীর ছায়া বলা হলেও তার লেখা কাহিনী এদেশের মানুষ, সমাজ, জল-হাওয়া, রীতিনীতি নিয়েই গড়ে উঠত বলে পাঠক ভারি একাত্ম হতে পারত। সেটাই পাঠকপ্রিয়তার কারণ বলে আমার মনে হয়।

রোমান্টিক সিরিজের কয়টি বই তিনি লিখেছেন?
ঠিক মনে নেই। ৪০-৪১টা হবে। সেই চোখ তার মৌলিক উপন্যাস। এটা লেখার পর তিনি কাজীদার কাছে পা-ুলিপি দেন প্রকাশের জন্য। পড়ার পর কাজীদা সেবা রোমান্টিক সিরিজ করার পরিকল্পনা করেন।

বাকিগুলো? সেই চোখেও কি বিদেশি কাহিনী ট্যাগলাইন দেওয়া ছিল?
রোমান্টিক সিরিজের প্রথম কয়েকটি বইয়ে এই ট্যাগ ছিল। পরে আর থাকত না। বছরে চার থেকে ছয়টি বই লেখার চাপ যখন এল তখন কিছু কিছু উপন্যাসের প্লট বিদেশি কাহিনী থেকে নেন। যেমন- অনুরূপা। আবার তার পাঠকরা নিজের জীবনকাহিনী পাঠিয়ে অনুরোধ করত উপন্যাসে রূপ দেওয়ার জন্য। মৌলিক কাহিনীর কোন কোনটা এটা এখন আমার পক্ষে বলা সম্ভব না। ভুল হওয়ার আশঙ্কা আছে।

রয়্যালিটি নিয়ে কোনো সমস্যা হয়েছিল?
না। রয়্যালিটি নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি। মজহারের লেখা বন্ধ হওয়ার কারণ তার রাজনৈতিক কলাম লেখার ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়া। স্বৈরশাসকের পতন ঘটলেও সরকারের ছত্রছায়ায় স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির উত্থান নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন ছিলেন।

আপনারা মাসুদ রানার ব্যাপারটা জানতেন? শেখ আবদুল হাকিমও যে লিখতেন?
জানতাম। আরও কেউ কেউ লিখতেন মাসুদ রানা। সেবার লেখকরা সে সময়ের সেরা লেখক ছিলেন নিঃসন্দেহে। কাজীদা একটু স্ট্রেইট প্রকৃতির মানুষ। কথা সরাসরি বলতেন। কাউকে তোয়াজ করতেন না। ব্যবসা করতেন ব্যবসায়ীর মতো।

রোকসানা নাজনীনও লিখতেন। রোমান্টিক ধারার নারী লেখক আর পাইনি কেন?
হেলেন নওশীনও লিখেছেন। যেকোনো নিদিষ্ট বিষয়ে নির্ধারিত ফরম্যাটে লেখা পরিশ্রমসাপেক্ষ কাজ। নারী লেখকরা ভালোই করছিলেন। কাজীদার উৎসাহও ছিল। তারপরও কেন অন্যরা লিখলেন না তা জানা নেই।

মাসুদ রানা, কুয়াশা ছাড়া অন্য কোনো সিরিজে কি ঘোস্ট রাইটার ছিল? ঘোস্ট রাইটার দিয়ে রোমান্টিক সিরিজ চালানোর কথা কি কখনো উঠেছিল?
মাসুদ রানা, কুয়াশা ছাড়া অন্য সিরিজের ঘোস্ট রাইটারের কথা জানা নেই। রোমান্টিক সিরিজ কেন ঘোস্ট রাইটার লিখবেন? মাসুদ রানা কাজীদা শুরু করেছিলেন। প্রকাশনা ব্যবসা শুরু করার পর তিনি লেখার সময় পেতেন না। তাই ঘোস্ট রাইটারের প্রয়োজন হয়। প্রশ্ন হতে পারে, রোমান্টিক সিরিজের মতো কয়েকজন লেখকের নামে তো যেতেই পারত মাসুদ রানা। আমার মনে হয় কাজী আনোয়ার হোসেনের লেখা হিসেবে মাসুদ রানা যে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল অন্য লেখকের বেলায় সেটা ঘটবে না বলে তিনি মনে করেছিলেন। সে কারণে ঘোস্ট রাইটারের ব্যাপারটা এসেছে। কাজীদা সমস্তটাই ব্যবসায়িক দৃষ্টিতে দেখতেন। রোমান্টিক সিরিজের গ্রন্থস্বত্ব লেখকের ছিল।

আপনার বা খন্দকার মজহারুল করিমের জনপ্রিয় বইগুলো রিপ্রিন্টের উদ্যোগ নিচ্ছেন না কেন?
প্রকাশনা সংস্থা কোনো বই পুনর্মুদ্রণ করে তখনই যখন যথেষ্ট পাঠক চাহিদা থাকে। সেবা প্রকাশনী হয়ত সেই প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে না। তবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে খন্দকার মজহারুল করিমের কিছু বই প্রকাশ করার কথা ভাবছি।

 
Electronic Paper