‘মুক্তগদ্য কবিতারই খসড়া অথবা কাঁচামাল’
নির্ঝর নৈঃশব্দ্য, সম্পাদক, মুক্তগদ্য
🕐 ৭:২৫ অপরাহ্ণ, মে ১৪, ২০২০
মুক্তগদ্য’র প্রথম সংখ্যা কখন প্রকাশিত হয়?
২০১১ সালে প্রথম সংখ্যা বের হয়। শুরু থেকেই মুক্তগদ্য দুশ’-আড়াইশ’ কপির বেশি চলে না। তার একটা অংশ লেখককপি দিই। নিয়মিতই লেখক থাকেন ৬০-৭০ জন। শ’খানেক কপি বিক্রি হয়। আর বাকি যা থাকে সম্পাদকের পক্ষ থেকে প্রকৃত-পাঠক ধরে ধরে ফ্রি বিতরণ করি। ১০-২০ কপি থেকে যায়।
‘মুক্তগদ্য’ বলতে আসলে কী বুঝব?
আপাত চোখে মুক্তগদ্য এক প্রকারের গদ্য-কবিতাই। তবে এর কোনো চরিত্র নেই। এটা চরিত্রহীন গদ্য। আবার কখনো বলা যায়, এটা কবিতার ভেতর থেকেই উৎসারিত এক প্রকারের নির্যাস কিংবা জারক রস অথবা আঁতুড়ঘরের কবিতা, কিংবা বিমূর্ত গল্পের হাড়গোড়। মুক্তগদ্য আসলে প্রলম্বিত কবিতা। কবিতায় আমরা যা বলতে পারি না, তা মুক্তগদ্যে বলতে পারি। কারণ এখানে মাত্রা ঠিক রাখার দরকার নেই, বাহুল্য ঝেড়ে ফেলারও দরকার নেই। এটা আসলে চলমান ট্রেনের জানলা দিয়ে দেখা দিগন্তের পায়ে আটকে থাকা দৃশ্যের বর্ণনা। এটা প্রকৃত অর্থে ঠিক সাজানো বাগান নয়, অনেকটা অরণ্যের বিন্যাসের মতো। উদ্ভিদের অঙ্কুরোদ্গমের মতো, বালিকার স্তন গজানোর মতো স্বতঃস্ফূর্ত ব্যাপার।
কোনো ভাবকেই একশো ভাগ লিখিতরূপে প্রকাশ করা সম্ভব নয়, কবিতায় ধরেন কেটে-ছেঁটে চল্লিশ ভাগ সেই ভাব প্রকাশিত হলো। কিন্তু মুক্তগদ্যে আপনি চাইলে তার সিংহভাগ প্রকাশ করতে পারছেন।
মুক্তগদ্যের প্রধান শক্তি হলো গতি। একটানে পড়ে ফেলা যায়, পাঠককে থমকে দাঁড়াতে হয় না। আমরা প্রথাগত, কাঠামোবদ্ধ গদ্যের গতিকে ভেঙে নতুন এক গতি এবং মাত্রার বিনির্মাণ চাই। মুক্তগদ্য লেখকের একান্ত ব্যক্তিগত আবেগের লিখিত রূপ, অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত মনোলগ। সহজ কথায় মুক্তগদ্য হলো কবিতা, গদ্য ও ফিকশনের ত্রিমুখী শৃঙ্গার। মুক্তগদ্যে বাক্যের ধারাবাহিকতা থাকলেও চলে না থাকলে চলে। আমরা যে চিঠি লিখি, ডায়েরি লিখি তাও মুক্তগদ্যের মধ্যে পড়ে। মুক্তগদ্য আসলে নিজের সঙ্গেই কথা বলা। সস্তা আয়নার ভেতর দেখা নিজের ঢেউ ঢেউ রূপের বর্ণনা। তবে এখানে আমরা পাঠকের জন্য অনেক স্পেস রেখে দিই, যা পাঠককে কল্পনার আশ্রয়ে নির্মাণ করা লাগে। আর মুক্তগদ্য কবিতার মতো