ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পেঁয়াজকাণ্ড!

আহসান হাবীব
🕐 ৬:০২ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৯

বাজারে গিয়েছিলাম কিছুদিন আগে, সপ্তাহের বাজার করতে। মাছ শাক-সবজি কেনার পর দেখলাম ফর্দের শেষ আইটেম লেখা ‘পেঁয়াজ আধা কেজি’। গেলাম পেঁয়াজের দোকানে। বস্তায় অনেক ধরনের পেঁয়াজ সাজানো।

-এই পেঁয়াজের কেজি কত?
-১৫০ টাকা।
-কোথাকার পেঁয়াজ?
পাকিস্তানি! বিজয়ের মাসে এ পেঁয়াজ কেনার তো প্রশ্নই উঠে না। ভাবি আমি।
-এই পেঁয়াজ কোন দেশের? আরেক বস্তার সামনে দাঁড়াই আমি।
-এটা মিসরীয়।
-কেজি কত?
-একশ’ ত্রিশ টাকা।

ভাবলাম মিসরের পেঁয়াজ বরং খেয়ে দেখা যাক না। পিরামিডের দেশ মিসর সেই দেশের পেঁয়াজ খাওয়ার সুযোগ যখন হলো ট্রাই করে দেখি না কেমন। বড় বড় সাদাটে পেঁয়াজ মিসরের। ইন্ডিয়া বাংলাদেশ পাকিস্তানের পেঁয়াজের মতো লাল না।

-দেন আধা কেজি।
দুটা মিসরীয় পেঁয়াজ মাপতেই পঁচাত্তর টাকা উঠল মেশিনে। দোকানদার বলল, ৮০ টাকা মিল করে দিই?
-দেন।

দেখলাম আশি টাকা মিল করার জন্য ইন্ডিয়ান পেঁয়াজের বস্তা থেকে সে একটা ছোট সাইজ পেঁয়াজ নিল। তাতেও মাপে হয় না, পরে বাংলাদেশি পেঁয়াজের বস্তা থেকে আরও ছোট সাইজ একটা পেঁয়াজ নিল (এ পেঁয়াজের কেজি কিন্তু এখনও ২৫০ টাকা) তাতে মনে হলো মাপে হলো। মানে আশি টাকা পুরা হলো। আমি আশি টাকায় দুটা মিসরীয় বড় সাইজ পেঁয়াজ একটা ছোট সাইজ ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ আর একটা আরও ছোট সাইজ বাংলাদেশি পেঁয়াজ নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। পুরাই ইন্টারন্যাশনাল অনিয়ন শপিং বলা যায়।

বাসায় আসতেই স্ত্রী বলল, পেঁয়াজ এনেছ?
-হ্যাঁ। এই যে মিসরীয় পেঁয়াজ। পেঁয়াজের ব্যাগ খুলে স্ত্রী বলল ‘এত বড় বড় মিসরীয় পেঁয়াজ? সঙ্গে এ ছোট ছোট দুটো কেন?
-মনে হয় বাজার থেকে বাসায় আসতে আসতে পথে বাচ্চা দিয়েছে। আমি ঠাট্টা করে বলি।

স্ত্রী খুবই বিরক্ত হলো আমার ঠাট্টা তামাশায় (সবসময়ই হয়ে থাকে)। পরে তাকে ছোট পেঁয়াজের রহস্য খুলে বললাম। এমনভাবে রংচং দিয়ে বললাম যেন মিসরীয় পিরামিড রহস্যও এর কাছে কিছু না।

সত্যি কথা বলতে কী, ‘পেঁয়াজ মূল্যের’ জেট গতি রহস্য আম জনতার কাছে এখনও রহস্যই রয়ে গেছে, এখনো পেঁয়াজ বাজারে ২৫০ টাকাই। একজন আমাকে বলল, আপনার উন্মাদে এসব নিয়ে কিছু লেখেন না কেন? কার্টুন-টার্টুন আঁকুন।

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলি। তাদের বলি, যতই পেঁয়াজের দাম বাড়ুক আর উন্মাদের দাম স্থির থাকুক তারপরও উন্মাদ আর পেঁয়াজের মধ্যে কিন্তু একটা বেশ মিল আছে।
-কী মিল?

-দাম বাড়ুক আর কমুক এখনো পেঁয়াজ কাটলে মানুষের চোখ দিয়ে পানি পড়ে। উন্মাদ পড়তে গেলেও নাকি পাঠকের চোখ দিয়ে পানি পড়ে। হাসির কিছুই থাকে না যে!

 
Electronic Paper