কবিগুরুর জয়ন্তী ঘিরে নতুন সাজে পতিসর
নওগাঁ ও আত্রাই প্রতিনিধি
🕐 ৩:০৯ অপরাহ্ণ, মে ০৬, ২০১৮
আগামী ২৫ বৈশাখ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৭তম জয়ন্তী উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সাজানো হচ্ছে আত্রাইয়ের পতিসরের কাচারি বাড়ি। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও এখানে আসবেন মন্ত্রী, এমপি, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ দেশবরেণ্য শিল্পী, সাহিত্যিক ও রবীন্দ্র ভক্তরা।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পতিসরে কাচারি বাড়ির পাশদিয়ে বয়ে যাওয়া আঁকাবাঁকা নাগর নদকে নিয়ে লিখেছিলেন, ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে’। এছাড়াও তার বিখ্যাত কবিতা ‘তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে’, ‘দুই বিঘা জমি, ‘সন্ধ্যা’সহ অসংখ্য সাহিত্যকর্ম রচনা করেছেন পতিসরের কাচারি বাড়িতে বসে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর তার পুরস্কারের অর্থ তিনি এ পরগনার প্রজাদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার জন্য ৭৫ হাজার টাকা তৎকালীন সময়ে পাঠিয়েছিলেন। প্রজাদের মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কবি ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে পতিসরে এসে তার পুত্র রথীন্দ্রনাথের নামে কালিগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশন স্থাপন করেন এবং প্রতিষ্ঠানের নামে ২০০ বিঘা জমি দান করেন।
১৯৩৭ সালে ২৭ জুলাই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অশ্রুসিক্ত নয়নে পতিসর তথা বাংলাদেশ থেকে শেষ বিদায় নিয়েছিলেন। সে সময় তিনি প্রজাদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘সংসার থেকে বিদায় নেওয়ার পূর্বে তোমাদের দেখার ইচ্ছা ছিল, তা আজ পূর্ণ হলো। তোমরা এগিয়ে চল-জনসাধারণের জন্যে সবার আগে চাই শিক্ষা-এডুকেশন ফাস্ট, সবাইকে শিক্ষা দিয়ে বাঁচাও। ইচ্ছা ছিল মানসম্মান-সমভ্রম সব ছেড়ে দিয়ে তোমাদের সঙ্গে তোমাদের মতোই সহজ হয়ে জীবনটা কাটিয়ে দেব। কী করে বাঁচতে হবে তোমাদের সঙ্গে মিলে সেই সাধনা করব, কিন্তু আমার আর এ বয়সে তা হবার নয়, এ নিয়ে দুঃখ করে কী করব? আমার সময় ফুরিয়ে এসেছে, তোমরা নিজ পায়ে দাঁড়াতে শেখো। আমি তোমাদের বড় ভালবাসি। তোমাদের দেখলে আমার আনন্দ হয়। তোমাদের কাছে আমি অনেক কিছু পেয়েছি; কিন্তু কিছুই দিতে পারিনি-আশীর্বাদ করি তোমরা সুখী হও। তোমাদের সবার উন্নতি হোক-এ কামনা নিয়ে পরলোকে চলে যাব।’
কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও পতিসর কাচারি বাড়ি প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয়েছে দিনব্যাপী নানা উৎসবের। প্রতি বছরই পতিসরে নামে রবীন্দ্রভক্তের ঢল। পরিণত হয় মানুষের মিলন মেলায়। সরকারিভাবে এক দিনের কর্মসূচি নিলেও এ মিলন মেলা চলে প্রায় সপ্তাহ জুড়ে। দূর-দূরান্ত থেকে কবিভক্তরা ছুটে আসেন তাদের প্রিয় কবির কাচারি বাড়িতে। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে এবার কাচারি বাড়িতেই কবিগুরুর ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। পতিসরে নাগর নদের পাড়কে মনমুগ্ধকর করে তোলা হয়েছে। সরকারিভাবে এক দিনের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কাচারি বাড়ির দেবেন্দ্র মঞ্চে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, সকাল সাড়ে ১০টায় ‘একুশ শতকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রাসঙ্গতা’ শীর্ষক স্মারক আলোচনা অনুষ্ঠান, বিকেল ৩টায় রয়েছে নাটক, আবৃত্তি ও নাচ-গানসহ মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবেন নওগাঁসহ দেশের প্রথিতযশা শিল্পীরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উদযাপনের লক্ষ্যে আয়োজন করা হয়েছে রাজকীয় সব অনুষ্ঠানমালার। আশা করছি পতিসরে আমাদের আয়োজন সবার ভালো লাগবে। অনুষ্ঠানটিকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এবারের অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হবে বলে আশা করছি।
পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন বলেন, ‘কবিগুরুর জন্মদিন মানে বাঙালির জীবনে এক আনন্দের দিন। ২৫ বৈশাখ কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে পুলিশের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে নিরবিচ্ছিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থা।’