ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
🕐 ১২:৪৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৬, ২০১৯

রমাপদ চৌধুরীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক প্রায় অর্ধশতাব্দীর। তারও আগে তার অসামান্য রচনার সঙ্গে পরিচয়। ছাত্রজীবনে তার ‘প্রথম প্রহর’ পড়ার অভিজ্ঞতা ভুলি কী করে? অনেক পরে যখন পরিচয় হলো, তখন চিনলাম এক ক্ষুরধার মেধাসম্পন্ন মানুষকে। রবিবাসরীয় পত্রিকার সম্পাদনা করতেন আশ্চর্য দক্ষতায়। রসবোধ ছিল প্রবল। মনে আছে একবার তাকে কালী পুজো ‘ওপেন’ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে এসেছিলেন কয়েকজন। রমাপদবাবু একটু হেসে বললেন, ‘মা কালীর তো সবই ওপেন, আর ওপেন করার কী আছে!’

সারা বছর লেখার নামগন্ধ নেই। পুজোর উপন্যাস লেখার সময়ে কলমে কালি ভরতেন। বছরে ওই একবার। বিদেশে যাওয়ার আমন্ত্রণ পত্রপাঠ প্রত্যাখ্যান করতেন। পোশাক ছিল ধুতি, বাফতা-র পাঞ্জাবি আর কোলাপুরি চটি। কখনো অন্য পোশাক পরেননি। এক সময়ে তার জনপ্রিয়তা এমন তুঙ্গে উঠেছিল যে, তাকে গাড়ি কেনার টাকা দিয়েছিল এক প্রকাশক। দীর্ঘদিন তিনি তার ছোট গাড়িটা নিজেই চালিয়ে অফিস বা অন্যত্র যাতায়াত করেছেন। বাঙালি লেখকদের মধ্যে এটি বিরল ঘটনা। বিরল আর একটি ব্যাপারও। নিজের ইনকাম ট্যাক্সের রিটার্ন তিনি নিজেই তৈরি করতেন। টানা কুড়ি-পঁচিশ বছর ধরে দেখেছি, তার চেহারার কোনো পরিবর্তন নেই।

শুধু মাথার চুল হয়তো কয়েকটা বেশি পাকত, তার বেশি কিছু নয়। অসুখবিসুখ কদাচিৎ হতো। এমন ফিটনেসও অবাক হওয়ার মতো। পুরী ছিল তার সবচেয়ে প্রিয় বেড়ানোর জায়গা। বলতেন, ‘কত বার যে পুরী গিয়েছি, তার হিসাব নেই।’ বৌদি তার চেয়ে বয়সে অনেকটাই ছোট এবং ভারী সুন্দরী। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এত ভালোবাসা দেখাই যায় না। খুব হাতেগোনা কয়েকজন অন্তরঙ্গ ছাড়া কখনো কাউকে তুই বা তুমি করে বলতেন না। সবাইকেই আপনি। এমনকি বয়সে অনেক ছোট অফিসের সহকারীদেরও সব সময়ে আপনি করে বলতেন। চা আর সিগারেট ছাড়া কোনো নেশা ছিল না।

সিগারেট তিন বার ছেড়ে তিন বার ধরেছিলেন এই বর্ণময় মানুষটি। অনেকটা শূন্যতা সৃষ্টি করে চলে গেলেন। অনেক জন নবীন লেখক তারই আবিষ্কার। তার দফতরেই ফি-শনিবার নবীন লেখকরা আসতেন। তুমুল আড্ডা হতো, চা-মুড়ি হতো, সঙ্গে তেলেভাজা। কাউকে কখনো উপদেশ দিতেন না। বড় লেখকের অহঙ্কারও বিন্দুমাত্র ছিল না তার। মানুষ এবং লেখক, দুই হিসেবেই রমাপদ চৌধুরী বিশিষ্ট।

 
Electronic Paper