রূপকথার রাজপুত্র এন্ডারসন
ইলিয়াস খান
🕐 ৫:৩৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৮, ২০১৮
পৃথিবীর সব দেশের সাহিত্যই সে দেশের রূপকথার কাছে ঋণী। পৃথিবীতে যে এত বড় বড় সাহিত্যিক তাদের বড় বড় রচনা উপহার দিয়েছেন বা দিচ্ছেন, সেসব সাহিত্যের শেকড় কিন্তু এ রূপকথা। রূপকথা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক বড় বড় সাহিত্য গবেষণা রচনা হয়ে আসছে। চৈনিক সাহিত্য তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মহাকাব্যও একরকম রূপকথাই।
মহাকাব্যের লেখক থাকলেও রূপকথা কিন্তু তৈরি হয় সে দেশের মাটি মানুষ নদী পাহাড় পোকামাকড় ইত্যাকার বিষয়াদির চাল-চলন গন্ধ শব্দ থেকে। তাই কোনো দেশের রূপকথা পড়লে সে দেশের মৌলিক জীবন রসের সন্ধান পাবে। রূপকথার সাধারণত কোনো লেখক থাকে না। বাংলাদেশের রূপকথা, রাশিয়ার রূপকথা, আফ্রিকার রূপকথা-এভাবে প্রতিটা দেশেরই রূপকথা আছে। রূপকথাকে বলা হয় সে দেশের মাটি থেকে জন্ম নেওয়া জীবনের চিরায়ত কত কথা। কিন্তু মজার ব্যাপার কি জান, রূপকথার লেখকও হন। যেমন গ্রিমভাইদের রূপকথা। কিন্তু আজকে তোমাদের যাকে নিয়ে বলব, তিনি হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসন।
রূপকথার রূপরাজ্যের রাজপুত্রের নাম হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসন। কুৎসিত প্যাঁকারো গল্পটা পড়েছ তো নিশ্চই? সেই হাঁসটার কথা মনে পড়ে? দেখতে একদম সুন্দর ছিল না। কিন্তু তার বাকি ভাইবোনগুলো ছিল অনেক সুন্দর। আর সে জন্য ওরা কেউ একদম পছন্দ করত না ওকে। মা পর্যন্ত আদর করত কম। শেষে কী হলো? ওই দেখতে অসুন্দর হাঁসটাই হয়ে গিয়েছিল সুন্দর রাজহাঁস। এ কদাকার হাঁসছানার গল্পটাই তো হ্যান্স এন্ডারসেনেরই।
প্রিন্সেস অ্যান্ড দ্য পি (রাজকন্যা ও মটরশুঁটি দানা), দ্যা অ্যাম্পেরর’স নিউ ক্লোথস (রাজার নতুন পোশাক), দ্যা লিটল মারমেইড (ছোট্ট মৎস্যকন্যা), দ্য স্নো কুইনসহ (তুষার রানী) এমন আরো অনেক অনেক সুন্দর গল্পের লেখক তিনি। হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসন তার রূপকথার জন্য অমর হয়ে আছেন। কিন্তু তার বিখ্যাত কিছু কবিতাও আছে। তার সবচেয়ে বিখ্যাত কবিতাটার ইংরেজি নাম-আই এম এ স্ক্যান্ডিনেভিয়ান।
হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসনের জন্ম ১৮০৫ সালের ২ এপ্রিল, মঙ্গলবার। ডেনমার্কের ওডেন্স শহরের একটা দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রূপকথার রূপকার হ্যান্স। তার বাবা ছিলেন জুতোর কারিগর, আর মা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধোয়ামোছার কাজ করতেন। এন্ডারসন ছিলেন বাবা-মার একমাত্র সন্তান।
ছোট্ট থাকতেই তাকে পড়াশোনা বাদ দিয়ে চাকরির খোঁজে বেরিয়ে পড়তে হয়। তা ছাড়া কি করবেন? বাড়িতে যে অভাব তার! শিক্ষানবিস হিসেবে প্রথমে কাজ করলেন এক কাপড়ের কারিগরের কাছে, এরপর এক নাবিকের কাছে। এর মধ্যেই কিন্তু এন্ডারসনের একটা কবিতা বেশ বিখ্যাত হয়ে গেছে। ইংরেজিতে কবিতাটির নাম-দ্য ডাইং চাইল্ড। কবিতাটি তিনি লিখেছিলেন ১৮২৭ সালে। আর তখনই কোপেনহেগেনের শীর্ষস্থানীয় সাহিত্য পত্রিকাতে নিয়মিতই তার কবিতা ছাপা হচ্ছিল।
১৮২৯ সালে অভিনীত হয় তার প্রথম নাটকও। জনপ্রিয়ও হয় নাটকটি। ১৮৩১ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতার বই। এন্ডারসন বিখ্যাত দুই কারণে। এক. তার রূপকথার জন্য তো তিনি বিখ্যাতই, দুই. আরেকটি তার ভ্রমণ ডায়েরি ‘ট্রাভেলগ’ এর জন্য। আর তার প্রথম ভ্রমণ ডায়েরিও প্রকাশিত হয় ওই একই বছর।
জার্মানি ঘুরে এসে তিনি তার সেই ভ্রমণ কাহিনীটি লেখেন। কিছুদিনের মধ্যেই তার ভ্রমণের বইগুলো অনেক জনপ্রিয় হয়। তিনি ১৮৩৩ সালে ভ্রমণের জন্য রাজার আর্থিক সহায়তা পান। তখন তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্যুর দেন। জার্মানি, ফ্রান্স এবং ইতালি ঘুরে আসেন।
১৮৪৫ সালে তার লেখা ইংরেজিতে অনুবাদ হয়ে প্রকাশ করা শুরু হয়। জার্মান ভাষায় প্রথম তার লেখার অনুবাদ প্রকাশিত হয় ১৮৪৭ সালে। ফরাসি ভাষায় ১৮৪৮ সালে তার প্রথম যে লেখাটি অনুবাদ হয়, সেটি ছিল কিন্তু রূপকথা। তার লেখা রূপকথা বিশ্বের ১০০টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৮৭৫ সালে রূপকথার রাজ্যের এ রাজপুত্র পৃথিবীর রূপকথার গল্পে ইতি টেনে, অজানা রূপকথার রাজ্যে পাড়ি জমান।
তার মূর্তি আছে আমেরিকার নিউইয়র্ক আর ক্যালিফোর্নিয়ায়, আছে স্লোভাকিয়ার ব্রাতিস্তাভা শহরেও। জাপানে তার নামে একটা থিম পার্কই আছে। আর পোল্যান্ডে তার নামে আছে থিয়েটার, যেখানে অভিনয়ের পাশাপাশি পাপেট শোও হয়।
ওদিকে ২০০৬ সালে চীনের সাংহাই শহরে যা হলো তা তো রীতিমতো এলাহীকাণ্ড। সেখানে প্রায় ১৩ মিলিয়ন ডলার খরচ করে একটা থিম পার্ক বানানো হয়েছে। পার্কটি শুধু তার নামেই করা হয়নি, পার্কটির সব রাইড তার জীবন আর রূপকথার গল্প নিয়ে বানানো হয়েছে।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228