পাণ্ডুলিপি তৈরির গল্প
সাইদ আজাদ
🕐 ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২০
বিষণ্ন জোছনা মূলত মানুষের আদিম প্রবৃত্তির প্রচ্ছন্ন বিবরণ। প্রেম, পরকীয়া, সমপ্রেম নিয়ে লেখা বইটি। মানুষের চরিত্রের একটি দিক হলো, মাটির প্রতি লোভ। যার কারণে ভাইয়ে ভাইয়ে, প্রতিবেশীর সঙ্গে প্রতিবেশীর বিবাদ হয়। মারামারি, খুনাখুনি হয়। যৌনতার মত মাটির লোভও যেন মানুষের আদিমতম। বিষণ্ন জোছনা মানুষের এসব আদিমতম তাড়নাকে ভেবেই লেখা।
উপন্যাসটি প্রায় নয় মাসে একটানা লিখেছি। চেষ্টা করেছি, বর্তমান গ্রামীণ সমাজের পরিবর্তিত অবস্থাকে ধরতে। বিষণ্ন জোছনাতে এসেছে যাত্রাশিল্পের দুদর্শার বর্ণনাও। এসেছে, সম্পত্তি থেকে বোনদের বঞ্চিত করার বিষয়টিও। সীমিত পরিসরে হলেও ধর্মীয় কিছু কুসংস্কারের প্রসঙ্গও এসেছে।
বিষণ্ন জোছনা আসলে কিছু মানুষের মনোবেদনার আখ্যান। আপাতদৃষ্টিতে চারপাশের মানুষদের হয়ত সুখীই দেখি আমরা। দেখি, তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন। কিন্তু চারপাশের আপন আর চেনা মানুষগুলোর মনেই হয়তো থাকে অচেনা দুঃখ। পরিচিত সেসব মানুষদের অজানা দুঃখ কি আমাদের স্পর্শ করে?
বিষণ্ন জোছনা স্বামী পরিত্যক্ত নিঃসন্তান বাঁজা আম্বিয়ার কাহিনী। যে কিনা একজন ধাত্রীও। যৌবনের দিনগুলোতে যে আম্বিয়া সন্তান প্রসবে সহায়তা করে, প্রৌঢ়ত্বে সে স্বজন-সন্তানহীন হয়ে, অবহেলায় পরের দয়ায় দিন কাটায়। অপর দিকে, অল্পবয়সে স্বামী হারিয়ে সায়রা ছোট মেয়েকে নিয়ে পরের জমিতে বসবাস করে। রাত হলে তার চারপাশে শুরু হয় হায়নাদের আনাগোনা।
কৈশোর উত্তীর্ণ বায়জিদের মনে কীসের যন্ত্রণা, নিজেও বুঝতে পারে না সে। কেন সমবয়সী ছেলেদের দেখলে তার মনে অচেনা দুঃখ জেগে উঠে? সে সব দুঃখ কি আসলে ভালোবাসা? একজন ছেলে হয়েও কেন তার মনে ছেলেদের জন্যই ভালোবাসা জাগবে? কেন ঝুমুরের ছোঁয়া তার ভালো লাগে না!
জামান কোন দুঃখে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়? আঠার বছর পর ফিরে এসেও কেন সে আবার নিরুদ্দেশ হয়?
বিষণ্ন জোছনার জোনাকি আর তৌফিক কি নিজেদের যৌথ স্বপ্নে ঘর বাঁধতে পারবে? পারবে কি আবারো কোনো জোছনা রাতে, চাঁদের আলোয় নদী তীরের জোছনামাখা বালুতে হাঁটতে? মূলত এসব প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে বিষণ্ন জোছনার বৃহৎ পরিসরে। বায়ান্ন প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইটির প্রচ্ছদশিল্পী তৃত।