বাহুল্যবর্জিত নয়। মুক্তগদ্যে শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কোনো নিয়ম নেই। শুধু ব্যবহৃত শব্দ বাক্যের সঙ্গে তাল মানে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারলেই হলো। দেশি, বিদেশি, তৎসম, অপ্রচলিত ইত্যাকার প্রায় সব শব্দই ব্যবহার করা যাবে। মুক্তগদ্যকে বলতে পারেন সারারাত ধরে দেখা স্বপ্ন এবং দুঃস্বপ্নের বর্ণনা। আপনি দেখেন সাদাকালো স্বপ্ন, আর মুক্তগদ্য হলো সেই ভাঙা ভাঙা ছিন্ন স্বপ্নকে একটি সুতায় বেঁধে ফেলার চেষ্টা। স্বপ্নের ভেতর ঘুম, সেই ঘুমের ভেতর স্বপ্ন, আবার সেই স্বপ্নের ভেতর দেখা দুঃস্বপ্নের বিমূর্ত ছবি আঁকাই মুক্তগদ্য। চাইলে রঙ দিতে পারেন। এটা আসলে সংলগ্নতারহিত জীবনযন্ত্রণার ন্যারেটিভ। তাই আপনি এটার ধারাবাহিক কোনো সূত্র তৈরি করতে পারবেন না। মুক্তগদ্য কবিতারই খসড়া অথবা কাঁচামাল। এর থেকে এক বা একাধিক কম্প্যাক্ট কবিতা বের হতে পারে।
এই জাতীয় রচনা স্বতঃস্ফূর্ত এবং গতিময় হবে। টান টান কম্প্যাক্ট বা বাহুল্যবর্জিত হওয়ার দরকার নেই; বাহুল্যই এ জাতীয় গদ্যের আভরণ। এখানে ব্যাকরণাবদ্ধ কোনো নিয়ম মানার দরকার নেই। সাধু ও চলিত রীতির মিশ্রণ দূষণীয় নয়। ক্রিয়াপদের সদ্ব্যহার দরকার নেই, বোধগম্য হলেই হলো। প্রথাগত কিংবা আধুনিক কোনো ছন্দ প্রয়োগেরই দরকার নেই সচেতনভাবে। শব্দের ক্ষেত্রে অর্থোডক্স দূষণীয় নয়, যদি তা বাক্যের সঙ্গে তাল রাখতে পারে। বিদেশি শব্দের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। পাঠকের জন্য স্পেস রাখতে পারলে ভালো। বাক্য কিংবা অনুচ্ছেদে পরম্পরা বা ধারাবাহিকতা রাখার দরকার নেই, অসংলগ্নও হতে পারে যেহেতু পাশাপাশি অসংলগ্ন কিছু রাখলে তা একধরনের সম্পর্ক তৈরি করে নেয় নিজেদের মধ্যে। বিরাম চিহ্নের ক্ষেত্রেও কোনো কঠিন নিয়ম নেই। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের নন্দনতত্ত্ব সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক। কেননা আর্ট না জানলে যা-ই লিখবেন বাজারের ফর্দ কিংবা জমির দলিল হয়ে যেতে পারে। একজন দলিল লেখক আর একজন কবিতা লেখকের মধ্যে বিশদ পার্থক্য বিদ্যমান, যা খালি চোখে দেখা যায়, অণুবীক্ষণ যন্ত্রের দরকার পড়ে না।
যতদূর জানি, মুক্তগদ্য’র প্রবর্তক আপনি। এরকম অন্য কোনো প্রকাশনা কি রয়েছে?
