ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আচ্ছাদন

গোলাম মোর্তুজা
🕐 ৩:০১ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২০, ২০১৯

সকালে মিঠেকড়া রোদ এসে উঠোনটা টইটম্বুর করে দিয়েছে। শ্রাবণের মাস শেষ হয়নি অথচ মনে হয়, ফাগুনের কোনো চকমকে দিনের অভিযাত্রীরা মোতালেব আলীর বাড়িতে এসে ঠিকরে পড়েছে। দুদিন হলো বাবা শাবাব ছেলের বাড়ি এসেছেন। স্ত্রী নিতুনের মৃত্যুর পর সব অগোছাল হয়ে গেছে। ভিটেমাটি ভাগবাটোয়ারা করে দিয়েছেন।

মানুষ কোথাও না কোথাও আটকে যায়। শাবাব আলী দারুণভাবে এখানে এসেই আটকে গেছেন। দুই ছেলে জমি পেয়ে শহরে পাড়ি জমিয়েছে। গ্রামে আছে ছোট ছেলে মোতালেব। একে একে দুই ছেলে পর। এক মাস পরপর বড়, মেজো ও ছোট’র বাড়ি থাকতে হয়। এতে শাবাবের অস্তিত্ব বিলুপ্ত প্রায়। চেতনারা ডানা ঝাপটায়। মন টানে নিজের ভিটেই থাকতে।

ছোট ছেলের বাড়ির থাকার পালাতেই আছেন শাবাব। একদিন সকালে মোতালেব অফিসে যেতে প্রস্তুত হচ্ছিল। এ সময় বাবার ঘরে গিয়ে পাঞ্জাবির পকেটে কিছু টাকা গুঁজে দিল। মোলায়েম স্বরে বাবাকে বলল, ‘বাবা ঘুমাও। অফিসে যাচ্ছি। তোমার ঘিয়ে রংয়ের পাঞ্জাবিটা বেশ ময়লা। পকেটগুলো চেক করে কাচতে দিও।’

শাবাব আলি বিছানাতে চোখ বুজে ছিলেন। উঠে বসে বললেন, ‘অফিসে যাচ্ছ? যাও বাবা। রাতের ঘুমটা ভালো হয়েছে। স্মৃতির আচ্ছাদনে মোড়ানো এ বাড়ি। আমার চারপাশে তোমার মা জমিয়ে আসে। রহস্যঘেরা হয়ে ঘিরে রাখে আমাকে।’

বাবার কথা তীর হয়ে বিঁধে বুকে। মায়ের স্মৃতি ওরও বুকের ভেতর আনাগোনা করে বাড়াবাড়ি রকম। মায়ের কথা মনে হলে উদ্ভ্রন্ত পাগলপারা হয়ে যায়।

মেতালেব বলল, ‘বাবা আমরা তো আছি। যা বললাম তা করো। আমার দেরি হয়ে গেল।’

রাতে ফেরে মোতালেব। বাবা শাবাব কিছু সময় পরে ছেলের ঘরের সামনে গিয়ে বলেন, ‘বাবা মোতালেব, তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল, যদি শোনো।’

মোতালেব তখন ঘরে একমাত্র সন্তান সাহিরের সঙ্গে খুনসুটি করছিল। বলল, ‘ভেতরে আস বাবা। বস। কী বলবে?’

ছেলের পাশেই বসলেন শাবাব। বললেন, ‘শোন বাবা, আমাকে আর ভাগ করো না। এখানেই তোমার মায়ের সব স্পর্শ লেগে আছে। বাকি সময়টা এখানেই থাকতে দাও।’

শাবাবের কথায় মোতালেবের চোখ ভিজে যায়। বাবা যেন শুকিয়ে যাওয়া পাতা, একটু আঘাত পেলেই খুলে পড়বে। বাবার কথায় মোতালেব কোনো কিছু বলতে পারল না।

 
Electronic Paper