নজরুল মানস
এহসান বিন মুজাহির
🕐 ২:৫৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ২০, ২০২০
ছোটবেলায় নজরুলের ডাক নাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। তিনি বাংলা সাহিত্যে কবি নজরুল সপ্রতিভায় চির সমুজ্জ্বল। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ছোটগল্প ও গান-গজল সব শাখাতেই বিচরণ ছিল কাজী নজরুল ইসলামের। কেবল গানই সৃষ্টি করেছেন চার হাজারের কাছাকাছি।
এত গান পৃথিবীতে আর কোন কবি-গীতিকার লিখেছেন বলে জানা নেই। গান ছাড়াও রয়েছে তার অজস্র ছড়া-কবিতা। লিখেছেন বেশ কিছু ছোটগল্প ও উপন্যস। লেখালেখির পাশাপাশি সুর সৃষ্টি ও সংগীত পরিচালনাও করেছেন তিনি। এমনকি চলচ্চিত্র পরিচালক, সুরকার, গায়ক ও অভিনেতা হিসেবেও কাজ করেছেন। নবযুগ, অর্থ সাপ্তাহিক, ধুমকেতু, লাঙল ইত্যাদি পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব ও পালন করেছেন। তিনি ছিলেন তৎকালীন জামানার কাঁটাভরা দুর্গম পথের এক নির্ভীক সাংবাদিকও। তিনি বড়দের জন্য লিখেছেন প্রচুর। তাই বলে ছোটদের ভুলে থাকেন নি। নজরুল ছোটদের জন্য রেখে গেছেন শিশুসাহিত্যের এক সুবিশাল ভাণ্ডার।
দুঃখের বিষয় হচ্ছে, নজরুল একজন মানবতাবাদী কবি, যিনি সাধারণ মানুষের জন্য লিখেছেন, মানবতার গান গেয়েছেন, স্বাধীনতার সংগ্রাম করেছেন। কবি নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে সত্য, কিন্তু আমরা আজ তাকে মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছি। নজরুল যে বিদ্রোহের গান গেয়েছিলেন সেই বিদ্রোহ আজ রহিত হয়ে গেছে! বাঙালি মুসলমান আজ নির্জীব-অসার! নজরুল নিভু নিভু আলোয় কোনো মতে টিকে আছেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যেখানে বাংলা বিভাগ রয়েছে, সেখানে নজরুল সাহিত্য থেকে স্বল্প পরিসরে কবি নজরুলকে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দেশে নজরুল অনুশীলন কম হচ্ছে। নজরুল ইনস্টিটিউট নজরুল চর্চায় যে অবদান রাখছে, তা পর্যাপ্ত নয়। বাংলা একাডেমিও উল্লেখযোগ্য কোনো অবদান রাখছে না। জাতীয় পর্যায়ে নজরুলচর্চা আমাদের দেশে হচ্ছেই না বললে চলে।
তাই তো নজরুলের নাতনি খিলখিল কাজী দুঃখভরা কণ্ঠে বলেছেন, ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের চর্চা শুধু জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতেই সীমাবদ্ধ। এই দুটি দিন ছাড়া কবিকে সেইভাবে চর্চা বা স্মরণ করা হয় না’। অথচ বাংলা সাহিত্যে-সংস্কৃতি, দেশপ্রেম, আন্দোলনসহ কোন দিকে থেকেই নজরুলের ভূমিকা ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। তিনি চিরকাল শোষিত-নির্যাতিত মানুষের পক্ষে কাজ করেছেন। বাংলা সাহিত্য ও সংগীত জগতে তিনি নিয়ে এসেছেন ‘সৃষ্টি সুখের উল্লাস’।
জাতীয় কবির প্রতি এত অবজ্ঞা, এত অবহেলা কেন? কবি নজরুলের কবিতা ও গান-গজল আমাদের সংস্কৃতির সম্পদ। তার দেশাত্মবোধক কবিতাগুলো লাখ লাখ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং অনুপ্রাণিত করেছে বীরত্বপূর্ণ ও নিঃস্বার্থ কাজে আত্মনিয়োগ করতে। আমরা যদি নজরুলের জীবন ও সাহিত্য থেকে এ আদর্শটুকু গ্রহণ করতে পারি তাহলে তার আত্মা কিছুটা হলেও শান্তি পাবে।
নজরুল সাহিত্যকে বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের সামনে উপস্থাপন করা অপরিহার্য কর্তব্য। কবি নজরুল তার বিরল প্রতিভাগুণে অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন এবং যুগ যুগ ধরে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
শেষ...