না, মুক্তগদ্যের প্রবর্তক আমি নই। এ জাতীয় রচনা আগে থেকেই ছিল বিশ্বসাহিত্যে। ষোড়শ শতাব্দীতে এই জাতীয় গদ্যকবিতাকে ফরাসি দেশে অন্তরঙ্গ-রচনা বলত। মিশেল দ্য মন্টেইন (১৫৩৩-১৫৯২) প্রথম এই জাতীয় রচনাকে জনপ্রিয় করে তোলেন। তারপর চার্লস ল্যাম, ভার্জিনিয়া উল্ফ, জর্জ অরওয়েল প্রমুখ। তারপর কালে কালে পেয়ে যাই শার্ল বোদলেয়ার, রবিনাথ আরও কত রচয়িতা! অ্যালিস ওয়াকার, হুমায়ুন আজাদ, আবদুল মান্নান সৈয়দসহ অনেকের অনেক গদ্যকেও আমার কখনো মুক্তগদ্য বলেই মনে হয়েছে। আমরা ২০০৭/৮ সালের দিকে সামহয়্যারইনব্লগে মুক্তগদ্য লেখা শুরু করলাম নতুনরূপে। আমাদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন কবি দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু গেওর্গে আব্বাস ছদ্মনামে। তার লেখা মুক্তগদ্যকেই আমি আমাদের নতুনপর্বের প্রথম সফল মুক্তগদ্য বলে মনে করি। তিনি মনে করতেন যেই গদ্যে নিমের ছায়া আছে তা-ই মুক্তগদ্য। তারপর মুজিব মেহেদী, তিনি এ জাতীয় রচনাকে বলেছেন উভলিঙ্গ রচনা। তারপর মাসুদ খানÑ যিনি এ জাতীয় গদ্যকে আলেখ্য বলতে চান। তারপর লাবণ্য প্রভা, মুক্তি ম-ল আরও অনেক নাম। আর ত্রিপুরা-বাংলার দীপঙ্কর সেনগুপ্ত। ওপার বাংলায় মলয় রায়চৌধুরী, বারীন ঘোষাল, যিনি কখনো এ জাতীয় লেখাকে নতুন কবিতা বলতেন। তারপর সুদেষ্ণা মজুমদার, আর্যনীল মুখোপাধ্যায়, অভিজিৎ মিত্র প্রমুখ। তবে তারা হয় গল্পের মতো করে লেখেন, না হয় কোনো বিষয়ভিত্তিক একধরনের খোলামেলা রচনা লেখেনÑ যা থেকে বের হয়ে আমরা অন্যকিছু লিখতে চাই। যেমন, ইদানীং অনেক তরুণ কবিই অনেক ভালো মুক্তগদ্য লিখে অভিভূত করছেন পাঠককে। সাম্প্রতিক কালে দুই বাংলায় দুই তিনশ’ লেখক লিখছেন এই মুক্তগদ্যরূপী প্রলম্বিত কবিতা।
আমার জানামতে এই রকম কেবল মুক্তগদ্যের জন্যে আমার সম্পাদিত ‘মুক্তগদ্য’ কাগজটি ছাড়া আলাদা কোনো ছোট কাগজ বা অন্য কোনো প্রকাশনা নেই, দুই বাংলার কোথাও। তবে অনেক ছোট কাগজকেই দেখা যায় মুক্তগদ্য নামে একটা সেকশন রাখছে, যেখানে এ জাতীয় লেখা প্রকাশ হয়।
সম্ভাবনাময় মুক্তগদ্য লেখক কারা, কীভাবে তাদের মূল্যায়ন করবেন?
ধ
রেন, প্রত্যেক কবিরই এই রকম কিছু রচনা আছে। যেগুলোর প্রতি তার গভীর মমতা বিদ্যমান। কিন্তু বাহুল্য দোষে দুষ্ট বলে প্রকাশ করতে চান না বা ফেলে দেন। মুক্তগদ্য জনরায় আমরা সেইসব বা সেই প্রজাতির লেখাকে প্রকাশ করার একটা চেষ্টা নিচ্ছি। এইসব লেখা আসলে কবিতার ভাষা তৈরিরও একধরনের প্ল্যাটফর্ম। অনেকেই কবিতা লিখতে চান, কিন্তু ভাষা জানেন না বলে লেখাগুলো ঠিক কবিতা হয়ে ওঠে না। সেই ক্ষেত্রে এই রকম একটা মুক্ত প্ল্যাটফর্মে চর্চাটা করলে পড়া/পড়ানোর মাধ্যমে একসময় আমরা একটা ভাষা পেয়ে যাচ্ছি। যা পরবর্তীকালে কবিতায় কম্প্যাক্ট রূপে প্রকাশ করার পথ পাচ্ছি। এমন অনেক তরুণ কবির সঙ্গে আমার পরিচিত হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে যারা এই ধরনের গদ্যের দরজা দিয়ে ঢুকে পরবর্তীকালে অনেক ভালো কবিতা লিখছেন। তারা সবাই কেবল মুক্তগদ্যের নয়, সবক্ষেত্রেই সম্ভাবনাময়। এমন দুয়েকজন লেখক মুক্তগদ্যের প্রতিটি সংখ্যাতেই থাকে, যাদের লেখা প্রথম এখানেই ছাপা হচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে ‘মুক্তগদ্য’ একটা অনুপ্রেরণারও জায়গা তাদের জন্য।
মুক্তগদ্য মূলত ললিত ভাষা শিক্ষার বিদ্যালয়। একবার ভাষা শিখে গেলে সাহিত্যের যে কোনো লাইনে গিয়ে দাঁড়ানো সম্ভব বলে জ্ঞান করি।
কোন লক্ষ্য থেকে সম্পাদনায় ব্রতী হয়েছেন?
