দার্জিলিংয়ের গল্প
খন্দকার মাহমুদুল হাসান
🕐 ৩:০১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১০, ২০২০
আগে থেকেই ঠিক করা ছিল থাকার ব্যবস্থা হবে ম্যালের পাশেই। গাড়ি ম্যাল পর্যন্ত গেল না। গাড়ি গেল চকবাজার পর্যন্ত। চকবাজারটা হলো কাঠমান্ডুর বাগবাজারের মতোই, বাণিজ্যিক এলাকা। চারদিকে দোকানপাট। ফুটপাতে কমলার দোকানি যেমন আছে, টং দোকানের নেপালি টুপি বিক্রেতা যেমন আছে, তেমনি আছে অভিজাত বিপণিও। কাঁধের ব্যাগটা একটু বেশি ওজনদার বলে মনে হলো চকবাজারের ভিড় ঠেলে খাড়া সিঁড়ি বেয়ে ওপরের দিকে ওঠার সময়। এখান থেকে বেশ খানিকটা ওপর দাঁড়িয়ে আছে ম্যাল। সেই বিখ্যাত ম্যাল। যেই ম্যালের দৃশ্য আছে একাধিক ভাষার অনেক চলচ্চিত্রে।
উঠে এলাম ম্যালের দিকে। পথে পড়ল কম্বল আর গরম কাপড়ের বাজার। ঘোরানো পথে ম্যালে ওঠার সময় থমকে দাঁড়াতে হলো মেঘ দেখে। সাদা মেঘ। সুন্দর মেঘ! কী যে সুন্দর মেঘ! একটু ভেবেই প্রায় দৌড়ে গেলাম মেঘের দিকে। ঢুকে গেলাম মেঘের মধ্যে। নিজ হাতে স্পর্শ করলাম মেঘ। কী সুখ! কী যে সুখ!
ম্যালে দেখলাম নেপালি ভাষার জাতীয় কবি ভানুভক্ত আচার্যের দীর্ঘ এক ভাস্কর্য। সবসময় এখানে দেখা মেলে কত রঙের মানুষ! কত দেশের মানুষ! বাংলাদেশ, ভারত আর নেপালের মানুষই নয়, সুইজারল্যান্ড-ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মানুষের দেখাও মিলল এখানে। ঘোড়ায় চরে ঘুরছে কত জন। আর আমার জন্যে নির্ধারিত হোটেলটার অবস্থান হলো ঠিক আস্তাবলের পরের ঢালটার ধারেই। এটি পর্যটন নগরী। সারা পৃথিবীর মানুষই প্রতিদিন আসে এখানে। তাই চারদিকেই ছড়াছড়ি হোটেলের। এ জন্যই একে হোটেলের শহর বললেও ভুল বলা হয় না খুব একটা। আমি যে হোটেলটায় উঠেছিলাম সেটিসহ প্রায় সব হোটেলেই গরম জলের ব্যবস্থা আছে। আর রুম হিটারের ব্যবস্থা না থাকলে ডবল কম্বলের সঙ্গে লেপ চাপালেও ঠাণ্ডার তলোয়ার এসে ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারে যে কাউকেই।
এটা হলো শীতের রাজ্য। তুষারপাতও হতে পারে, কিন্তু গরম কখনও পড়ে না, ইংরেজ সাহেবরা তাই বড়ই পছন্দ করতেন শহরটাকে। মেঘ এসে ঝুপ করে ঘরে ঢুকে যায়। এই বৃষ্টি তো এই রোদ। ম্যাল এবং তার আশপাশ, এমনকি পুরো শহরজুড়েই আছে স্যুভেনির এবং দেশ-বিদেশের নানান জিনিসের দোকান। টাইগার হিল থেকে দেখা সূর্যোদয় আর কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার স্মৃতি কে ভুলবে। পাহাড়ের ঢালের চা বাগান, রক গার্ডেন, দর্শনীয় সব পার্ক, ঘুম-দার্জিলিং আর কুরশিলিং-কালিম্পঙের কথাই বা কে ভুলতে পারে? আমিও ভুলিনি।
শহরটা দেখতে কেমন? সে কথা বলার চেষ্টা আমি করতে চাই না। যদি বলি ছবির মতো তাহলে ব্যাখ্যা করতে হবে ছবিটা কেমন। তাই এটুকু বলা যায়, এত সুন্দর ছবি মানুষ আঁকতে পারে না। যে দেখেনি সে জানে না দার্জিলিং কত সুন্দর!