ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

একজন জোছনাপ্রেমী

শফিক হাসান
🕐 ৮:০০ অপরাহ্ণ, জুলাই ২০, ২০১৮

কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তার জন্ম নেত্রকোনায় ১৩ নভেম্বর, ১৯৪৮ সালে। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ১৯ জুলাই, ২০১২-এ লাখো ভক্ত-অনুরাগীকে কাঁদিয়ে চলে যান না ফেরার দেশে। এ সময় চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থান করছিলেন তিনি।

স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে ১৯৭২ সালে নন্দিত নরকে উপন্যাসের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল যার-কে ভাবতে পেরেছিল হ্যাংলা-পাতলা এ তরুণই একদিন সাহিত্যের শীর্ষস্থানে পৌঁছাবেন! তার একটি পাণ্ডুলিপির আশায় প্রকাশকরা অপেক্ষায় থাকবেন তীর্থের কাকের মতো! একুশে বইমেলায় পাঠকরা দীর্ঘ লাইন ধরে, কখনো বা হুড়োহুড়ি-মারামারি করে বই কিনছেন-এ কেবল হুমায়ূন আহমেদ বলেই সম্ভব।
বাঙালিকে নতুন করে জোছনাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছেন তিনি। তার তুমুল জনপ্রিয় চরিত্র হিমু। আরেকটি চরিত্র মিসির আলি। আপাতদৃষ্টিতে হিমুর অধিকাংশ কাজকে যুক্তিহীন মনে হলেও মিসির আলি তার সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী চরিত্র। তিনি থাকেন যুক্তির মধ্যেই। যুক্তি এবং যুক্তিহীনতা দুভাবেই পাঠকদের আনন্দসাগরে ভাসিয়েছেন তিনি। এর বাইরেও রয়েছে হুমায়ূন আহমেদ বিশাল লেখার ভাণ্ডার। বলা হয়, বাংলাদেশিদের বইমুখী করেছেন তিনি। সহজিয়া ভঙ্গিতে তার লেখাগুলো পাঠকমহলে বিপুলভাবে সমাদৃত হয়। তিনি আনন্দ-বেদনার কথাকার।
লেখক পরিচয়েই আবদ্ধ থাকেননি হুমায়ূন আহমেদ। নাটক লিখেছেন টেলিভিশনের জন্য। পরবর্তীকালে মনোযোগী হয়েছেন নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণে। লেখালেখিতে পূর্ণমাত্রায় মনোযোগ দিতে গিয়ে ছেড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানজনক অধ্যাপনার চাকরিও। ফলে আপন ভুবনে মনোযোগ দিতে পেরেছেন আরও বেশি। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হুমায়ূনের দেশকে ভালোবেসেছেন গভীরভাবে। দেশে যখন মুক্তিযুদ্ধের কথা বলা যেত না, বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ ছিল একপ্রকার নিষিদ্ধ-অবরুদ্ধ একটি পরিস্থিতিতে টেলিভিশন নাটকে তিনি পাখির মুখে বলিয়েছেন ‘তুই রাজাকার’।
আধুনিক বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের তিনি পথিকৃৎও তিনি। তার হাত দিয়েই শুরু হয় কল্পবিজ্ঞানের যাত্রা। নানা স্বাদের গল্প-উপন্যাস লেখার পাশাপাশি নাটক, চলচ্চিত্র নির্মাণেও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। পেয়েছেন কাজের স্বীকৃতিও। ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯৪ সালে পান একুশে পদক।
তার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমণি’। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবিটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ আটটি পুরস্কার লাভ করে। দর্শকনন্দিত অন্য চলচ্চিত্র হচ্ছে- শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, শ্যামল ছায়া ও ঘেটু পুত্র কমলা। সর্বশেষ চলচ্চিত্র ঘেটু পুত্র কমলাও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে।
লেখালেখিকেও যে পেশা হিসেবে নেওয়া যায় প্রমাণ করেছেন হুমায়ূন আহমেদ। লেখালেখি থেকে অর্জিত অর্থেই সেন্টমার্টিন দ্বীপে নির্মাণ করেছেন সখের বাড়ি- সমুদ্রবিলাস। গাজীপুরে নানা জাতের গাছপালা সমৃদ্ধ নুহাশপল্লী নির্মাণ তার আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজ।
হাছন রাজা, শাহ আবদুল করিমের গানের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছেন নতুন প্রজন্মের সঙ্গে। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ছবি আঁকা ও গান রচনায় ঝুঁকেছিলেন তিনি। তার জনপ্রিয় একটি গান হচ্ছে-ও কারিগর দয়ার সাগর ওগো দয়াময়/চান্নিপসর রাইতে যেন আমার মরণ হয়। এভাবেই জোছনাপ্রেমের নমুনা রেখে গেছেন তিনি। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, ‘চান্নিপসর’ রাত তিনি পাননি, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হয়েছে বিদেশ-বিভুঁইয়ে।

 
Electronic Paper