আমি নানাভাবে সম্পাদনার সঙ্গে জড়িত যখন নাইন-টেনে পড়ি তখন থেকে। তার মানে ২৩-২৪ বছর। তবে প্রথম একক সম্পাদনায় কবিতার কাগজ বের করি কুড়ি বছর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর, নাম ‘স্বপ্নান্ধ শব্দাবলি’। তারপর বের করি ‘জলপত্র’ নামে একটা কবিতার কাগজ। তারপর ‘চারপৃষ্ঠা মেঘ’ নামে একটা কবিতাপত্র যেটা প্রতি সপ্তাহে বের করতাম। দাম ছিল ২ টাকা। এ-ফোর কাগজকে দু’ভাগ করে দু’পিঠ প্রিন্ট করে তারপর ফটোকপি করতাম ৫০ কপি। ৪ পৃষ্ঠায় মিনিমাম ২০-২২ জনের কবিতা ছাপতাম। সবই নতুন লিখিয়ে। তারপর ঢাকায় আসার ২ বছর পর ভাবলাম মুক্তগদ্যের কাগজটা করি। ছোটকাগজ বের করার লক্ষ্য কখনোই ভালো লেখা বা ভালো বা বিখ্যাত লেখকের লেখা ছাপানো ছিল না। ছিল নতুন লেখকের সন্ধান করা, নতুন লেখক তৈরি করা, সাহিত্যভাষা ধরিয়ে দেওয়া, মানুষকে সাহিত্যমুখী করা। এমন অনেক লেখক আছেন যাদের প্রথম লেখাটাই মুক্তগদ্যে ছাপা হয়েছে। অর্জন হচ্ছে, গত ২৪ বছরে আমার কাগজে লেখালেখি শুরু করা অনেকেই ভালো লিখছেন দেখি। দেখে আমার জাগরণ আনন্দ হয়।
বর্তমানে লিটলম্যাগচর্চা কেমন হচ্ছে?
বর্তমানে বাংলাদেশে লিটলম্যাগচর্চার অবস্থা খুবই খারাপ। তেমন চর্চা নেই বললেই চলে। দুয়েক জায়গায় যা-ও আছে, অনিয়মিত। লেখক সৃষ্টিতে লিটলম্যাগের ভূমিকা আগে ছিল। এখন নেই। কারণ এখন লিটলম্যাগের চরিত্রও নেই। তাছাড়া এখন অনলাইন ব্লগ আর ফেসবুকের যুগে সবাই নিজের জায়গা যোগ্যতামতো করে নিতে পারছেন। সম্পাদনায় অর্থনৈতিক প্রতিকূলতা মোকাবেলা করছি। যেহেতু নিজের পকেটের টাকা দিয়ে কাগজ বের করতে হয়।
কী বৈশিষ্ট্যে লিটলম্যাগ ও সাহিত্যপত্রিকাকে আলাদা করবেন?
সাহিত্যপত্রিকা বলতে আপনি মনে হয় প্রাতিষ্ঠানিক কাগজের কথা বলছেন। অনেক আছে। তবে দুটো বিশিষ্টতা থাকতেই হবে, যা না থাকলেই নয়, প্রথমত যথার্থ সম্পাদনা, দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান নিরপেক্ষতা।
সম্পাদনা নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
কোনো পরিকল্পনা নেই। আমি কোনো ব্যাপারেই ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করি না। তবে আজকে পর্যন্ত মনে হচ্ছে বেঁচে থাকলে ‘মুক্তগদ্য’ কাগজটা নিয়মিত করব। বিদ্যমান বাস্তবতায় লিটলম্যাগচর্চার তেমন কোনো গুরুত্ব আছে বলে মনে হয় না। কারণ এখন যথার্থ তেমন কোনো চর্চা নেই, ম্যাগও নেই। সম্পাদকও নেই। এখন সব হয়ে গেছে সংকলক। ফেসবুক থেকে লেখা নিয়ে ছাপিয়ে দেয় সম্পাদনা ছাড়াই। অনেক লিটলম্যাগে লেখার শিরোনামে পর্যন্ত বানান ভুল দেখেছি। এখন বেশিরভাগ সম্পাদক লেখকদের ভয় পায়, তাই কোনো শব্দ-বাক্য সম্পাদনা করে না। মেরুদ-হীন সম্পাদকদের আমি সংকলক বলি।
কোনো কোনো লিটলম্যাগ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান হিসেবেও দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এটাকে কীভাবে দেখেন?
