কলকাতায়
বেঙ্গল এক্সপসিশন
গৌতম সেন
🕐 ১২:৩৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৬, ২০১৯
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত ধরে ভারত বাংলাদেশের শিল্পী-সাহিত্যিকদের নিয়ে প্রাচ্য প্রতীচীর যাত্রা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে শিল্প প্রদর্শনী, শিল্প কর্মশালা, সাহিত্য সভা, শান্তিনিকেতন সম্মাননা ও প্রকাশনার মতো অনেক কাজ জমেছে সংস্থার ঝুলিতে।
কলকাতা শহরে ২ জুলাই থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত মৌলবাদের বিপক্ষে এক অভিনব আন্তর্জাতিক চিত্রকলা প্রদর্শনী হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের শতাধিক শিল্পীর কাজ নিয়ে ‘বেঙ্গল এক্সপসিশন ১৯’ শীর্ষক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ‘প্রাচী প্রতীচী’ নামের শিল্প সংগঠন। যামিনী রায়, নন্দলাল বসু, রাম কিংকর বেইজ, গোপাল ঘোষ, পরিতোষ সেন, গণেশ পাইন, শ্যামল দত্ত রায়, শাহাবুদ্দিন এবং রফিকুন্নবীসহ একশজন প্রথিতযশা শিল্পীর শিল্পকর্ম এখানে প্রদর্শিত হয়েছে।
ইতিহাসে বংলার ঐশ্বর্যের ভাণ্ডার ঈর্ষণীয়। শিল্প-সাহিত্য, সংগীত, সমাজনীতি, অর্থনীতি, সংখ্যাতত্ত্ব সবকিছুতে বাঙালি জাতি তার বলিষ্ঠ স্বাক্ষর রেখেছে, যদিও সেই বাংলা আজ বিভক্ত; বিভক্ত হয়নি শুধু তার শিল্প, সাহিত্য ও ঐতিহ্য। সেই দুই বাংলার আকাশে আজ মৌলবাদের কালো মেঘের আনাগোনা। মৌলবাদ সভ্যতার সবচেয়ে বড় শত্রু। এই প্রদর্শনী ধর্মীয়, রাজনৈতিক, গোঁড়ামিজাত যে কোনো মৌলবাদের বিরুদ্ধে এক শৈল্পিক সোচ্চারতা। শিল্পী, সাহিত্যিক, কবি, সংগীতকার সব সৃষ্টিশীল মানুষ মৌলিক কিছু সৃষ্টির তাগিদে মগ্ন থাকে, নিরলস পরিশ্রম করে। ‘মৌলবাদ নয় মৌলিকতা’ প্রত্যেকটি মানুষের স্বতন্ত্র মৌলিকতা দিয়ে- নিয়ে বিকশিত হোক সভ্যতা।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ইউরোপের শ্রেষ্ঠ মনীষীরাও যখন ইউরোপে ফ্যাসিবাদের উত্থান নিয়ে সংশয়ী ও মিউনিখ শান্তি চুক্তিকে যখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী শতবর্ষের শান্তির দলিল বলে ইউরোপের রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছেন, সেই দ্বিধা সংকটের মুহূর্তে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অতন্দ্র নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ফ্রান্সের অন্যতম লেখক- রঁমা রলা। তিনিই প্রথম ও প্রধান লেখক-বুদ্ধিজীবী, যিনি ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনকে আন্তর্জাতিক আন্দোলন করে তুলেছিলেন ও এই সংগ্রাম প্রথমত শিল্প সাহিত্যের সংগ্রাম বলে তিনি অভিহিত করেন।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ইউরোপে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রঁমা রলার নেতৃত্বে প্যারিসে এক শিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন হয়। সেই প্রদর্শনীর নাম ছিল ‘শিল্পীর নবজন্ম’। ঐ প্রদর্শনী উপলক্ষেই রঁমা রলার একটি নতুন বই, বস্তুত ঐ প্রদর্শনীর ভূমিকাপত্র প্রকাশিত হয়। ফরাসি সরকার তখন হিটলারের অনুচরদের দ্বারা পরিচালিত। তারা ঐ প্রদর্শনী আক্রমণ করল, ছবিগুলো ধ্বংস করার চেষ্টা করল। সেই প্রদর্শনীর কথা মনে করেই প্রাচী প্রতীচীর এই উদ্যোগ। কারণ শিল্পীরা মৌলবাদের উত্থানের বিপক্ষে মানুষের কাছে শৈল্পিক বার্তা পৌঁছে দেয়।
১৯৯৯ সাল থেকে সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত ধরে ভারত-বাংলাদেশের শিল্পী-সাহিত্যিকদের নিয়ে প্রাচ্য প্রতীচীর যাত্রা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে শিল্প প্রদর্শনী, শিল্প কর্মশালা, সাহিত্য সভা, শান্তিনিকেতন সম্মাননা ও প্রকাশনার মতো অনেক কাজ জমেছে সংস্থার ঝুলিতে।
প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের শিল্পীদের পক্ষ থেকে শিল্পী দুলাল গাইনের নেতৃত্বে ৮ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সংস্থার আমন্ত্রণে ‘দেশ প্রসঙ্গ’ সাময়িকীর সম্পাদক ইমদাদুল হক সূফী বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগদান করেন এবং পরবর্তীতে প্রাচী প্রতীচীর শান্তিনিকেতনে প্রতিষ্ঠিত গ্যালারিটিও পরিদর্শন করেন। ২ জুলাই থেকে ৭ দিনের প্রদর্শনীটি কলকাতার অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস-এর ‘ওয়েস্ট ও নিউ সাউথ গ্যালারি’তে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।