বঙ্গবন্ধুর অপ্রকাশিত চিঠি
ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ৬:১৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ০৬, ২০১৮
[১২-০৯-১৯৫১ তারিখে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার নিকট নিরাপত্তা বন্দি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বহস্তে লিখিত চিঠি। এই চিঠিটি শামসুল হকের (সেক্রেটারি, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম আওয়ামী লীগ) চিঠির সঙ্গে একই খামে করে দিয়েছিলেন। শামসুল হকের চিঠির সাথে এই চিঠিটিও গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ বাজেয়াপ্ত করে]
ঢাকা জেল
ঢাকা ১২-৯-৫১
মানিক ভাই
আমার ছালাম নিবেন। আমার মনে হয় আপনারা সকলে আমার জন্য একটু ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। চিন্তার কোন কারণ নাই। আমি জেল হাসপাতালে ভর্তি আছি। চিকিৎসার চেষ্টা খুবই হইতেছে। হাসপাতালে কিছুদিন থাকতে হবে বলে মনে হয় কারণ শরীরের অবস্থা এখনও উন্নতির দিকে যায় নাই।
আতাউর রহমান সাহেব দেখা করতে এসেছিলেন। ফেডারেল কোর্ট করা যায় কি না আর করিবে কিনা? জনাব সুরাওয়ার্দি সাহেব তো পিণ্ডি মামলা নিয়া ব্যস্ত। কে মামলা পরিচালনা করবেন? আপনি সুরাওয়ার্দি সাহেবের কাছে চিঠি লেখে জানুন তিনি করতে পারবেন কি না আর তাহা না হলে অন্য কাহাকে দিয়া মামলা করার কোন অর্থ হবে বলে আমার মনে হয় না। আপনারা বাহিরে আছেন, ছালাম সাহেব, আতাউর রহমান সাহেব ও অন্যান্য সকলের সাথে পরামর্শ করে যাহা ভাল বোঝেন তাহাই করিবেন। আমার কিছু বলার নাই।
শুনে সুখী হবেন, সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি কারণ আর কতদিন বাবার পয়সার সর্বনাশ করা যায়। আর শরীরের অবস্থাও ভাল না কারণ হঠাৎ ঢাকা জেলে আসার পর থুথুর সাথে পর পর তিনদিন কিছু রক্ত পড়ে তবে সে রক্ত সর্দি শুকাইয়াও হোতে পারে আবার হাচি খুব বেশি হয় বলে অনেক সময় গলা থেকেও রক্ত পড়তে পারে আর কাসের সাথেও হতে পারে তাই নিজের থেকেই হুশিয়ার হয়ে যাওয়া ভাল। কতকাল থাকতে হয় ঠিকতো নাই। X-ray করার কথা বলেছি। তবে সরকারের কাছে সকল সময়ই খুব সময় লাগে । কবে X-ray করে বলা যায় না। তবে যাহাতে তাড়াতাড়ি হয় তাহার চেষ্টা করিব।
ঢাকা জেলের সুপার সাহেব খুব ভাল ডাক্তার তাই শীঘ্রই ভাল হয়ে যাবে বলে আশা করি। চিন্তার কোনই কারণ নাই। জেলখানায়ও যদি মরতে হয় তবে মিথ্যার কাছে কোন দিন মাথা নত করবো না। আমি একলা জেলে থাকাতে আপনাদের কোন অসুবিধা হবে না। কাজ করে যান খোদা নিশ্চয়ই সাহায্য করবে। আমার জন্য কিছুই পাঠাবেন না। আমার কোন কিছুরই দরকার নাই। নুতন চীনের কিছু বই যদি পাওয়া যায় তবে আমাকে পাঠাবেন। চক্ষু পরীক্ষার পর আপনাকে খবর দিবো কারণ চশমা কিনতে হইবে। নিজেই দরখাস্ত করে আপনার সাথে দেখা করতে চেষ্টা করব।
আপনার ছোটভাই
মুজিব