খুবই নঞর্থকভাবে দেখি। কারণ ছোটকাগজের ধারণাই তৈরি হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক সাহিত্যপত্রিকার সদর্থক বিকল্প ভেবে। আমি ওই অর্থে প্রতিষ্ঠানবিরোধী নই। তবে প্রতিষ্ঠানের সুবিধাও কখনো নিইনি। প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলেও সবসময় এড়িয়েও চলেছি নানা অজুহাতে।
ছোটকাগজের সঙ্গে বাণিজ্যিক কাগজের কী ধরনের পার্থক্য থাকা জরুরি?
দুটোই সাহিত্যের কাজই করে। তবে ছোটকাগজের সম্পাদনার ক্ষেত্রে সম্পাদকীয় নীতিমালা একশ’ ভাগ মানা জরুরি। যেটা প্রতিষ্ঠানের কাগজের ক্ষেত্রে ভাইখেলা, বসের অর্ডার, লোভ ইত্যাকার আপাত খাসলতের কারণে সম্ভব হয় না।
মুক্তগদ্যের প্রকাশিত সংখ্যা ১০টি। বছরে একটা করে মানে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে বের হয়, যাতে বইমেলায় লেখক-পাঠকরা সংগ্রহ করতে পারেন। কারণ এর বাইরে আমার নানা সীমাবদ্ধতার কারণে সার্কুলেশনের সুযোগ নেই। বছরে একটার বেশি বের করারও সামর্থ্য নেই। বিশেষ কোনো সংখ্যা নেই। সবই আমার কাছে একই।
প্রযুক্তির ক্রমপ্রসারে লিটলম্যাগ আন্দোলন সংকুচিত হচ্ছে কি-না?
হ্যাঁ, হচ্ছে। এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। আরও হবে। একসময় সবই অনলাইন হবে। এটা অনিবার্য ছিল। তবে পশ্চিম বাংলার তুলনায় বাংলাদেশে সংকোচন বেশি।
লিটলম্যাগের গোষ্ঠীবদ্ধতাকে খুবই সংকীর্ণ দৃষ্টিতে দেখি। কারণ গোষ্ঠী ব্যাপারটাই সংকীর্ণ। লিটলম্যাগ কোনো ধ্রুপদী সংগীত নয় যে এটার নির্দিষ্ট ঘরানা থাকবে। গোষ্ঠীবদ্ধ ম্যাগ তাদের গোষ্ঠীর বাইরের কারো লেখা ছাপে না, কাউকে লেখক মনে করে বলেও সন্দেহ। গোষ্ঠীর ভেতরের লোকজনের অখাদ্যও ছেপে দেয়। গোষ্ঠীবদ্ধতা একধরনের ভাইখেলা। এই ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার মতোই, আলাদা কওম তৈরি করে, উম্মতবেষ্টনী তৈরি করে।
দুই বাংলার লিটলম্যাগ চর্চার মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য দেখতে পান?
পশ্চিমবাংলায় কিছু লিটলম্যাগের চরিত্র এখনো আছে। বাংলাদেশের লিটলম্যাগের কোনো চরিত্র নেই, কলেবরের দিক বলেন, সম্পাদনার দিক বলেন সবই চরিত্রহীন। পশ্চিমবাংলায়ও হয়তো থাকতে পারে, জানি না। এখানকার কিছু পেটমোটা লিটলম্যাগ হয়ে গেছে সম্পাদকের রোজগারের উৎস। এক সংখ্যার বিজ্ঞাপনের টাকায় কাগজ ছাপিয়ে যা থাকে তা দিয়ে শুনেছি একবছরের সংসার খরচ হয়ে যায়। তো এমন অবস্থা হলে সাহিত্য হয়ে যায় আলুপটল।